খেলা
‘জিয়া মেমোরিয়াল দাবা’ টুর্নামেন্ট শুরু
এখনো প্রতিশ্রুত অর্থ পায়নি জিয়ার পরিবার
স্পোর্টস রিপোর্টার
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার
গত বছর এই দিনে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে খেলতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন দেশের অন্যতম সেরা দাবাড়ু জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের দাবার ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল নাম ৫০ বছর বয়সী গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। জিয়ার স্মৃতিতে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন আয়োজন করেছে ‘জিয়া স্মৃতি দাবা টুর্নামেন্ট’। গতকাল বিকালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের একজন গ্র্যান্ডমাস্টার, ৪ জন আন্তর্জাতিকমাস্টার, ১ জন মহিলা আন্তর্জাতিকমাস্টার ও ১২ জন ফিদেমাস্টারসহ ৭০ জন খেলোয়াড় অংশ নিচ্ছেন। ৭ দিনব্যাপী ৯ রাউন্ড সুইস-লীগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠেয় এ ইভেন্টে পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থ পুরস্কার দেওয়া হবে। জিয়াউর রহমান ছিলেন দেশের পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের মধ্য দ্বিতীয়। নিয়াজ মোরশেদের পর ২০০২ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পান তিনি। জিয়া দেশের অন্যতম সফল দাবাড়ু। ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। জাতীয় দাবার সর্বোচ্চ ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন তিনি। দাবা অলিম্পিয়াডে বহুবার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, খেলোয়াড়ের পাশাপাশি ছিলেন কোচও। জিয়াউর রহমানের একমাত্র
সন্তান ২০ বছর বয়সী তাহসিন তাজওয়ার জিয়া বাবার স্বপ্নকে বুকে নিয়ে হেঁটে চলেছেন দাবার পথে। এই এক বছরে তিনি ফিদেমাস্টার থেকে আন্তর্জাতিক মাস্টার (আইএম) হয়েছেন। গত এপ্রিলে হাঙ্গেরিতে তাহসিন পূরণ করেন নর্মের প্রয়োজনীয় শর্ত। কিন্তু রেটিং ২৪০০ না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক আইএম খেতাব পাননি এখনো। এদিকে জিয়ার মৃত্যুর পর দাবা ফেডারেশনের তৎকালীন নেতৃত্ব তার পরিবারের জন্য আর্থিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু জিয়ার স্ত্রী তাসমিন হোসেন হতাশা নিয়ে বলেন, ‘বিদায়ী ফেডারেশন থেকে এক কোটি টাকা দেবে বলেছিল। কিন্তু কোনো আর্থিক সহায়তা পাইনি।’ এ নিয়ে দাবা ফেডারেশনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দীন শামীম বলেন, ‘দেশে পরিবর্তন আর নানা অস্থিরতার কারণে ফান্ড গঠন আর সম্ভব হয়নি।’ জিয়ার জানাজায় এসে তার পরিবারের পাশে থাকার কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওও) এক শীর্ষ কর্মকর্তা। কিন্তু বিওএর থেকেও কোনো সহায়তা পায়নি প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টারের পরিবার। তারপরেও দাবা ফেডারেশনের নতুন কমিটি জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে এমন আয়োজন করায় খুশি তার স্ত্রী। দাবাকক্ষে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম, ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান এবং আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী
হামিদ, সহসভাপতি ডিআইজি শোয়েব রিয়াজ আলমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা বলেন, ‘ছেলে তাহসিন তাজওয়ার বলেছিল, বাবাকে মনে রাখতে হলে একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে। আমি তার কথা মতো শুরু করেছি। আমাকে সবাই সহযোগিতা করছে। এ জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ।’ ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রায় এক সঙ্গেই খেলা শুরু করেছিলাম। জিয়ার সঙ্গে অনেকবার খেলেছি। জিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার তিনটি নর্মের সময়েই আমি উপস্থিত ছিলাম। তাই আমাকে জিয়া লাকি বলেই মনে করত।’ সহসভাপতি শোয়েব রিয়াজ আলম বলেন, ‘জিয়ার স্মৃতির এই টুর্নামেন্টকে আমরা প্রতি বছর নিয়মিত করার চেষ্টা করব।’ ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি জিয়ার বাবার সঙ্গে খেলেছি। তাকেও দেখেছি খেলতে। এমন মানুষকে হারাতে হবে ভাবতে পারিনি।’ রানী হামিদ বলেন, ‘জিয়ার বাবার সঙ্গে আমি খেলেছি। তখন জিয়া অনেক ছোট ছিল। সে আসতো। পরে তার সঙ্গে খেলেছি। এখন তার ছেলের সঙ্গেও খেলছি। জানি না বেঁচে থাকব কিনা, আমার ইচ্ছা জিয়ার নাতি-নাতনীদের সঙ্গেও খেলার। আসলে জিয়ার অবয়ব আমাদের চারপাশেই আছে।’