বিশ্বজমিন
ট্রাম্পের সাজানো আক্রমণের মুখেও শান্ত থাকলেন রামাফোসা
মানবজমিন ডেস্ক
(৬ ঘন্টা আগে) ২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৬ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তিন মাস পার হতেই, বিদেশি নেতারা বুঝে গেছেন- ওভাল অফিসে আমন্ত্রণ পাওয়া যতই সম্মানের হোক না কেন, তা এখন এক প্রকাশ্য ধমক ও অপমানের ঝুঁকিও বয়ে আনে। তা প্রায়ই উস্কানিমূলক আচরণে পরিণত হয়। বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে ঘটনার ধরন ছিল ট্রাম্পীয় কৌশলের আদর্শ উদাহরণ। এর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছিল হঠাৎ আলো নিভিয়ে, দীর্ঘ ভিডিও দেখিয়ে এবং খবরের কাটিংয়ের স্তূপ দিয়ে একপ্রকার ‘অ্যাম্বুশ’। ট্রাম্পের সঙ্গে সিরিল রামাফোসার সাক্ষাৎ নিয়ে অনলাইন বিবিসিতে এমনটাই লিখেছেন বিবিসির সাংবাদিক গ্যারি ও’ডনোঘ। তিনি আরও লিখেছেন, টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে কিছুটা সংযত আলোচনা চলাকালীন এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন- দক্ষিণ আফ্রিকায় তথাকথিত ‘শ্বেত গণহত্যা’ সম্পর্কে ভুল ধারণা ভাঙানোর জন্য তিনি কী দেখতে চান। প্রথমে উত্তর দেন রামাফোসা। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে দক্ষিণ আফ্রিকানদের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে। এরপর ট্রাম্প নির্দেশ দেন সহকারীকে- ‘আলো নিভিয়ে টিভি চালাও’, যাতে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকান প্রেসিডেন্টকে ‘কয়েকটা জিনিস’ দেখাতে পারেন। এ সময় ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ধনকুবের ইলন মাস্ক একটি সোফার পেছনে চুপচাপ বসে দেখছিলেন।
এরপর যা ঘটল তা ছিল এক সুপরিকল্পিত ও নাটকীয় অভিযোগের ধারা। সেখানে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেত নাগরিকদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ আনেন। এটি ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তির মতো। বড় স্ক্রিনে চালানো ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু রাজনৈতিক নেতার ‘শুট দ্য বুর’ (গুলি চালাও শ্বেতদের দিকে) গান, যা মূলত বর্ণবাদ বিরোধী এক গান। সংবাদমাধ্যম নিয়ে প্রায়ই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প এবার নিজেই নানা সন্দেহজনক উৎসের ছবি ও প্রতিবেদন প্রদর্শন করেন। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কথিত শ্বেত কৃষকদের কবরে থাকা জায়গাগুলি কোথায়? তিনি শুধু বলেন, সাউথ আফ্রিকা।
ভিডিওতে থাকা রাজনৈতিক নেতারা সরকারের অংশ নন, তবুও ট্রাম্প মনে করলেন যে তারাই জমি দখলের ক্ষমতা রাখেন। বাস্তবে তা নয়। রামাফোসা সত্যিই এক বিতর্কিত বিল অনুমোদন করেছিলেন, যা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমি অধিগ্রহণের সুযোগ দেয়। কিন্তু সেই আইন এখনো কার্যকর হয়নি। তিনি ভিডিওতে থাকা নেতাদের ভাষার সাথেও নিজেকে স্পষ্টভাবে দূরে রেখেছেন। নেলসন ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ঠ মিত্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা এই নেতা অবশ্য প্রস্তুত হয়েই এসেছিলেন। ট্রাম্প বিদেশি নেতাদের তোষামোদি প্রয়াস অনেক সময় ধরতে পারেন না। আর এটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কৌশলের বড় অংশ। ট্রাম্প গলফপ্রেমী, এটা সত্য। কিন্তু রামাফোসা যখন কূটনৈতিক আলোচনা ও বাণিজ্যনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য দুই শীর্ষস্থানীয় গলফার- আর্নি এলস ও রেটিফ গুসেনকে সঙ্গে আনেন, তা কোনো আন্তর্জাতিক কূটনীতির কৌশল নয়। তবে ট্রাম্প যে এই দুই শ্বেত দক্ষিণ আফ্রিকান গলফারকে পেয়ে খুশি হয়েছেন, তা প্রকাশ্যেই বোঝা যাচ্ছিল।
তাদের বক্তব্য, বিশেষ করে শ্বেত কৃষকদের অবস্থা নিয়ে তাদের মতামত, প্রেসিডেন্ট রামাফোসার বক্তব্যের সমান সময় পায়। রামাফোসা নিজে সংযত ও সংক্ষিপ্ত মন্তব্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। তবে এটা সম্ভবত তার পরিকল্পনারই অংশ। ওই গলফাররা এবং তার কৃষিমন্ত্রী- যিনি নিজে বিরোধী দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ঐক্য সরকারে অংশ নিচ্ছেন, তারা সবাই ছিলেন যেন এক ধরনের কূটনৈতিক ‘গোল্ডেন ডোম’, এবং তা বেশ কাজেও দিয়েছে।
ট্রাম্প বারবার কৃষকদের দুর্দশার প্রসঙ্গে ফিরে গেছেন, যাদের মধ্যে কয়েক ডজনকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রামাফোসা তাতে পা দেননি, উস্কানিগুলোর বেশিরভাগই বাতাসে মিলিয়ে যায়। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, যদি আফ্রিকান কৃষকদের গণহত্যা চলত, তাহলে এই তিনজন ভদ্রলোক (গলফার ও এক ধনকুবের) আজ এখানে থাকতেন না। ট্রাম্প যদিও রামাফোসার কাছ থেকে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া বের করতে পারেননি, তবে তার এই ঘণ্টাখানেকের প্রচেষ্টা ব্যর্থ বলা যায় না। কারণ এই নাটকীয় কূটনীতি শুধু অতিথি দেশের নেতাদের জন্য নয়- মার্কিন জনসাধারণের জন্যও। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হলো মার্কিনদের মনে বিদ্যমান ক্ষোভ ও অভিমানকে জিইয়ে রাখা। ট্রাম্প জানেন তার সমর্থকরা কী শুনতে চায়। বিদেশি নেতারা যদি এসব মুহূর্ত দক্ষতার সাথে সামলাতে শিখে ফেলেন, তবে ট্রাম্পকেও তার পুরনো কৌশল একটু আপডেট করতে হতে পারে।