বাংলারজমিন
মিজানের ফ্রি খাবার বাড়ি
আল মামুন, বেনাপোল (যশোর) থেকে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবারযশোরের শার্শার ৫৩ বছর বয়সী মিজানুর রহমান মিজান পেশায় একজন মোটরসাইকেল মেকানিক। শার্শা বাজারে ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নামে তার একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজ রয়েছে। তিনি উপজেলার আমতলা গাতিপাড়ার অজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় লেখাপড়াও করতে পারেননি তিনি। সংসারে অভাব অনটনের কারণে ৮-৯ বছর বয়স থেকেই নেমে পড়েন মজুরের কাজে। তারপর মাঠে শ্যালো মেশিন চালানো এবং মেরামতের কাজ করতেন। পরে উপজেলার নাভারণ বাজারে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজে কাজ পান তিনি। সেই থেকে মোটর মেকানিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তার। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে অবহেলিত ও এতিম শিশুদের জন্য শ্যামলাগাছিতে প্রতিষ্ঠা করেন হযরত শাহজালাল (রহ.) লতিফিয়া মডেল মাদ্রাসা ও এতিমখানা। বর্তমানে মাদ্রাসায় ছাত্রের সংখ্যা ৪১ জন। এখানে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ফ্রি পাঠদানের ব্যবস্থা আছে। অনাহারে দিন পার করা ছিন্নমূল পথশিশু, পথচারী, ভারসাম্যহীন মানুষদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ফ্রি খাবার বাড়ি’। যেখানে তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালে এর কার্যক্রম শুরু করেন।
এ ছাড়াও ঝিকরগাছার উত্তর দেউলি গ্রামে ১০ শতক জায়গার উপর কবরস্থান ও বেওয়ারিশ পুনর্বাসন কেন্দ্রের ঘর নির্মাণকাজের ৯০ শতাংশ সম্পন্ন করেছেন। জায়গাটি দান করেছেন ঝিকরগাছার নাভারণ ইউনিয়নের উত্তর দেউলি গ্রামের হোসনেয়ারা খাতুন। বিশ্বব্যাপী করোনাকালীন সময়ে অর্ধাহারে দিন অতিবাহিত করা মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা, বাড়িতে বাড়িতে খাদ্য পৌঁছে দেয়া, অনলাইন ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে জরুরি রক্তের প্রয়োজনে রক্তের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন কাজ নিঃস্বার্থভাবে করেছেন মিজান। এ ছাড়া বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় কোরআন বিতরণ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, গরিব ও অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাসামগ্রী ও গাইড প্রদান, টিউবওয়েল স্থাপন, ঘর মেরামত, পাখির বাসা স্থাপন ও বন্যার্তদের সাহায্য করে থাকেন তিনি।
মিজানের কোনো একাডেমিক শিক্ষা না থেকেও নিজের উদ্ভাবন শক্তি দিয়ে একের পর এক নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করে দেশসেরা উদ্ভাবকের খ্যাতি অর্জন করেছেন। উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এ পর্যন্ত মোট ৩০টি সাফল্য সনদ ছাড়াও অসংখ্য ক্রেস্ট ও পুরস্কার পেয়েছেন। এ বিষয়ে মিজান বলেন, মানবসেবা করতে গিয়ে সবকিছু দান করেছি। জীবনের কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি মানবিক কাজ করে আত্মতৃপ্তি পাই। কারও কোনো উপকার করতে পারলে নিজের কাছেও ভালো লাগে। দিনশেষে একজন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারি, একটা আটক বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে মুক্ত আকাশে উড়াতে পারি এটা তৃপ্তি, এটাই বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়। যতদিন বেঁচে আছি আজীবন মানবসেবা করে যাবো। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মানবজমিনকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে দেখছি মিজান বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি শুধু যশোরই নয় অন্য জেলাতেও মানবিক কাজের জন্য তার অবদান রেখেছেন। সামাজিক কর্মকাণ্ড ও মানবসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তার ঝুলিতে জমা হয়েছে অসংখ্য সম্মাননা স্মারক।
Real human being