খেলা
জুনেই লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক কিউবার!
স্পোর্টস রিপোর্টার
২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে ভারতের বিপক্ষে হামজা চৌধুরীর অভিষেকের পর থেকেই বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের দিকে বাড়তি নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। হামজাকে নিয়ে এদেশের ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা থেকে ‘প্রবাসী’দের অনেকেই এখন গায়ে তুলতে চাইছেন বাংলাদেশের জার্সি। তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে লাল-সবুজ জার্সিতে সামিত সোমকে খেলাতে আটঘাট বেঁধে নেমেছে বাফুফে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার এই মিডফিল্ডারের জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা সান্ডারল্যান্ডের কিউবা মিচেলও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ নিয়ে। এরইমধ্যে তাকে খেলানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
২৭ বছর বয়সী সামিত সোম বর্তমানে খেলছেন কানাডার পেশাদার লীগের দল কাভারলি ফুটবল ক্লাবে। তার বাবা মানস সোম ও মা নন্দিতা সোম ৯০ এর দশকে পাড়ি জমান কানাডায়; তাদের গ্রামের বাড়ি শ্রীমঙ্গলে। গত বছর থেকে এই মিডফিল্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বাফুফে। তার বাংলাদেশের হয়ে খেলানোর প্রক্রিয়া জোরেশোরে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাফুফের সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম। এরইমধ্যে জন্মনিবন্ধন সনদ হাতে পেয়েছেন সামিত। এবার পাসপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় তিনি। তবে পাসপোর্ট হাতে পেলেই খেলতে পারবেন না সামিত। লাগবে ফিফার ছাড়পত্র। এ বিষয়ে ফাহাদ করিম বলেন, ‘সামিতের কাছে আরও একটি বিষয় চেয়েছি, সেটা হচ্ছে, সে যে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চায়, তার একটা লিখিত যেন আমাদেরকে দেয়। তাহলে সেই চিঠিটা নিয়ে আমরা যেন ফিফার সাথেও কাজ শুরু করতে পারি। এখানে প্রক্রিয়াগত যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো আমরা যত দ্রুত সম্ভব সারবো, এখানে চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না আমাদের। বাকিটা নির্ভর করবে ফিফা ও অন্যান্য সংস্থা থেকে সাড়া পাওয়ার ওপর।’ এরইমাঝে জানা গেছে হামজা চৌধুরীর মতোই বাংলাদেশের জার্সিটা গায়ে জড়াতে চান সান্ডারল্যান্ডের তরুণ মিডফিল্ডার কিউবা মিচেল। ইংল্যান্ডের অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাব সান্ডারল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলে খেলছেন কিউবা মিচেল। তার বাবা জ্যামাইকান হলেও মা বাংলাদেশি। সেই সূত্রে বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগ রয়েছে তার। বর্তমানে খেলছেন প্রিমিয়ার লীগ-২ এ। এই লীগটি মূলত বয়সভিত্তিক দলগুলোর মাধ্যমে গড়া। চলতি মৌসুমে কিউবা এখন পর্যন্ত স্কোয়াডে ছিলেন ৯ ম্যাচে। শুরুর একাদশে ছিলেন ৩ ম্যাচে আর বদলি হিসেবে নেমেছেন ৪ ম্যাচ। কিউবা স্বভাবজাত সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। তবে কিউবার মূল জাদু আক্রমণ তৈরিতে। চলতি বছর প্রিমিয়ার লীগ-টু’তে যতবারই মাঠে নেমেছেন, খেলেছেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। গেম বিল্ডআপে বাংলাদেশের অস্ত্র হতে পারেন এই ফুটবলার। এই ফরোয়ার্ডকে শনিবার জাতীয় দলে খেলতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছিল বাফুফে। তার এজেন্ট রোববার বিকালে ফিরতি চিঠিতে কিউবা মিচেলের খেলার ইচ্ছের কথা জানিয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাফুফে সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম বলেন, ‘ওর এজেন্ট ফিরতি মেইলে পরবর্তী প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। যেহেতু ও ইংল্যান্ডের হয়ে কোনো পর্যায়ে খেলেনি, তাই বাংলাদেশি পাসপোর্ট করাতে পারলে দ্রুতই ওকে জাতীয় দলে খেলানো যাবে। আমরা জুনে ঢাকায় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে ওকে খেলানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে শেষ করতে পারলে ও কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।
তাছাড়া ফরোয়ার্ড লাইনে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। সে যেহেতু ১০ নম্বর পজিশনে খেলে, আমার মনে হয় তার সংযুক্তিতে জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড লাইনের শক্তি বাড়বে।’ রোববার বিকালে বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের কাছে ফিরতি মেইলে মিচেলের এজেন্ট বেন মার্কেল লিখেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি যে কিউবা এই বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যেতে আগ্রহী এবং জুনের খেলায় অংশ নিতে চায়। তাই তার খেলার ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করলে সে কী রকম আর্থিক সুবিধা পাবে, সেটা জানানোর অনুরোধ করছি।’ জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করা ফুটবলারদের সেভাবে সম্মানী দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি বাংলাদেশে। নামকাওয়াস্তে একটা অঙ্ক দেওয়া হয় ফুটবলারদের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলা হামজা চৌধুরীকেও সেভাবে বাড়তি কোনো আর্থিক সুবিধা দেয়নি বাফুফে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের হয়ে খেললে আর্থিক সুবিধা কিউবা মিচেলও সেভাবে পাবেন না। তবে আসা-যাওয়ার বিমান টিকিট, পাঁচ তারকা মানের হোটেলে থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যা অন্য সব ফুটবলার পেয়ে থাকেন, সেটা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বাফুফের পক্ষ থেকে।