ঢাকা, ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

অবুঝ দুই শিশুকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় আবু সাঈদের স্ত্রী

মোশাহিদ আহমদ, দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে
২৯ জুন ২০২৫, রবিবার
mzamin

স্বামী আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর স্ত্রী ডলি বেগম এখন দুই সন্তান তাকিয়া (৭) ও তানজিন (৭ মাস)কে নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। দুই সন্তান নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন এখন সেই চিন্তায় দিন কাটছে তার। গত ২২শে জুন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামে সেনাবহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় আবু সাঈদ নিহত হন। তিনি দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের তারাপাশা গ্রামের বাসিন্দা ও পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। আবু সাঈদের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে তার পরিবারটি। স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ মায়ের বিলাপ যেন থামছেই না। এদিকে আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় তার ভাই কিবরিয়া বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে মূলহোতা একরার হোসেন। তবে তাকে গ্রেপ্তার করতে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। নিহত আবু সাঈদের স্ত্রী ডলি বেগম মানবজমিনকে বলেন, আমার স্বামী কাজে যাওয়ার কথা বলে সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। সন্ধ্যায় খবর আসে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। হাইমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে স্বামী হত্যার দাবি করে ডলি বলেন, তিনি দু’টি অবুঝ শিশু রেখে গেছেন। এতটুকু বয়সেই পিতাহারা হয়েছে আমার সন্তানরা। আমি এখন কি করে তাদের ভরণপোষণ করবো। স্থানীয় ইউপি সদস্য শানুর মিয়া ও তারাপাশা গ্রামের লোকজন নিহত আবু সাঈদের অসহায় পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য দাবি জানিয়েছেন। সরজমিন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিরাই উপজেলার হাওরবেষ্টিত দুর্গম জনপদ কুলঞ্জ ইউনিয়নের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম একরার হোসেন। তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে। তিনি ওই ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা, যুবলীগের নেতা ও কুলঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তার হাত ধরেই প্রত্যন্ত এ এলাকায় অস্ত্রবাজি শুরু হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে অস্ত্রধারী বাহিনী গড়ে তোলেন। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে একরার হোসেনের নেতৃত্বে একাধিকবার হামলা, গুলিবর্ষণ ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে প্রকাশ্য অস্ত্রবাজির মাধ্যমে হাতিয়া গ্রামসহ কুলঞ্জ ইউনিয়নে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট পরিহিত তার অস্ত্রধারী বাহিনীর মহড়ায় তটস্থ থাকতো ইউনিয়নের লোকজন। ২০১৭ সালে ১৭ই জানুয়ারি জারলিয়া জলমহালের দখল নিয়ে একরার বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের অপর পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে তিন জেলে মারা যান। হাতিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গভর্নিং বডির সভাপতি পদ নিয়ে দফায় দফায় বিদ্যালয়ে হামলা, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া, বিদ্যালয় তালাবদ্ধ ও শিক্ষকদের মারধরের ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে। ২০শে জুন একরার পক্ষের এক ব্যক্তির সঙ্গে গ্রামের আলাল মিয়া ঝগড়াকে কেন্দ্র করে ফের একরার বাহিনী অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা ও গুলিবর্ষণ করে। এতে আবুল কালাম নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এ ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের ধরতে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ২২শে জুন সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় যৌথ অভিযান।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন/ বড়লেখায় মন্দিরে চুরির রহস্য উদ্‌ঘাটন, ৬ চোর গ্রেপ্তার

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status