অনলাইন
মতবিনিময় সভায় বক্তারা
ঢাবির শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে বিশদ প্রস্তাবনা
স্টাফ রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৮:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
ভয়ের সংস্কৃতি ভেঙে একটি বৈষম্যহীন ও নিপীড়নমুক্ত মানবিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে হবে। গেস্টরুম ও গণরুম সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। কমাতে হবে ভিসির ক্ষমতা। শিক্ষা ও গবেষণার সব ক্ষেত্রেই একাডেমিক ও চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। বন্ধ করতে হবে লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতি। তবে ছাত্র সংসদগুলো সচল করতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথাগত চরিত্রটি বদলানোর জন্য রাষ্ট্রের সংস্কারও জরুরি। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ কথা উঠে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজ আয়োজিত এই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ট্রেজারার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা অংশ নেন। বিভিন্ন প্রস্তাব-সংবলিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির নৃবিজ্ঞান বিভাগের জোবাইদা নাসরিন, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের আবদুল্লাহ-আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের খোরশেদ আলম এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজের শাহমান মৈশান। মূল প্রবন্ধে লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক ও পেশিশক্তিনির্ভর ছাত্ররাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা; বিতর্ক, সমালোচনা, প্রশ্ন যদি যৌক্তিক কারণে সরকার, রাষ্ট্র বা কোনো প্রতিষ্ঠিত ভাবাদর্শকে সমালোচনা করে, তবে সেই গঠনমূলক জ্ঞানচর্চাকে রাষ্ট্রের সুরক্ষা দেয়া; শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিপীড়ন-বৈষম্যবিরোধী সেল’ গঠন; আচরণবিধিমালা প্রণয়ন; বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বিশ্ব স্বীকৃতি মানসম্মত অনুপাত ১: ২০ হলেও বিদ্যমান বাস্তবতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ১: ৪০এর বেশি না হওয়ার ব্যবস্থা করা; ‘টিচিং ইউনিভার্সিটির পরিবর্তে টিচিং অ্যান্ড রিসার্চ, এই মিশ্র বৈশিষ্ট্যের বিশ্ববিদ্যালয় করা; মেধা ও আর্থসামাজিক প্রয়োজন বিবেচনা করে প্রথম বর্ষ থেকেই আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ; পিএইচডি প্রোগ্রামে পরিবর্তন আনা; শিক্ষকদের পদোন্নতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা যুক্ত করা এবং ঢাকার বড় সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করা করা হয়।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, চলতি মাসের শেষের দিকে বা তার একটু আগে সিন্ডিকেটের অনুমোদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে চাই। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বজনতার বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চেয়েছি, তা হয়নি। এটা আমার দুঃখ। রাজনীতি করা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু হলগুলোতে সেই দখলদারত্বের রাজনীতি থাকবে না। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে থাকবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী উমামা ফাতেমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবান্ধব একটি একাডেমিক বিশ্ববিদ্যালয় রূপে পরিণত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ কাজ করছে। এ উদ্যোগে আরও বেশি ছাত্র-শিক্ষককে যুক্ত করা জরুরি। সবাইকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জায়গা তৈরি করা জরুরি।
আরেক সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবদুল কাদের বলেন, রাজনীতি করা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু হলগুলোতে সেই দখলদারত্বের রাজনীতি থাকবে না। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে থাকবে না। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, চিন্তাকে চিন্তা দিয়ে, বইকে বই দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। বইকে বুলেট নয়, চিন্তাকে চাপাতি দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না। এসময় তিনি বিশাল জায়গাজুড়ে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বাংলো ভেঙে দেয়া বা জাদুঘর করার দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আল কুরআন, আল হাদিস, কুরআনিক সায়েন্স, মহানবির রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি বিভাগ খোলা হোক, পাঠদান করা হোক, গবেষণা হোক।