বাংলারজমিন
কুলাউড়ায় বালুকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় যুবলীগ নেতার স্ত্রীর চাঁদাবাজি মামলা
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবারমৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিএনপি’র নেতাকর্মীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি চাঁদাবাজির মামলা করেছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সেলিম আহমদ নামের এক যুবলীগ নেতার স্ত্রী। এ নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, হাজীপুর ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে অবাধে ১০ চাকার বালুবাহী ওভারলোড ডাম্প ট্রাক দিয়ে বালু পরিবহনের কারণে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় প্রতিবাদ করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এরপর ওইসকল স্থানে জমাটকৃত বালুর স্তূপ চিহ্নিত করে লাল নিশানা দিয়ে বালু জব্দ করে প্রশাসন। সাবেক ইজারাদার কুলাউড়ার পৃথিমপাশার দীপক দে ও বর্তমান ইজারাদার সেলিম আহমদের স্ত্রী নাজমুন নাহার গং পূর্বের জমাট করা প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট বালু থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট বালু অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, আদালত থেকে বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার গংয়ের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা আসায় এবং উপজেলা প্রশাসন প্রায় ২৭ কোটি টাকার বালু জব্দ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ী আব্দুল হাছিব গংকে হয়রানি করার জন্য যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদ তার স্ত্রীকে দিয়ে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। ১লা জুলাই কুলাউড়া থানায় দায়েরকৃত ওই মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগ উঠেছে বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহারের স্বামী সেলিম আহমদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সাবেক ইজারাদার দীপক দে হাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য ফরিদ মিয়াকে দিয়ে বালু লুটপাটে তৎপরতা চালাচ্ছেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করছেন ফরিদ মিয়ার ছেলে সানাজ, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রাসেল আহমদসহ একটি চক্র। তারা এলাকায় মব সৃষ্টি করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে, পৌরসভার লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল হাছিব, জয়পাশা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ফয়জুর রহমান লিটন, শিহাব উদ্দিন, পৃথিমপাশার পুরশাই এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কিবরিয়া হোসেন খোকন, রিজন মিয়া, টিলাগাঁওয়ের আমানীপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ময়না মিয়া, আশ্রয়গ্রামের বাসিন্দা ও টিলাগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুক্তাদির চৌধুরী আলিম, চক সালন গ্রামের বাসিন্দা জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গৌরাঙ্গ দে, হাজীপুর ইউনিয়নের কটারকোনা এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি, বিএনপি নেতা খসরু মিয়া ওরফে খসরু রোমান, ব্যবসায়ী আবু মিয়া, হাজীপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মসকন মিয়া, ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক, খালেদ মিয়া। মামলা দায়েরের পর বিএনপি নেতা মসকন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জেলহাজতে পাঠিয়েছে। অথচও তিনি বিগত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহারের স্বামী সেলিম আহমদ বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে হবিগঞ্জের মূর্তিমান আতঙ্ক পলাতক এমপি আবু জাহিরের ছত্রছায়ায় থেকে নানা অপকর্ম করেছেন। তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলাসহ একাধিক মামলা। ২০২৪ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর চুনারুঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা সেলিমসহ একাধিক আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চুনারুঘাট থানায় (নং-০৮) দায়ের করেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের সুন্দরপুর গ্রামে। তিনি সাটিয়াজুরী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। এদিকে, বালুমহালের দরপত্র বাতিল করে যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সম্প্রতি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহারমর্দন এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমদ। হাজীপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান রুমেন বলেন, আওয়ামী দোসর ও স্থানীয় দালালদের মিথ্যা ষড়যন্ত্র মামলায় নিরপরাধ বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশি ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরমধ্যে ত্যাগী বিএনপি নেতা মকছন্দ আলী জেল খাটছেন। তাদের অপরাধ জব্দ করা কয়েক কোটি টাকার বালু লুটকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। অথচ সরকারি বালু লুট করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে আওয়ামী দোসর দালালরা। কুলাউড়া উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বদরুজ্জামান সজল বলেন, বর্তমান সময়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়াই চাঁদাবাজির মামলা হওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বালুকাণ্ড নিয়ে স্থানীয় লোকদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন বালু জব্দ করলো আর বালু লুট ও পরিবহনে রাস্তাঘাটের ক্ষতি হওয়ায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করায় উল্টো তাদের মামলায় আসামি করা হলো সেটা খুবই দুঃখজনক। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বালুকাণ্ডের বিষয়টি সুরাহা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও তার স্ত্রী বালুমহালের ইজারাদার নাজমুন নাহারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম আপছার বলেন, বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া কীভাবে চাঁদাবাজির মামলা রুজু করা হল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এজাহারে অভিযুক্ত আসামিরা যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকেন তাহলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে।