ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

লক্ষ্মীপুরে ভ্যাটের কোটি কোটি টাকা কর্মকর্তাদের পেটে

মো. ইউসুফ, লক্ষ্মীপুর থেকে
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার

লক্ষ্মীপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ভ্যাট দাতাদের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি কোটি কোটি টাকা হাওয়া করে দিচ্ছে। বিনিময়ে নিচ্ছে ভ্যাট দাতাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ! হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পকারখানা মালিকদের কাছ থেকে আদায় করা ভ্যাটের হাজার হাজার টাকা মিলেমিশে লোপাট করা হচ্ছে। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো মাসিক চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাট কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে নামমাত্র ভ্যাট প্রদান করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, লক্ষ্মীপুর হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র। কিন্তু কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপনার কারণে রাষ্ট্রের নামে জনগণের কাছ থেকে আহরিত রাজস্ব সঠিকভাবে কোষাগারে যায় না। কিন্তু ভাগবাটোয়ারায় রাজস্ব লুণ্ঠনে গাড়ি বাড়ির মালিক হচ্ছে কেউ কেউ। এসব বিষয় সচরাচর সবাই এড়িয়ে যায় বলে ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। ভুক্তভোগীরা বলেন, উক্ত অফিসে কর্মরত কর্তাদের হুমকি-ধমকির কারণে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা যা বলেন তা জি স্যার বা হুজুর বলে যাচ্ছি। তাদের কথার দ্বিমত পোষণ করলে বিভিন্ন ধরনের হয়রানিসহ প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্ট, পিসি জব্দ করে নিয়ে এসে লাখ লাখ টাকায় তাদের সঙ্গে দফারফা করে ছাড়িয়ে আনতে হয়। আমরা আছি এক মহাযন্ত্রণায়। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও দুদকের হস্তক্ষেপের ফলে। তখন ব্যবসায়ীরা তাদের মতো সিন্ডিকেট ঘুষখোরদের লাঞ্ছনা ও বঞ্চনা থেকে রেহাই পাবে। তারা ভ্যাট কর্মকর্তাদের মাসিক রেটে নির্দিষ্ট ভ্যাট পরিশোধ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কর্মকর্তা হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে মাসিক অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। ভ্যাট ফাঁকি দিতে রাজস্ব কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিক্রির একাধিক রেজিস্টার রাখা হয়। একটি ভ্যাট অফিসের জন্য, অন্যটি মালিকপক্ষের জন্য। এতে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের প্রিভেন্টিভ টিম সিন্ডিকেট করে কিছু অসৎ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে সরকারের রাজস্বকে গিলে খাওয়ার জন্য অবৈধভাবে অধিক পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে- স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ওষুধের দোকান, পার্সের দোকান, শপিংমলের কাপড়ের দোকান,  হাসপাতাল, প্যাথলজি, ফার্মেসি, জুয়েলারি, আবাসিক হোটেলসহ জেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিকদের সঙ্গে মিলেমিশে ভ্যাট ফাঁকি ও লোপাটের ঘটনা ঘটছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ী তাদের কাছ থেকে মিলেমিশে খাচ্ছে। ভ্যাট কর্মকর্তাদের চরম দুর্নীতির কারণে অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে মাসোহারা নিয়ে তাদের ভ্যাট নিবন্ধন ব্যতিরেকে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে চলছে। একই অবস্থা চলছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ দু’তিন মাস পরপর নামমাত্র ভ্যাট প্রদান করে থাকেন। তাদের ভ্যাট প্রদান মাত্র ১ থেকে ৫ হাজার টাকা। তাও সরকারের নিয়ম বহির্ভূত।
এসব রেস্টুরেন্ট থেকে মাসোহারা নিয়ে প্রতিমাসে ভ্যাট প্রদানে বাধ্য করে না। বলতে গেলে তাদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ব্যবসায়ীরা। সরজমিন দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো মূসক পরিশোধ করছে না। কোনো হোটেলই অতিথিদের এন্ট্রি রেজিস্টার মেনটেইন করে না। কোনো হোটেলে রুম ভাড়ার তালিকা নেই। এ ছাড়া রেস্টুরেন্টগুলো মূসক ফরম ব্যবহার করে না। রাজস্ব কর্মকর্তারা হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো থেকে মাসিক অবৈধ সুবিধা মাসোহারা গ্রহণ করে থাকেন মর্মে স্থানীয়ভাবে জানা যায়। আরও দেখা যায়, ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার সুবিধার্থে প্রায় হোটেল দু’টি রেজিস্টার মেনটেইন করে থাকে। আসল রেজিস্টারে ভ্যাট কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততায় প্রকৃত আয় প্রদর্শন না করে সংরক্ষণ করা হয়। আরেকটি হাইড রেজিস্টারে ম্যানেজমেন্টের জন্য নির্ধারিত থাকে। লক্ষ্মীপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগীয় কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বসু মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ফোন নম্বর চাইলে ইন্সপেক্টর সুব্রত কুমার শীল সাংবাদিকে রাগান্বিত হয়ে বলেন বসের নিষেধ আছে কাউকে নম্বর না দেয়ার জন্য। পরে একটি টিএনটি নম্বর দিলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। সদর সার্কেল সুপার- মাসউদ রানার নম্বর  চাইলে হুমকির সুরে কথা বলেন।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

দেনমোহর কমাতে অভিনব কৌশল/ তালাকের পর আবার বিয়ে, কিছুই জানে না গৃহবধূ

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status