খেলা
সিলেট টেস্টের ভাগ্য শান্তদের ব্যাটে
ইশতিয়াক পারভেজ, সিলেট থেকে
২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার
মাঠে দর্শক নেই! ১৮ হাজার ধারণক্ষমতার গ্যালারিতে খু্বঁঁজে ৫০ জন দর্শক পাওয়া যাবে না। বাঘের পোশাকে আসা ভক্ত লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর উৎসাহ পাচ্ছেন না। তাই লোহার রেলিংয়ে পতাকা বেঁধে বসে রইলেন। কেন দর্শক মুখ ফিরিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একে তো টেস্ট ক্রিকেট তার ওপর টাইগারদের পারফরম্যান্স ভীষণ হতাশার। প্রথম দিন বিনা উইকেটে ৬৭ রান স্কোর বোর্ডে যোগ করে মাঠ ছেড়েছিল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ১৯১ রানের জবাবে তারা পিছিয়ে ছিল ১২৪ রানে। তাই দ্বিতীয় ইনিংসে তারা বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই শুরু করে। তবে লড়াইটা জমিয়ে তোলেন টাইগার বোলাররা। কাল সকালে স্কোর বোর্ডে ২ রান যোগ করতেই সফরকারীদের প্রথম উইকেট তুলে নেন পেসার নাহিদ রানা। বাকি দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদও করেন দারুণ বোলিং। পাল্লা দিয়ে স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ নেন পাঁচ উইকেট। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে ২৭৩ অল আউট হয়। তবে ততক্ষণে লিড নেয় ৮২ রানের। এখান থেকে ফের ভয় আর শঙ্কার শুরু। লিড টপকে কত রানের লক্ষ্য দিতে পারবে নাজমুল হোসেন শান্ত’র দল! কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে যে মাত্র ৪ রান করে বিদায় নেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। যদিও শেষ বিকালটায় আর কোনো বিপদ হতে দেননি মুমিনুল হক সৌরভ ও মাহমুদুল হাসান জয়। দলের বিশ্বাস ব্যাটাররা দায়িত্ব নিবেন। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস দলে যে ব্যাটাররা আছেন তারা দায়িত্ব নিয়ে খেলবেন।’
সাম্প্রতিক ক্রিকেটে দলের ব্যাটিংয়ের যে বেহাল দশা তাতে ভরসা রাখা বেশ কঠিন। বাস্তবতা মিরাজও জানেন। তবে সতীর্থদের ওপর আস্থার কথাই শুনিয়েছেন তিনি। এর কারণও আছে, কিছু দিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম ইনিংসের পর দারুণ ভাবে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। তারা জয়ও তুলে নেয় সেই ম্যাচে। মিরাজ বলেন, ‘দেখেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমরা শেষ ম্যাচটাতে ১৬৪ রানে আল আউট হয়েছিলাম। কিন্তু পরে ওদের ১৪৬ রানে অল আউট করি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটাররা ২৬৮ রান করে। বড় লক্ষ্য দিয়ে আমরা কিন্ত সেই ম্যাচ জিতে নিয়েছি। তার মানে আমাদের ব্যাটারদের সামর্থ্য আছে। আমরা তাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই। তারা দায়িত্ব্ নিয়ে খেলবে। ব্যাটারদের সক্ষমতা আছে বড় স্কোর দেয়ার। দুই একটা বড় জুটি হলেই তা সম্ভব।’ সিলেটে লিডটা আরো বড় হতে পারত জিম্বাবুয়ের। তা হতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রতিপক্ষের ইনিংসের শেষটা তিনিই টানেন এক এক করে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে। টেস্টে ১১তম বারের মতো এই কীর্তি গড়লেন তিনি। ঘরের মাঠে সর্বশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মিরাজ। ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে। অবশ্য দারুণ শুরুটা এনে দিয়েছিলেন পেসার নাহিদ রানা ৩ উইকেট নিয়ে। সঙ্গে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের চাপে রেখে একটি করে উইকেট নেন পেসার হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদ। গতকাল শুরুটা অবশ্য নাহিদ রানাই করেন। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসের প্রথম উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়েন ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারেন। তবে দ্বিতীয় দিনের মাত্র তৃতীয় ওভারে ১৮ রান করা কারেনকে আউট করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন নাহিদ। বেন কারেনের ক্যাচ লুফে নিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন মুমিনুল হক। জিম্বাবুয়ের অন্য ওপেনার বেনেটকেও পরে আউট করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন নাহিদ। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন বেনেট। জিম্বাবুয়ের ২১ বছর বয়সী ওপেনার আউট হওয়ার পরের ওভারেই অর্থাৎ, ২২তম ওভারে তৃতীয় বলে নিক ওয়েলশকে আউট করে জিম্বাবুয়ে হতাশা কাটিয়ে ওঠার আগে আরেকটি ধাক্কা দেন হাসান মাহমুদ। কেননা দলীয় ৮৮ রানেই দুই উইকেট হারায় তারা। সতীর্থরা ফিরলে ম্যাচের হাল ধরেন শন উইলিয়ামস। অন্য সতীর্থদের নিয়ে ছোট ছোট জুটি গড়ে নিজে ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে বাংলাদেশের রান শোধ দিয়েছেন। দলীয় সর্বোচ্চ ৫৯ রান করে যখন মিরাজের বলে আউট হলেন তখন জিম্বাবুয়ে ২ রানের লিডও এনে দিয়েছেন তিনি। মিরাজের সেই শুরু। এরপর তুলে নেন একে একে আরও চার উইকেট। ভিক্টর নিয়ায়ুচিকে আউট করে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। তবে মাঝে ওয়েসলি মাধেভেরে ২৪, নায়াশা মায়াভো ৩৫ ও রিচার্ড এনগারাভা অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে মোটামোটি বড় লিড এনে দেন।