বাংলারজমিন
এসআই নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী
আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
২০২৪ সালের ২৬শে জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী নাঈম হাছান। তার পিতা আব্দুল মোতালিব কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও চৌগাংগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ওই ইউনিয়নের কিষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দা নাঈম হাছানের শ্বশুরবাড়ি পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের খামা গ্রামে। ওই গ্রামের জসীম উদ্দীনের মেয়ে আজিজুন্নাহার সাথীর সঙ্গে বিবাহের বরযাত্রী ছিলেন চৌগাংগা ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছাইফুল ইসলাম। ছয় লাখ টাকা মোহরানায় নাঈম ও সাথীর বিয়ের ১ নম্বর সাক্ষীও ছিলেন তিনি। কিন্তু এর ৯ মাস পর গত অক্টোবরে বাংলাদেশ পুলিশের ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তিনি অবিবাহিত হিসেবে নাঈম হাছানকে দিয়েছেন বৈবাহিক অবস্থার সনদ। এ সনদ ব্যবহার করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী নাঈম হাছান এখন ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকায়। তার রোল নং-১০৯৭২৩। ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) নিয়োগ-২০২৫ এ চূড়ান্ত ফলাফলে ৪৬০নং ক্রমিকে তার নাম রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নিষিদ্ধ হিসেবে ঘোষণার আাগে ছাত্রলীগের ইউনিয়ন কমিটির বড় পদপ্রত্যাশী হিসেবে সংগঠনটির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন নাঈম হাছান। এ ছাড়া তার পিতা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা। অভিযোগ উঠেছে, নাঈম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী, আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং বিবাহিত হওয়ার পরও পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের সময় বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যান ইটনা থানার ওসি মো. জাফর ইকবাল। এ পরিস্থিতিতে গত ৩০শে জুন চৌগাংগা ইউনিয়নের বিড়ারভিটা গ্রামের মৃত শাহেদ আলীর ছেলে আব্দুর রব কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবরে নাঈম হাছানের তথ্য গোপন এবং জালিয়াতির তথ্য প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দেন। এরপরই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এবং তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অভিযোগে বলা হয়, নাঈম নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করে নিয়োগ পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সে একজন বিবাহিত লোক হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে অবিবাহিত বলে নিয়োগ পেয়েছে। এদিকে গত অক্টোবরে ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর বৈবাহিক অবস্থা অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে (তালাকপ্রাপ্ত/তালাকপ্রাপ্তা গ্রহণযোগ্য নয়)। শিক্ষানবিশকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই অবিবাহিত থাকতে হবে শর্ত দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, বিয়েতে সাক্ষী ছিলাম কিনা মনে নেই। তবে নাঈম বিয়ে করেছে। একটা প্রত্যয়ন লিখে এনে আমাকে দস্তখত করার কথা বলেছিল, দস্তখত করে দিয়েছি। এখন অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবার আবার বিবাহিত হিসেবে নতুন করে প্রত্যয়ন দিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমার ধারণা না থাকায় এমনটি হয়েছে। ইটনা থানার ওসি মো. জাফর ইকবাল মানবজমিনকে বলেন, তখন পুলিশকে এ ব্যাপারে কেউ তথ্য দেয়নি। তাই আমরা বিষয়টি জানতে পারিনি। এখন বিষয়টি জানার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার মানবজমিনকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বাজিতপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বিষয়টি তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছিল। তার দেয়া তদন্ত রিপোর্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত
চৌগাংগা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইটনা থানার ওসি ঘোষ খেয়েছে নিশ্চিত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।
Al l out
প্রত্যেক ইউনিয়নে গ্রাম প্রতিরক্ষা পুলিশ আছে। তাদেরকে চৌকিদার দফাদার বলা হয়। তারা থানাকে গ্রামের শান্তি শৃঙ্খলার খবর দেয়। চেয়ারম্যান মিথ্যা বলছেন। ওয়ার্ড মেম্বার আছে।সব প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান সুবিন্নস্ত। চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের লোক বলে কাজটি করেন নাই। তার একাজ শাস্তিযোগ্য।