ভারত
পাকিস্তানে হামলা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
দিল্লি অধিকার প্রয়োগ করেছে
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
(২ দিন আগে) ৭ মে ২০২৫, বুধবার, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:৩৭ অপরাহ্ন

পাকিস্তানে হামলা নিয়ে ভারত একের পর এক বিবৃতি দিয়ে হামলার কথা স্বীকার করেছে। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আঘাত হেনেছে ভারতীয় বাহিনী। বুধবার ভোরে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অধীনে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) নয়টি ‘সন্ত্রাসী’ অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। এই সব অবকাঠামোগুলো ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার ‘পরিকল্পনা ও নির্দেশ’ দেয়া হয়েছিল।
বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়। জেনেশুনে সেই দেশে লুকিয়ে রাখা হয় সন্ত্রাসবাদীদের। পেহেলগামে হামলার পর দেশের নানা প্রান্তে ক্ষোভ দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই তারপর ভারত সরকার কিছু পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু তারপরেও পেহেলগামের ঘটনার জন্য ন্যায়বিচার আবশ্যক ছিল। ওই ঘটনার পরেও পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো ঘটনার সঙ্গে যোগাযোগ অস্বীকার করছে। আমাদের কাছে খবর ছিল, ভারতের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও হামলা হতে পারে। তাই এই প্রত্যাঘাত আবশ্যক ছিল। ভারত নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করেছে জবাব দিতে। সন্ত্রাসবাদের কাঠামোকে ধ্বংস করতেই এই হামলা।জাতিসংঘ গত ২৫ এপ্রিল পেহেলগামের হামলার নিন্দা করে বলেছিল ন্যায়বিচার দরকার। ভারতের প্রত্যাঘাত তার ভিত্তিতেই।
সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ভূমিকা সিং। দুই সেনা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কীভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তারা বলেন, ৯টি ঘাঁটিকে নিশানা করে পুরো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদদ দিচ্ছে।
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্তাসী হামলার জবাব পাকিস্তানকে ভারত নিজের পছন্দের সময়ে এবং পছন্দের স্থানে দেবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল। মঙ্গলবার মধ্যরাত পেরিয়ে সেই আঘাত হানা হয়েছে বলে ভারতীয় সেনার তরফ থেকে এক্স হ্যান্ডলে ঘোষণা করা হয়েছে।
অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তানে প্রত্যাঘাতের পরেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কিছুক্ষণ আগে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করেছে। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কাঠামোগুলোতে আঘাত করা হয়েছে। যেখান থেকে ভারতে হামলার পরিকল্পনা এবং পরিচালনা করা হয়। সবমিলিয়ে ৯টি জায়গায় প্রত্যাঘাত করা হয়েছে।’
মধ্যরাতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশ করা সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে কোনও শহরের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে যে, পাকিস্তানে এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে ৯টি জায়গায় সন্ত্রাসী পরিকাঠামো লক্ষ্য করে ‘প্রিসিশন স্ট্রাইক’ করা হয়েছে। যে সব জায়গায় বসে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হানার পরিকল্পনা হয়েছিল এবং নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সেখানেই ভারত আঘাত হেনেছে বলে মন্ত্রক বিবৃতিতে দাবি করেছে।
ওই বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘আমাদের পদক্ষেপ সুনির্দিষ্ট, পরিমিত এবং অপ্ররোচনামূলক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনও পরিকাঠামোয় আঘাত হানা হয়নি। লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং আঘাত হানার প্রশ্নে ভারত উল্লেখযোগ্য সংযম দেখিয়েছে।’ ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার পরে এক্স হ্যান্ডলে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ লিখেছেন, ‘ভারত মাতা কী জয়!’
পাকিস্তানে ভারতের হামলার পরেই ভারতের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোভাল আমেরিকার উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন। কী পরিস্থিতিতে এই হামলা চালানো হয়েছে সে সম্পর্কে দোভাল বিস্তারিত রুবিওকে জানিয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে বলা হয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন নয়াদিল্লিতে রাত জেগেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঘটনাবলীর উপর কড়া নজর রাখছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন দোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান এবং গোয়েন্দা দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত সেনাবাহিনী, নৌসেনা ও বায়ুসেনার শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় কথোপকথন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সায় দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই নামেই পেহেলগামে ঘটনার যোগ্য জবাব দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পেহেলগামে পর্যটকদের উপর যেভাবে হামলা হয়েছিল, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে তার ইঙ্গিত রয়েছে। হিন্দু নারীরা সাধারণত কপালে সিঁদুর পরে বিবাহের চিহ্ন বহন করেন। অভিযোগ, পেহেলগামে হামলাকারীরা সেই চিহ্ন মুছে দিয়েছে। নিহতদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন, যাদের সদ্য বিয়ে হয়েছিল। তারা মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর সদ্যবিধবা নারীদের করুণ ছবি সমাজমাধ্যমে ছেয়ে গিয়েছিল। বিশেষভাবে ভাইরাল হয়েছিল হরিয়ানার নৌসেনা কর্মকর্তা বিনয় নওয়ালের স্ত্রী হিমাংশী নরওয়ালের ছবি। উপত্যকার মাঝে স্বামীর নিথর দেহ নিয়ে তাকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ঘটনার ৬ দিন আগেই বিয়ে হয়েছিল তাদের। ওই ছবিটিই ভারতের প্রত্যাঘাতের প্রতীকী ছবি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
সেনা কর্মকর্তা ভূমিকা সিং ও সোফিয়া কুরেশি সাংবাদিকদের জানান, অপারেশন সিঁদুর’-এ পাক সেনাঘাঁটি বা সাধারণ কোনও নাগরিককে নিশানা করা হয়নি। তারা বলেন, এখনও কোনও সাধারণ নাগরিকের ক্ষতি করা হয়নি। নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বিল্ডিংয়ে হামলা হয়েছে। সেনাঘাঁটিতে কোনও হামলা হয়নি। প্রযুক্তির সাহায্যে ওই ভবনগুলি ভাঙা হয়েছে। কোথায় কোথায় হামলা চালানো হয়েছে সে সম্পর্কে তারা জানান, পাকিস্তানের ভিতরে শিয়ালকোটের সার্জাল ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমা থেকে তা ছ’কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া হামলা হয়েছে মেহমুনা জোয়া ক্যাম্পে। সেখানে হিজ়বুলের ক্যাম্প ছিল। পঠানকোটে এখান থেকেই হামলা চালানো হয়। মুরিদকের মারকাজ় তৈবায় হামলা চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। ২৬/১১ মুম্বই হামলার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এখান থেকেই। আজ়মল কসাবও উঠে আসেন এখান থেকেই। তারা আরও জানান, প্রথম নিশানা ছিল সোবহান-আল্লাহ মসজিদ, সেখানে লশকর-এ-ত্যায়বার ঘাঁটি এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। বিলাল মসজিদে ছিল জইশ-ই-মুহএম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র। কোটলিতে যে মসজিদে হামলা হয়েছে, তা লশকরের ঘাঁটি। এই ঘাঁটি পুঞ্চে সক্রিয়। এগুলি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে রয়েছে।
পাঠকের মতামত
ভারতকে আশে পাসের দেশগুলি মিলে একটা শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে।
অপারেশন ইন্দুর
পাগলের সুখ মনে মনে।
অপারেশন সিঁদুর নাম দেখেই বুঝা যায় বিষয়টা কাদের কারসাজি। মোদি এখন বিভ্রান্ত এক নেতা যার কোন দর্শন নাই। বাংলাদেশে আধিপত্য হারিয়েছে। বিশ্বের দরবারে মাথা হেঁট হবে নিশ্চিত। অপেক্ষা করতে হবে কিছু দিন।