ভারত
সংকটের সাতকাহন (৪)
তেরঙ্গায় নিজেকে মুড়িয়ে বিশ্বের ধনী তালিকায় ১৭ নম্বরে নেমে যাওয়া আদানি কি ভেসে উঠতে পারবেন?
বিশেষ সংবাদদাতা, কলকাতা
(২ বছর আগে) ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৪ পূর্বাহ্ন

(আদানি সাম্রাজ্য’র পতন না-কি ভারতের ওপর সুপরিকল্পিত আক্রমণ? ঢল নামছে আদানিদের একাধিপত্যে। আজ ধারাবাহিকের চতুর্থ পর্ব )
বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত ফোর্বস-এর বিশ্ব ধনী তালিকাটি দেখুন। গৌতম আদানি ১৭ নম্বর স্থানে নেমে গেছেন। এই প্রতিবেদন যখন পাঠকরা পড়বেন তখন আরও কয়েকধাপ নেমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আসলে ছয়দিনে শেয়ার বাজারে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়া একটি মানুষের অধগমণ ছাড়া আর কিই-বা ভবিত্যব্যের লেখা হতে পারে? ছয়দিনে আদানি আট লক্ষ ৭৬ হাজার ৫২৪ কোটি টাকার বিপর্যয়ের সন্মুখীন হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ এইরকম- আদানি এন্টারপ্রাইজে দু’ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৮ কোটি, আদানি টোটাল গ্যাসে দু’ লক্ষ ৩৪ হাজার ৯৩ কোটি, আদানি ট্রান্সমিশনে এক লক্ষ ৩৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা, আদানি গ্রিন এনার্জিতে এক লক্ষ ৩৮ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা, আদানি পোর্ট অ্যান্ড এসইজেড-এ ৬৪ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা, আদানি উইলমার-এ ১৯ হাজার ৭১৬ কোটি, এনডিটিভিতে ৩৯৪ কোটি টাকা, আদানি পাওয়ারে ২৮ হাজার ৮২১ কোটি টাকা, এসিসি সিমেন্টে নয় হাজার ২১৮ কোটি টাকা এবং অম্বুজা সিমেন্টে ২৪ হাজার ১০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তাও সুকৌশলে আদানিরা পুরো বিষয়টিকে ভারতের ওপর আক্রমণ বলে চালিয়ে দিতে চাইছে।
ভারতের জাতীয় পতাকা তেরঙ্গায় আদানির নিজেকে মুড়িয়ে ছবির পোজ দেয়ার ঘটনাই যার প্রমাণ। গৌতম আদানি হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর প্রথম প্রকাশ্যে আসেন বৃহস্পতিবার। তিনি বলেন, চার দশক ধরে তিনি ব্যবসা করছেন। এই সময়টার পুরোপুরি তিনি শেয়ার ক্রেতা এবং লগ্নিকারকদের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। সেই বিশ্বস্ততা অক্ষুণ্ন রাখতেই এফপিও’র ২০ হাজার কোটি টাকা তিনি শেয়ার হোল্ডারদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাদের টাকার নিশ্চয়তা দিতেই এই ব্যবস্থা।
আদানিরা কখনও জাতীয় পতাকায় নিজেদের মুড়ে ভারত এবং নিজেকে যতই সমার্থক দেখানোর চেষ্টা করুক অথবা শেয়ার হোল্ডারদের এফপিও’র টাকা ফিরিয়ে দিয়ে সাধু সাজার চেষ্টা করুক, ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা কিন্তু হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। নিউ ইয়র্কের কোম্পানিটির সেইভাবে কোনও দুর্নীতি নেই। তাই, আদানি সম্পর্কিত হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টকে কেউই উপেক্ষা করতে পারছে না। আর তাই সন্দেহ দানা বাঁধছে আদানিদের ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে। সেই সন্দেহ অব্যহত। আগামীদিন কোন পথে তা নিয়েই অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে আদানিদের কর্মীদেরও মধ্যে। ফুলের পাপড়ি বিছানো পথ না হোক, আদানিদের পার হতে হবে কি কাঁটা বিছানো পথ- সেটাই প্রশ্ন। ( চলবে )