খেলা
অধিনায়ক লিটনের চ্যালেঞ্জ ‘পারফরম্যান্স’
স্পোর্টস রিপোর্টার
৫ মে ২০২৫, সোমবার
লম্বা সময় বিবেচনায় বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক করা হয়েছে লিটন কুমার দাসকে। তার ডেপুটি অফস্পিন অল রাউন্ডার শেখ মেহেদী হাসান। দু’জনের ওপর এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভারতে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। লিটন সবশেষ দলকে ভারপ্রাপ্ত দলনেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে এবার তিনি ভারমুক্ত হয়ে দলকে এগিয়ে নিতে পারবেন! প্রশ্নটা আসছে তার এই ফরম্যাটে ৯৫ ম্যাচের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। এক কথায় অধিনায়কের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ নিজের ব্যাটিং ‘পারফরম্যান্স’। এই উইকেট কিপার ব্যাটার নিজের ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। ৯৩ ইনিংসে ২০২০ রান করেছেন ২২.৪৪ গড়ে। ১১ ফিফটি হাঁকিয়েছেন নেই কোনো সেঞ্চুরি। স্ট্রাইক রেটটাও ১২৪ এর আশেপাশে। আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই পারফরম্যান্স অধিনায়ক হিসেবে লিটনকে চাপেই রাখবে। অন্যদিকে, তার ডেপুটি শেখ মেহেদীর সামনেও একই চ্যালেঞ্জ। ব্যাট হাতে ৫৪ ম্যাচে ৩৬০ রান করেন মেহেদী। তবে বল হাতেই তার মূল কাজ, সেখানে বিগত দিনে নতুন বলে বাংলাদেশকে শুরুতেই ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন নিয়মিত। সবমিলিয়ে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম এই সংস্করণে খুলনার এই অফ স্পিনারের শিকার ৪৬ উইকেট। ১৩ রানে ৪ উইকেট সেরা বোলিং ফিগার। দু’জনের অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নিয়েই তাদের ওপর আস্থা রেখেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান নাজমুল আবেদিন ফাহিম। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ মেয়াদের কথা চিন্তা করে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত লিটন দাসকে অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করেছি। তার ডেপুটি হিসেবে থাকবেন শেখ মেহেদী।’ গতকাল আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সিরিজকে সামনে রেখে ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করে বিসিবি। তার আগে ঘোষণা করা হয় অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের নাম। অধিনায়ক লিটনকে নিয়ে সবচেয়ে বড় শঙ্কা তার ধারাবাহিকতাহীন ব্যাটিং। এ নিয়ে নাজমুল আবেদিন ফাহিদও বেশ চিন্তিত। তবে আস্থা হারাতে চান না। তিনি বলেন, ‘লিটনের যে ব্যাপারটি হলো আমরা সবাই জানি যে খেলাটা সে কতো ভালো বোঝে। যারা টেকনিক্যালি খুব সাউন্ড করে তারাও লিটনের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশংসা করে। কিন্তু ও যদি নিজের খেলাটা গুছিয়ে নিতে পারে, ওর পারফরম্যান্সটা ঠিক করে নিতে পারে- তাহলে দলের জন্য সে খুব বড় দায়িত্ব পালন করতে পারবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে তিনি খেলবেন কোন পজিশনে! ক্যারিয়ারের শুরুতে ৭ বা ৮ এ খেললেও এই ফরম্যাটে লিটন সবশেষ ম্যাচে ওপেনার ওপেনও করেছেন। বেশির ভাগ তিনি ৩ নম্বরেই খেলবেন। এ নিয়ে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, ‘লিটনকে তিন নম্বরে ব্যাট করানো হবে। সেখানে ব্যাট করলেও দলের প্রতি যে অবদান রাখতে হয়, লিটনকে সেভাবে গড়ে তোলার বিষয় টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর থাকবে। লিটন যে নেতৃত্বের পাশাপাশি সফল ব্যাটার হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সেই দিকটা টিম ম্যানেজমেন্টের নজরে থাকবে। অন্যদিকে, অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী কি বিবেচনায় সহ-অধিনায়ক তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন নাজমুল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘শেখ মেহেদী কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অটোমেটিক চয়েজ। তার যে অভিজ্ঞতা আছে, তার যে এই ফরম্যাটটা সম্পর্কে জ্ঞান আছে- তা আমাদের চোখে পড়েছে। যদি তাকে আমরা এই সুযোগটা দেই তাহলে সে যোগ্যাতা প্রমাণ করতে পারবে। আসলে আমাদের একজন অধিনায়কের আড়ালে একজনকে তৈরি করার চেষ্টা।’ বাজে ফর্ম ও চোটের কারণে বেশ কিছুদিন থেকেই দলের বাইরে। তবে জাতীয় দলের জার্সিতে ফেরার আগেই পেয়েছেন নতুন দায়িত্ব। এর আগেও চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বে গত বছর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয় লাভ করে টাইগাররা। তবে বাজে ফর্মের কারণে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা পাননি লিটন। চলতি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ দিয়ে ফের নেতৃত্বের যাত্রা শুরু করবেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের একটি সিরিজে নেতৃত্ব দেবেন।
সবশেষ লিটন দাসের ব্যাট থেকে ফিফটি এসেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলেছিলেন ৫৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। এরপর ৫ ইনিংসে কোনো ফিফটির দেখা পাননি। ২০১৫-তে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পর প্রথম ফিফটি পেতে প্রায় ৩ বছর ও ১৪ ইনিংস অপেক্ষা করতে হয়েছে। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে ধারাবাহিকতা নিয়েই। এবার নেতৃত্ব পাওয়ার পর একই প্রশ্নের মুখে তিনি। বরঞ্চ দলকে নেতৃত্বে দেয়ার চেয়ে তার সামানে চ্যালেঞ্জ হবে পারফরম্যান্সটাই!