বাংলারজমিন
গাজীপুরে ভূমি অফিসে অনিয়ম দুর্নীতি ও ভোগান্তির অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবারগাজীপুরের ভূমি অফিসগুলোতে সেবা নিতে গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নামজারি, খাজনা প্রদান, জমির রেকর্ড সংশোধনসহ বিভিন্ন ভূমি বিষয়ক সেবা পেতে গিয়ে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। চাহিদামতো ঘুষের টাকা দিয়েও মাসের পর মাস ভূমি অফিসে ঘুরতে হচ্ছে সেবাপ্রার্থীদের। কিছু ক্ষেত্রে ভূমি অফিসে সেবার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দাবির অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, গাজীপুর জেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর অনিয়ম রয়ে গেছে আগের মতোই। টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না এখানে। সম্প্রতি সরজমিন জেলার শ্রীপুর, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মানুষের ভোগান্তির তথ্য পাওয়া গেছে। সেবাপ্রার্থীদের অনেকেই জানেন না সরকার নির্ধারিত ফি ও সিটিজেন চার্টারের খবর। এ কারণেই নিরীহ সাধারণ মানুষ ভূমি অফিসের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের যোগাসাজশের দালাল ও টাউটদের পাল্লায় পড়েছেন। একেকটা খারিজ ও নাম জারিতে শ্রেণিভেদে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩০-৪০ হাজার পর্যন্ত টাকা নেয়া হয়। এ ছাড়া বিবদমান এক পক্ষের টাকা নিয়ে অপরপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র উধাও করে দেয়া, সেবাপ্রার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ে সেবা না দেয়া, অযথা সময়ক্ষেপণ করাসহ নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ভূমি অফিসে পেলাইদ গ্রামের কৃষক শহীদুল ইসলাম তার জমির নামজারি (খারিজ) করতে ভূমি অফিসে গিয়ে ৮ হাজার টাকায় চুক্তি করেন। কিন্তু ছয় মাস ধরে ঘুরছেন ভূমি অফিসে। তার খারিজ বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। সার্ভার সমস্যাসহ নানা অজুহাত দেখানো হয়। এই অফিসে এসে ভোগান্তির শিকার হওয়া গোলাম মোহাম্মদ বলেন, পর্চা উঠানোর জন্য গাজীপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এই ভূমি অফিসে এসেছি। এসে দেখি ভূমি কর্মকর্তা অফিসে নেই। এই সেবা পেতে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে বারবার অনুরোধ করলেও তিনি অফিসের কক্ষে তালা লাগানো বলে জানিয়েছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে অপেক্ষারত পানজোরা গ্রামের রুহুল আমিন জানান, তার জমি খারিজ করতে ছয় মাস আগে কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করেছেন। সরকারি ফি ছাড়াও এজন্য তিনি ৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। সরকার নির্ধারিত ফি’তে কাজ করতে গেলে কাজ হবে না বলেই তিনি অতিরিক্ত টাকা দিয়েছেন। ওই অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সোলায়মান সরকার বলেন, কাগজপত্র সঠিক থাকলে তার অফিসে কোনো টাকা পয়সা লাগে না। অফিসে কোনো দালাল নেই। এদিকে একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। অফিসের সামনে অপেক্ষারত নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম জানান, জমি খারিজ করতে তিন মাস আগে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত খারিজ দেয়া হচ্ছে না। আজ আসতে বলেছে, দেখি কী হয়। অপর একজন নিজের নাম পরিচয় জানাতে অস্বীকার করে বলেন, এই অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। মানুষ নিরুপায়, তাদের টাকা দিতেই হবে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি বা তার অফিসের কেউ সেবা দিতে কোনো ধরনের অর্থ গ্রহণ করেন না। এখন অনলাইনে সব ধরনের লেনদেন হয়। এ বিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, বিদ্যমান ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ করে গাজীপুরের অবস্থা জটিল। এজন্য মানুষ এখনো সেবাপ্রাপ্তির জন্য তৃতীয় পক্ষের দ্বারস্থ হন এবং হয়রানির শিকার হন। আমরা যখন যে অভিযোগ পাচ্ছি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।