বাংলারজমিন
৪৯ কোটি টাকার বাল্লা স্থলবন্দর এখন গো-চারণভূমি
চুনারুঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাল্লা স্থলবন্দর এখন গো-চারণভূমিতে রূপ নিয়েছে। বন্দরের অভ্যন্তরে বসবাসরত ১০-১৫টি পরিবারের লোকজন তাদের গরু-বাছুর ভবনের ভেতরে ও বাইরে বেঁধে রাখেন। ফলশ্রুতিতে ভবনের ভেতর-বাইর নোংরা আবর্জনায় ভরে উঠেছে। বন্দরের অভ্যন্তর ছেয়ে গেছে জঙ্গলে। স্থলবন্দর এলাকায় স্থাপিত হচ্ছে ছোট ছোট দোকান। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাল্লা স্থলবন্দরকে অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন আখ্যা দিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্থলবন্দরের কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করার সুপারিশ করা হয়। এরপর থেকে স্থলবন্দরটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এতে বন্দরের অবকাঠামোর সৌন্দর্য মলিন হয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে হবিগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত-বাংলাদেশ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের কেদারাকোট এলাকায় ১৩ একর জমির ওপর ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাল্লা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় বিগত আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরকার। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরজমিন পরিদর্শন করে নির্মাণকাজ শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
সরকার প্রাথমিকভাবে ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর ২০২১ সালের ৭ই অক্টোবর বন্দর নির্মাণকাজ শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, উভয় দেশে স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ সমানভাবে এগিয়ে গেলে ২০২৪ সালের মধ্যেই বন্দর চালু করা যাবে। কিন্তু বাল্লা স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা সরকার প্রহড়মুড়া এলাকায় স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ না করায় বন্দরের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় নানা মহলে। বর্তমান সরকার স্থলবন্দর কার্যকর, অকার্যকরের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির সুপারিশে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কমিটি নির্ধারিত স্থলবন্দরগুলোর সরজমিন পরিদর্শন করে। এরপর সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের কাছে কমিটির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ উপস্থাপন করে। সভায় নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের আমলে অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। যা রাষ্ট্রের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি। দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য যেটি মঙ্গলজনক হবে, সে সকল স্থলবন্দরগুলো সচল রাখা হবে। তবে, বাল্লা স্থলবন্দরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম না থাকা এবং রাষ্ট্রের জন্য লাভজনক না হওয়ায় এর কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করা হয়। ১৯৫১ সালে বাল্লা শুল্ক স্টেশন চালু হলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমিত পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু হয়। ২০১২ সালের ১১ই জুন দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রতিনিধিদল কেদারাকোট এলাকাটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ওই এলাকায় স্থলবন্দর করার ব্যাপারে উভয় পক্ষই একমত হন। এরপর বাংলাদেশ অংশে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। কিন্তু ভারত অংশে ছিটেফোঁটা কাজও হয়নি।