বিশ্বজমিন
ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি উড়িয়ে দিলেন এস জয়শঙ্কর
মানবজমিন ডেস্ক
(৫ ঘন্টা আগে) ২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২:০৯ অপরাহ্ন

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক যুদ্ধপরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি আবারও স্পষ্ট করেছেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে। কোনো আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার কারণে নয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হস্তক্ষেপ এতে ছিল না। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সম্প্রচার সংস্থা এনওএস’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে সন্ত্রাসবাদ ব্যবহারের বিরুদ্ধে ভারতের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ রয়েছে এবং ভারত এই ধরনের হুমকির জবাবে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার অধিকার রাখে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত অপারেশন সিঁদুর চালায়।
পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে থাকা নয়টি ‘সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে নিহত হন কমপক্ষে ১০০ মানুষ। ওই অভিযান নিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, অপারেশন সিঁদুর চলমান রয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তা হলো ২২শে এপ্রিলের মতো ঘটনা ঘটলে জবাব দেয়া হবেই। আমরা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করবো। তারা যদি পাকিস্তানে থাকে, সেখানেই তাদের আঘাত করা হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, এই চলমান অপারেশন মানেই সরাসরি যুদ্ধ নয়। অপারেশন সক্রিয় থাকা মানে দু’পক্ষ যুদ্ধ করছে এমন নয়। বর্তমানে একটি যুদ্ধবিরতি ও সামরিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। সুতরাং এটি এখন নিষ্ক্রিয় পর্যায়ে রয়েছে। জয়শঙ্কর জানান, ১০ই মে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হটলাইন মারফত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় এবং ভারত তাতে সম্মত হয়। তিনি বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রথমে জানায় তারা গোলাগুলি বন্ধ করতে প্রস্তুত এবং আমরা সাড়া দিই।
অন্যান্য দেশ- যেমন যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল এবং উভয়পক্ষকে ফোন করেছিল, তবে যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণভাবে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যকার বিষয় বলেই জয়শঙ্কর দৃঢ়তার সঙ্গে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ছিল যুক্তরাষ্ট্রেই। এটা দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ওয়াশিংটনের কোনো সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। তিনি নিশ্চিত করেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাকে ফোন করেছিলেন। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু এই ফোনকল ছিল শুধুই উদ্বেগ জানাতে। জয়শঙ্কর বলেন, আমরা সবার কাছে, শুধু আমেরিকার নয়, সবাইকে স্পষ্ট করে বলেছি- পাকিস্তান যদি যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়, তাহলে তারা আমাদের জানাক। আমরা এটা তাদের সেনাপতির মুখে শুনতে চাই। আর সেটাই ঘটেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সেই বহুল আলোচিত দাবি- তিনি এই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছেন এবং ‘হাজার বছরের পুরোনো দ্বন্দ্ব’ সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন, এটা একেবারে উড়িয়ে দেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, এটি আমাদের ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিষয়। আমরা একে দ্বিপাক্ষিকভাবে মীমাংসা করব। ১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ব্যবহার করে এবং নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এ নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না। কোন দেশ তার নিজের ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা করে না। কাশ্মীরের যে অংশ পাকিস্তান ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে, আমরা আলোচনা করবো কখন তারা সেই অঞ্চল ছেড়ে দেবে। তিনি আরও স্পষ্ট করে দেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা বা জম্মু ও কাশ্মীরের প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা অসম্ভব। এটি বিষয়ে গুরুতর আলোচনা হতে হবে শুধু ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে।