শেষের পাতা
ভোলার গ্যাস পরিবহন বন্ধ
কারখানার উৎপাদন ব্যাহত, ব্যয় বাড়ছে
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
ভোলা থেকে গ্যাস পরিবহন বন্ধ থাকায় ১৩টি কারখানায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। স্থানীয়দের বাধার কারণে গ্যাস পরিবহন হচ্ছে না ১০ দিন ধরে। গ্যাসের অভাবে ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন কারখানায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। অনেক কারখানায় বিকল্প জ্বালানি দিয়ে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে ব্যয় বাড়ছে। ভোলার গ্যাসক্ষেত্রের সঙ্গে সরাসরি কোনো পাইপলাইন না থাকায় সরকারের সঙ্গে চুক্তির আওতায় সেখানকার গ্যাসক্ষেত্র থেকে নৌ ও সড়কপথে বিশেষ পরিবহনের মাধ্যমে এই গ্যাস বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন। এদিকে ভোলার গ্যাস অন্যত্র নেয়া বন্ধ করে ভোলায় গ্যাসভিত্তিক কলকারখানা স্থাপন, ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ দেয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। দাবি আদায়ে গত ১৮ ও ১৯শে এপ্রিল ইন্ট্রাকোর গ্যাস বহনকারী কয়েকটি গাড়ি আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। এরপরে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ইন্ট্রাকো কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। আটক গাড়ি ছেড়ে দিলেও স্থানীয়দের বাধার কারণে এরপর আর গ্যাস সরবরাহ করতে পারেনি তারা। নারায়ণগঞ্জের ফকির ফ্যাশনের হেড অব সাপ্লাই চেইন মো. গোলাম মোস্তাফা জানান, ইন্ট্রাকো থেকে তাদের কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ১৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা হতো। কিন্তুগ্যাস বন্ধ থাকায় দিনে প্রায় ১০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকক্ষেত্রে বিমানে চড়া মাশুল দিয়ে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে ক্রেতার কাছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকার সাভারের আল মুসলিম গ্রুপে গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করে ইন্ট্রাকো। কিন্তু এই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে গেছে বলে জানান আল মুসলিম গ্রুপের এক কর্মকর্তা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রমতে, ভোলার গ্যাস নিয়ে সেখানকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ঢাকায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার সঙ্গে একটা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে; সেখানে একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। ইন্ট্রাকো’র মহাব্যবস্থাপক কমান্ডার আবু সাঈদ বিএন (অব.) জানান, গ্যাস সংকটে ভুগতে থাকা বিভিন্ন কারখানায় প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার কারণে গত ১৮ই এপ্রিল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কারখানার মালিকরা গ্যাস চাচ্ছেন জরুরিভিত্তিতে কিন্তু তারা গ্যাস দিতে পারছেন না। ভোলায় বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে। স্থানীয়ভাবে ৭০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে এসব ক্ষেত্রের দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অব্যবহৃত থাকে। জাতীয় সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে সংযোগ না থাকায় ভোলার অব্যবহৃত গ্যাস কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা অন্তত চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে আমদানিকৃত উচ্চমূল্যের এলএনজিসহ গড়ে সর্বোচ্চ ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দিতে পারছে। ফলে বহু বছর ধরে গ্যাসের চাহিদা পূরণে ভোলা থেকে গ্যাস এনে শিল্পের চাহিদা পূরণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। এক পর্যায়ে ঢাকা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহের জন্য ২০২৩ সালের ২১শে মে রাষ্ট্রায়ত্ত সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (এসজিসিএল) সঙ্গে চুক্তি করে ইন্ট্রাকো। চুক্তি অনুযায়ী ভোলা থেকে সিএনজি আকারে প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহনের দায়িত্ব পাওয়া ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরিবহনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।