বাংলারজমিন
ছাত্র আন্দোলন
বাবা-হারার বেদনা কি মুছবে?
হোসাইন সিপাহী, বেতাগী (বরগুনা) থেকে
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার
পেশায় এম্বুলেন্সচালক। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে কাটতো সুখের সংসার। গত বছর জুলাই মাসে কাজে ঢাকায় যায় টিটু। ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাস্তায় থাকা অবস্থায় হঠাৎ গুলি এসে শরীরে আঘাত হানে। মৃত্যুর কোলে ঢেলে পড়ে সে।
বাড়িতে থাকা তিন শিশু বাচ্চা তখনো কেউ জানতো না যে তারা চিরদিনের জন্য এতিম হয়ে গেছে। তাদের বাবা ডাক শোনার মতন কেউ নেই। যখন লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে তখন হাউমাউ করে কাঁদলেও বাবা আর ফিরে তাকায়নি। এক বছরেও বাবার প্রতি আগ্রহ কমেনি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের নীলখোলা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে টিটু হাওলাদারের দুই সন্তানের। নিহত টিটু হাওলাদারের স্ত্রী আয়েশা বেগম বলেন, আমার এক আত্মীয় ফোন করে বলে তোমার স্বামীর গায়ে গুলি লেগেছে। সে ধানমণ্ডির গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মগজ বের হয়ে গেছে। শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তিনি বলেন, ‘মোর স্বামী তো কোনো দল করে না, সে তো আন্দোলনও করে না, সাধারণ একজন ড্রাইভার। তারপরেও বিনা অপরাধে তাকে জীবন দিতে হলো। ছেলেমেয়ে বাবা বাবা বলে পাগল। আমি অবুঝ সন্তানদের কী বুঝ দেবো?’
একই ইউনিয়নের উত্তর করুনা গ্রামের মো. তৈয়ব আলীর ছেলে মো. লিটন আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে মারা যান। বৃদ্ধ বাবার একমাত্র সম্বল ছিল সে। অসুস্থ বাবাকে ভালো রাখতে ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। বৃদ্ধ বয়সে ছেলে হারার শোক সহ্য করতে পারে না বাবা। তার বাবা মো. তৈয়ব বলেন, বাবার কাঁধে ছেলের লাশ এর থেকে কী আর যন্ত্রণা থাকতে পারে! আমার সংসারের বাতি ছিল লিটন। হঠাৎ বাতি নিভে গেছে আর আমার পুরো পরিবার অন্ধকারে পড়ে গেছে। সরকার আমাদের সহযোগিতা করলে আলোর মুখ দেখবো। মরার আগ পর্যন্ত্ত ছেলের হত্যার বিচারটুকু চাই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির গাজী বলেন, আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি। তাদের যেকোনো সমস্যা হলে উপজেলা প্রশাসন পাশে থেকে সমাধান করেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, নিহতদের পরিবারগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তাদের পাশে আমরা সব সময় আছি এবং খোঁজখবর নিচ্ছি। আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করছি।