বাংলারজমিন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপি
কমিটি ভাঙা-গড়ার খেলা, বিপদে দল
ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবারচাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। জেলা থেকে উপজেলা সবখানেই নেতাকর্মীর মধ্যে বিভক্তি। তৃণমূল পর্যন্ত কোন্দল বিস্তৃতি পেয়েছে। জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সঙ্গে বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক এমপিদের সম্পর্ক ‘সাপে-নেউলে’। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া ও সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামও এক টেবিলে বসেন না। দুজনেরই আলাদা বলয় রয়েছে। দলীয় কর্মসূচিও পালন করছেন আলাদা আলাদা ভাবে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপুর আলাদা গ্রুপ নেই। এই বিএনপি নেতা কখনো আহ্বায়কের সঙ্গে আবার কখনো সদস্য সচিবের সঙ্গে। গত ৪ বছরেও এ কমিটির তিন নেতাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি। ইউনিট কমিটিগুলোতে চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা। প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভায় দুটি করে কমিটি। জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ট্রল হচ্ছে। এর খেসারত দিচ্ছে পুরো দল। এছাড়াও সবখানে রয়েছে সাবেক এমপিদের আলাদা বলয় আর প্রভাব। দীর্ঘদিনের পুরনো রাজনীতির বলয় ভেঙে দলকে সংগঠিত করতে পারেনি বর্তমান নেতৃত্ব। তবে দলে সৃষ্ট জটিলতা সমাধান ও শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ৮ই ডিসেম্বর গোলাম জাকারিয়াকে আহ্বায়ক ও রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপু। পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেলা বিএনপির ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি হয়। ওই কমিটিতে বাদ পড়েন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বর্ষীয়ান রাজনীতিক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা, মো. হারুনুর রশিদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের অনুসারীরা। সাবেক এমপিদের কোণঠাসা করতে গিয়ে দলকেই বিপদে ফেলেছেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতারা। সাংগঠনিক দুর্বলতায় বিএনপির এই ‘দুর্গ’ এখন নড়বড়ে। দলের ভেতরে নানা গ্রুপ সক্রিয়। তখন থেকে এ কমিটি নিয়ে চলছে বিতর্ক। বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা।
দলীয় সূত্র বলছে, শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া ও সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম। সদস্য সচিবের স্বাক্ষর ছাড়াই শিবগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। একইভাবে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের স্বাক্ষর ছাড়াই চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা, নাচোল উপজেলা ও পৌর কমিটি করা হয়। স্থানীয়ভাবে দলে চলমান অসন্তোষের বড় কারণ এটি। কোন উপজেলাতেই বিএনপির ঐক্য নেই। প্রতিটি উপজেলাতেই রয়েছে আলাদা আলাদা বলয় উপ-বলয়। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৪শে জুন একইভাবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়ার স্বাক্ষর ছাড়াই জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম চাইনিজ ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা, নাচোল উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের মৌখিক নির্দেশনায় গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এসব কমিটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক এক নেতা বলেন, ৪ বছর আগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সাজানো কমিটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদের অনুসারীদের রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ হয়। বর্ষীয়ান রাজনীতিক হারুনুর রশিদকে কোণঠাসা করতে গিয়ে পুরো জেলা বিএনপিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে দলটি। তবে হারুনুর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। ভোটের রাজনীতিতে পরীক্ষিত। বিগত দিনে তিনি এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে হারুনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রর নির্দেশ ছিল তিনজনের যৌথ স্বাক্ষরে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করতে। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া আমার স্বাক্ষর ছাড়াই ৫টি ইউনিট কমিটির অনুমোদন দেন। দলে গ্রুপিং ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বড় কারণ এটি। পরে বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়ে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের দিয়ে কয়েকটি ইউনিট কমিটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া বলেন, আমার স্বাক্ষর ছাড়া কমিটির কোন ভিত্তি নেই। ঢাকায় মিটিংয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেছেন- আহ্বায়কের স্বাক্ষর ছাড়া কোন কমিটি হয় না। তারপরও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালামের নাম ব্যবহার করে তারা কয়েকটি ইউনিট কমিটি করে করেছেন। এসব কমিটি বৈধ বলার সুযোগ নেই। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রশ্নে এই বিএনপি নেতা বলেন- আগামী নির্বাচনে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে; এবং সমাধানও সম্ভব। কিন্তু সাবেক এমপি হারুনুর রশীদের সঙ্গে কমপ্রমাইজ কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভব নয়। এটা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে।