বাংলারজমিন
নিখোঁজ কলেজছাত্রীর হদিস মিলেনি সাড়ে তিন মাসেও
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
সিলেটের বিয়ানীবাজারে বান্ধবীর বাড়িতে যাওয়ার পর হাবিবা জান্নাত তামান্না (২২) নামের এক তরুণী নিখোঁজের প্রায় সাড়ে তিন মাসেও হদিস মেলেনি। রহস্যজনক এই নিখোঁজের ঘটনাটি উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর আকাখাজানা গ্রামে। এ ঘটনায় গত ২৬শে জুন তাছলিমা জান্নাত নামের এক প্রতিবেশী তরুণীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে বিয়ানীবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন নিখোঁজ হাবিবা জান্নাত তামান্নার বড় বোন রাহেলা আক্তার। তবে এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নিখোঁজ হাবিবা জান্নাত উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর আকাখাজানা গ্রামের মৃত নিজাম উদ্দিনের মেয়ে। নিখোঁজের স্বজনরা জানান, একই মাদ্রাসায় দাখিল পড়াকালীন হাবিবা জান্নাতের সঙ্গে উত্তর আকাখাজানা গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আব্দুল বাছিতের মেয়ে তাছলিমা জান্নাতের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই বান্ধবীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় প্রায়শই দু’জনেরই উভয় বাড়িতে যাওয়া-আসা হতো। এমনকি একে অন্যের বাড়িতে রাত্রীযাপনও ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। গত ২২শে জানুয়ারি সকালে অন্যান্য দিনের মতোই তাছলিমার বাড়িতে যায় হাবিবা জান্নাত তামান্না। এরপর তাছলিমার মা হাবিবার ভাই হায়াত আহমদকে মুঠোফোনে হাবিবাকে তাদের বাড়িতে কিছুদিন রাখতে চাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি আর মানা করতে পারেননি। পরে ১৪ই মার্চ রাত পর্যন্ত হাবিবার সঙ্গে তার ভাই-বোনের মুঠোফোনে যোগাযোগ থাকলেও পরদিন ১৫ই মার্চ থেকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দু’-একদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন হাবিবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ে। তারা ছুটে যান তাছলিমাদের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে তাছলিমা ও তার মা, ভাই-বোন অন্য কোথাও চলে গেছেন। কিন্তু কোথায় গেছেন, কেউই জানে না। পরবর্তীতে গ্রাম্য সালিশের দ্বারস্থ হন হাবিবার পরিবার। কিন্তু সালিশে সময়ক্ষেপণ হলেও হদিস মিলেনি।
নিখোঁজ তরুণীর বোন রাহেলা আক্তারের দাবি, গত ২২শে জানুয়ারি সকালে তাছলিমার ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে হাবিবা আর ফেরেনি। তিনি বলেন, কোনো উপায় না পেয়ে বোনের খোঁজ পেতে বিয়ানীবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। বোনকে তাছলিমা ও তার মা-ভাই লুকিয়ে রেখেছে বলে দাবি করেন তিনি।
নিখোঁজের প্রায় সাড়ে ৩ মাস অতিবাহিত হলেও কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেননি, এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবার বোন জানান, মা-বাবা নেই, আমরা এতিম। তার ওপর আমার ভাই-বোনেরা সবাই সমাজের অন্য মানুষদের চেয়ে একটু আলাদা, সহজ-সরল প্রকৃতির। তাছাড়া আমরা বোন তার বান্ধবী তাছলিমার বাড়িতে বসবাস করছে-বিষয়টা আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন বোনের সন্ধান পেলাম, তখন বাধ্য হয়েই পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আল-আমিন জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি। কারণ, তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারলেই মূল রহস্য উন্মোচিত হবে। এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার ওসি মো. আশরাফ উজ্জামান জানান, নিখোঁজ তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে।