খেলা
‘অভিজ্ঞতা’ টিকিয়ে দিলো শান্তকে!
স্পোর্টস রিপোর্টার
৫ মে ২০২৫, সোমবার
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার পারফরম্যান্স কখনোই সন্তোষজনক ছিল না। বরং ধীরে ধীরে ব্যাটিংয়ের জন্য বরাবরই সমালোচিত হয়েছেন। বাধ্য হয়ে এই সংস্করণ থেকে অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন। টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা হারানোই ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। বিসিবি’র বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রও জানিয়েছিল শান্ত বাদ পড়তে যাচ্ছেন! তবে গতকাল ঘোষিত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরের দলে ঠিক রয়েছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। কেন শান্ত এখনো দলে এই প্রশ্নে অভিজ্ঞতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন বিসিবি’র প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
মূলত পাকিস্তানে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাওয়ার পথে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দু’টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। গতকাল এই ৭ ম্যাচের জন্য ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করে বিসিবি। যেখানে আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত লিটন কুমার দাসকে স্থায়ী অধিনায়ক ও এই ৭ ম্যাচের জন্য শেখ মেহেদীকে সহ-অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করেন ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পর এবারই প্রথম টি-টোয়েন্টি সংস্করণে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। ওই সিরিজের যারা দলের ছিলেন, তাদের মধ্যে এবার নেই আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ ও রিপন মণ্ডল। তাদের জায়গা নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, তানভীর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ও শরীফুল ইসলাম। তাসকিন নেই চোটের কারণে আর বাকিরা বাদ পড়েছেন পারফরম্যান্সের কারণে। আর টি- টোয়েন্টি দলে প্রথমবার সুযোগ পেয়েছেন ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা। দলে আহামরি কোনো চমক না থাকলেও শান্ত’র দলে টিকে যাওয়া নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কারণ এই সংস্করণে তার পারফরম্যান্স ভীষণ বিবর্ণ। গেল বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে ৫ ইনিংসে ৫৬ রান করার পর আর সুযোগই পাননি দলে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪৯ ম্যাচ খেলে তার মোট রান ২২.৮৫ গড়ে ৯৬০, স্ট্রাইক রেট মোটে ১০৮.৩৫। অথচ তিনি ব্যাটিং করেন টপ অর্ডারে, যেখানে মূল কাজই দলকে ঝড়ো শুরু এনে দেয়া। সবমিলিয়ে প্রশ্ন আছে তার টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য নিয়েও। গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাজে ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচিত হয়েছেন শান্ত। ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪০ ও ৪১ রান করলেও সেটা কোনো ইমপ্যাক্ট ফেলেনি। বাকি ইনিংসগুলোতে দলকে বিপদে ফেলে ফিরেছেন আগেভাগে! ফলে অধিনায়কেরই দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছিল। টানা সমালোচনার মধ্যে নিজেই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার কথা জানান। এতে করে আপাতত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও তার অধ্যায় থেমে যাবে বলেই ধারণা ছিল সবার। কারণ পাইপলাইনে নাঈম শেখ, তানজীদ হাসান তামিম, সাইফ হাসানরা দরজায় কড়া নাড়ছেন! তারপরও দলে থেকে গেছেন শান্ত। এত বাজে পরিসংখ্যানের পরও তাকে দলে রাখার কারণ হিসেবে অভিজ্ঞতার কথা জানালেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তিনি বলেন, ‘শান্ত আমাদের সাবেক অধিনায়ক ছিলেন। আপনি দলটার দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনার অভিজ্ঞতাও দরকার। ওপরে আমাদের সৌম্য আছেন। ৯০-এর কাছাকাছি ম্যাচ খেলেছেন। লিটন দাস আছেন। এরপর আপনি তাকান, তাহলে দেখবেন যে বিস্তর ফারাক হয়েছে। শান্ত’র ৫০ হয়নি। ৪০-এর (আসলে ৪৯) আশেপাশে ম্যাচ। তাই কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দলের সঙ্গে আপনার নিতে হবে।’ অথচ এই অভিজ্ঞতা বিবেচনা করলে আরও অনেক ক্রিকেটারই আছেন জাতীয় দলের রাডারে। নাঈম শেখ যিনি কিনা এনসিএল টি-টোয়েন্টির পর বিপিএলেও শীর্ষ রান সংগ্রাহক।
গেল ডিপিএলেও ব্যাটিং করেছেন ১২০ স্ট্রাইক রেটে। তবে তাকে আগে ‘এ’ দলে খেলিয়ে জাতীয় দলে ফেরাতে চান লিপু। ফলে এখানে শান্ত’র অভিজ্ঞতাকেই বাড়তি প্রায়োরিটি দিয়েছেন তিনি। মিরাজ বাদ পড়েছেন শেখ মেহেদীর সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে। প্রধান নির্বাচক এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘মিরাজ আমাদের জাতীয় দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। বিশেষ করে টেস্ট ও ওয়ানডেতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে সেটার প্রতিফলন হয়েছে। শুধু জাতীয় দলে না। এরই মধ্যে বিশ্বকাপে আপনারা দেখবেন যে একটু পিছিয়ে রেখেছিলাম মিরাজকে। একজন ক্রিকেটার যদি চোটে পড়ে যান, তিন সংস্করণের জন্যই তিনি পিছিয়ে পড়েন। এখানে যে পাঁচ বোলার থাকবে, সবাইকে চার ওভার করে বোলিং করতে হবে। সেক্ষেত্রে শেখ মেহেদী কিছুটা এগিয়ে আছেন।’ আগামী ১৭ ও ১৯শে মে শারজাহতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তানে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শুরু ২৫শে মে।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দল
লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), শেখ মেহেদী হাসান, তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন ইমন, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, জাকের আলি অনিক, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, তানজিম হাসান সাকিব, নাহিদ রানা ও শরীফুল ইসলাম।