ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

আপা, খুব জানতে ইচ্ছে করে

শামীমুল হক
১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার
mzamin

আচ্ছা, হাসু আপা- খুব জানতে ইচ্ছে করে, কোন শক্তির বলে আপনি বলতেন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাবে এমন কোনো শক্তি নেই। অথচ বাণী চিরন্তনে একটা কথা আছে-ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আপনার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়াও এটাই প্রমাণ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- কোনো ক্ষমতাবানরাই বাণী চিরন্তনের এ বাণীকে বিশ্বাস করেন না। যেমনটা আপনিও করতেন না। তবে, আপা- গত ছয় মাসে আপনি একটি বাহাস এ দেশে সুন্দর করে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। এজন্য আপনাকে বাহবা দিতেই হয়। আপনার পক্ষে এখন মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ ঘেউ ঘেউ করেন। আপনার পালিয়ে যাওয়াকে তাড়িয়ে দেয়া উপাধি দিয়েছেন তারা। আর বলছেন, এটা ঠিক হয়নি। খুব সূক্ষ্মভাবে তারা ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেন। কিন্তু তারা একবারও চিন্তা করেন না আপনার দীর্ঘ প্রায় ষোল বছর শাসনামলে দেশ পরিণত হয়েছিল রাক্ষসপুরীতে। কথা বললেই গুম, খুন। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন নিজ হাতে। যাতে করে পাঁচ বছর পর পর ভোট হবে। কিন্তু আপনি ও আপনার দল থেকে যাবে ক্ষমতায়। হাসিমুখে আপনি বঙ্গভবনে গিয়ে শপথ নিবেন। ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সংখ্যা বাড়বে। মানে কতোবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেটা মানুষ আঙ্গুলের কড়ায় গুনবে। প্রধানমন্ত্রী হয়ে শপথ ভাঙার কার্যক্রমে নামবেন। রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে একের পর এক কাজ করবেন। যাকে খুশি ধরে এনে শাস্তি দেবেন।

আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দল দেশে থাকতে পারবে না- এমন হুংকার দিবেন। অসংখ্যবার এমন হুংকার দিয়েছেন। আজও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার ভাইরাল বক্তব্য শুনে এলাম। যেখানে আপনি বলছেন- পাড়া-মহল্লা থেকে একটা একটা বিএনপিকে ধরে এনে শাস্তি দিতে হবে। বিএনপি’র এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। হাসু আপা, ও আপা- নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের কথা তো আমরা সবাই শুনেছি। আপনিও ঠিক তেমনই। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে সব সময় চেষ্টা করেছেন। আখেরে কোনো লাভ হয়নি। শুধু নিজের কাটা নাক নিয়েই এখন ভিনদেশে বাস করছেন। বড় আফসোস হয় নিজের দেশ থেকেও আজ আপনি বিশ্বের মধ্যে এক নরাধম, যার কোনো দেশ নেই। যে রিফিউজির মতো অন্যের দেশের গলগ্রহে থাকছেন। ক্ষমতার লোভ আপনাকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল যে, আপনি নিজেকে গড ভাবতে শুরু করেন। তাই তো এদেশে যখন মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে থাকে তাদের বাধা দেননি। বরং বলেছেন, আমার বোন রেহানা আমাকে বলেছে দেশের ষোল কোটি মানুষকে তুমি খাওয়াতে পারছো আর এই ১০ লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারবে না। নাউজুবিল্লাহ। আপা নিজেকে গড না ভাবলে এভাবে কোনো মানুষ বলতে পারে? একটি কথাই ধরুন না। এই যে আপনি জোর গলায় বলতেন, এমন কোনো শক্তি নেই আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো। আচ্ছা এখন তো দেখছি শক্তি আছে। জানি আপনি বিশ্বাস করবেন না। কারণ আপনি এখনো জুলাই-আগস্টকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। কিন্তু ষোল বছর যে অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়েছেন দেশবাসীর ওপর। বিরোধী দলের ওপর। বিরোধী মতের ওপর। সেটার কথাতো বলেন না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকতে দিয়ে বলেছেন, দয়া করে দিয়েছেন। আবার তার পুত্র তারেক রহমানের প্রতি রুষ্ট হয়ে বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে জেলে পুরে দেবো। আপনার এই কথায় প্রমাণ হয় ইচ্ছে করে খালেদা জিয়াকে জেল দিয়েছেন। আবার খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পণ করেছিলেন বহু আগেই- সেই কথাও প্রকাশ্যে বলেছেন। অথচ আপনি শপথ নিয়েছিলেন রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না। ওইদিনই তো আপনার প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করা উচিত ছিল।


হাসু আপা, এই লেখা যখন লিখছি- তখন আমার সামনে আওয়ামী লীগপন্থি শীর্ষ এক সাংবাদিক নেতা বসা। তিনি বলছিলেন, শেখ হাসিনার বড় ভুল তিনি এমন অবস্থায় পৌঁছেছিলেন যে কাউকেই পাত্তা দিতেন না। নিজে যা মনে করতেন সেটাই করতেন। আর যাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন তারাও সঠিক পরামর্শ দিতে সাহস করেন নি। কারণ এ স্বাধীনতাও তাদের ছিল না। পরামর্শ দিতে গিয়ে যদি শেখ হাসিনার মতের বিরুদ্ধে যায় তাহলে তো তার ওপর ঝড় বইয়ে যাবে। তিনি বলছিলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি বঙ্গবন্ধুকে দেখে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছিটেফোঁটাও ছিল না শেখ হাসিনার মাঝে। শেখ হাসিনার পতনের জন্য শেখ হাসিনা নিজেই দায়ী। তিনি কেন সর্বশেষ নির্বাচনটা করতে গেলেন এভাবে? পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আর কি থাকে? চতুর্থবারের নির্বাচনটা সবাইকে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে করলে আজ তার এই দশা হয় না। বিরোধী দল হয়ে সংসদে থাকতে পারতো। পরের বার তো ক্ষমতায় আসতো? আসলে সবই হলো লোভ। 

হাসু আপা, আপনাকে এখন সুসংবাদ দিতে চাই। আপনিবিহীন বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নরম গরম বাহাস চলছে। সরকারের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে নতুন রাজনৈতিক দল হয়েছে। এ রাজনৈতিক দল নিয়ে চারদিকে এখন শোরগোল। আসলে কী হতে যাচ্ছে? বিএনপি চাইছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জামায়াত চাইছে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। আর বৈষম্যবিরোধীরাও চাইছে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তাদের এই মতানৈক্য আপনার দলের কিছুটা হলেও লাভই হচ্ছে মনে হয়। এমনিতেই বাঙালি আত্মভোলা জাতি। গত ষোল বছর যে জুলুম চালিয়েছেন জাতির ওপর- মাত্র ছয় মাসে তা অনেকেই ভুলে বসে আছে। এটা আপনার জন্য মঙ্গল বলেই মনে হয়। দেশের রাজনৈতিক বাহাসে বিএনপি মনে হয় একা হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় অনেকে বলছেন, জামায়াত আর বৈষম্যবিরোধীরা এক কাতারে থাকবে। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি’র ওপর ষোল বছর নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়ন চালানোর পরও ওরা আওয়ামী লীগকে হাত ধরে টেনে তুলবে। আবার আওয়ামী লীগও তাদের স্বার্থে বিএনপি’র সঙ্গে এক হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। অর্থাৎ দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গেল। এসবই কিন্তু আন্দাজ। বাস্তবে কী ঘটে আল্লাহ মালুম। তবে, আপা জীবনে আপনি যে ভুল করেছেন তা থেকে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। এ মুহূর্তে আপনি কিন্তু একা হয়ে পড়েছেন। আপনার পাশে কেউ নেই। যতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হম্বিতম্বি করে মানুষকে জানান দিলেও মানুষ কিন্তু সব বোঝে। তাই বলছি, হম্বিতম্বি নয়, দেশবাসীর কাছে ষোল বছরের কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করুন। ক্ষমা চান। তাহলে যদি জনগণ কিছুটা হলেও আপনাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু আপনি দেশ থেকে পালানোর দিনও যেভাবে আপনার নির্দেশে একের পর এক গুলি ছুড়েছে পুলিশ ও আপনার লেলিয়ে দেয়া গুণ্ডাবাহিনী- এ দৃশ্য মানুষ ভুলবে কীভাবে? দেশের প্রধানমন্ত্রী মানে ওই দেশের অভিভাবক। আপনি অভিভাবক হয়ে কী করে জনতার বুকে তীর বিদ্ধ করলেন। এ মুহূর্তে মনে পড়ছে বিখ্যাত সেই গানটি- মারিয়া ভুজঙ্গ তীর কলিজা করিল চৌচির/কেমন শিকারি তীর মারিল/বিষ মাখাইয়া তীরের মুখে/মারিল তীর আমার বুকে/দেহ থুইয়া প্রাণটা লইয়া যায়/আমার অন্তরায়, আমার কলিজায়/ আমার অন্তরায়, আমার কলিজায়...।

হ্যাঁ আপা, দেশের মানুষের কলিজা এখন তীর মাখানো বিষের যন্ত্রণায় অস্থির। তাদের দেহ আছে। কিন্তু সেই দেহে প্রাণ নেই। রাজনীতি তাদের নিঃস্ব করে গেছে। যাকে বিশ্বাস করেছে সেই বিষ মাখানো তীর মেরেছে জনতাকে লক্ষ্য করে। এখন মানুষ কাউকে বিশ্বাস করতেও ভয় পায়। তাই তারা ক্ষুব্ধ, বিক্ষুব্ধ। দেশের মালিক যাদের বলা হয় সেই জনতাকে পিষ্ট করতে আপনি যেমন ছাড়েননি আপা, অন্যরাও একটু হলেও এ দোষে দোষি। তাই তো কেউ কেউ বলছে আগামী নির্বাচনে জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলো এগিয়ে যাবে। কারণ তাদের সঙ্গে যাবে বৈষম্যবিরোধীরা। এমনটা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তারপরও বলবো রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। 
আপা, ভালো থাকুন। দূর-দূরান্তে আপনার অতিশয় পাগল ভক্তদের জন্য দোয়া করবেন। কারণ তারা কখন কি করে বসে তা বুঝা মুশকিল। চারদিক খেয়াল করে চলবেন। হিসাব করে, মেপে মেপে কথা বলবেন। নিশ্চয় আল্লাহ আপনার মঙ্গল করবেন। 

সূত্র- জনতার চোখ

পাঠকের মতামত

অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে উনি এটা পড়বেন কিনা! উনার পড়া না পড়ায় কিচ্ছু আসে যায় না। দেশবাসী পড়বে, আন্তর্জাতিক মহল পড়বে, এটাই এ লেখার সাফল্য।

রফিকুল আলম
১২ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৩:২৭ অপরাহ্ন

হাসু আফা কি এটা পড়বে??

প্রান্ত
১১ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫:০৫ অপরাহ্ন

ফেরাউনকে আমরা না দেখলে ইতিহাস পড়েছি এবং শুনেছি। কিন্তু ঐ ইতিহাসের ফেরাউনের সাথে বাস্তবে মিলালে বাংলাদেশের স্বৈরাচারিণী শেখ হাসিনার সাথে হুবহু মিল পরিলক্ষিত হয়েছে।

শওকত আলী
১১ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

ভালো কথা! আপাকে তাড়িয়েছি সুখে-শান্তিতে থাকবো বলে। এখন রাস্তা-ঘাটে দুরে থাক নিজ গৃহে পর্যন্ত নিরাপদে ঘুম আসে না। চারদিকে নারী দর্শনের মহা উৎসব চলছে। আমরা কী এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম।

মোঃ শাহ আলম
১১ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

The witch destroyed the country so much in 17 years that it will take another 100 years to recover provided that the witch and/or her party do not come to power in those 100 years.

Nam Nai
১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ৮:১৮ অপরাহ্ন

একটা বিষয় আপনি ভোল বলেছেন। মনে হচ্ছে আপনি কারও হয়ে এই কথা বলছেন। কারণ ৫৩ বছর যারা ভোলের মাসুল দিচ্ছে অরা এখনো উল্টো পথে। যারা বিরুধী ভাবে একটা শক্তি দেখাতে পারত অরা এটাও হারাতে বসেছে। যে যার দল করুক কিছু যায় আশে না ভারতের দাশ না হলেই হবে

Rmjan
১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ৬:৩২ অপরাহ্ন

She is a dangerous criminal and a GENPCIDE Leader.No mercy to her,

A Hayat Choudhury
১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ২:১৩ অপরাহ্ন

বড় আপসোস। চোরা নাহি শুনে ধর্মের বার্তা। চোখমুখ খোলা রাখে চুরির ধান্ধায়।

শহিদুল ইসলাম
১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

আপনার সবটুকু লেখা অত্যন্ত মনযোগসহকারে পড়েছি। ভাল লেগেছে। তবে কেউ কেউ বলছে আগামী নির্বাচনে জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলো এগিয়ে যাবে। একথা বলে আপনি আপনার লেখার সার্বজনীন ভাল লাগাকে আঘাত করেছেন। কারণ কেউ কেউ অন্য অন্য দলের কথাওতো বলে। তাদের বলাটাকে আপনি তাচ্ছিল্য করেছেন। আপনার সুন্দর লেখাকে সার্বজনীন করতে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক হওয়ার অনুরোধ রইল।

আ.ক.ম সেলিম
১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

সে কী পড়বে ?

জনতার আদালত
১০ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status