অনলাইন
মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে মানববন্ধন
সিভাসু’র হল থেকে ৪ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
(১১ মাস আগে) ১৬ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:৩৮ অপরাহ্ন

ভারতের সরকারি দল বিজেপি’র মুখপাত্রের মহানবী (সা.)কে এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর বক্তব্য রাখার প্রতিবাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও চলছে বিক্ষোভ। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও জানাচ্ছেন প্রতিবাদ। মাদ্রাসা-কলেজের পাশাপাশি দেশের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হয়েছে নানা কর্মসূচি। চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) শিক্ষার্থীরাও করেছিলেন মানববন্ধন। তবে সেই কর্মসূচির কারণে এখানকার চার শিক্ষার্থীকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ও প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। আবার আগের দিন এদেরই একজনকে ছাত্রলীগ পরিচয়ের কয়েকজন মিলে হলের রুমে ঢুকিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) এক অফিস নোটিশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিকেল অনুষদের ডিভিএম-এর ২৪তম ব্যাচের চার শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত এই চার শিক্ষার্থী হলেন- ২৪তম ব্যাচের বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ সাজ্জাদ, মোমিন বিন রহিম, তসলিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ তানভীরুল ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মীর্জা ফারুক ইমাম স্বাক্ষরিত সেই অফিস নোটিশে বলা হয়, উল্লেখিত শিক্ষার্থীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কটূক্তি, ধর্মীয় উস্কানিমূলক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতন্ত্র পরিপন্থি বিবৃতি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাদেরকে সিভাসুর আইন মোতাবেক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এ. হান্নান হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।
জানা যায়, হল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এই শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। বিভাগের সেমিস্টার পরীক্ষা চলাকালীন সময়েই হল থেকে বের করে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এই শিক্ষার্থীরা। আর প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নিলেও শুধুমাত্র এই চারজনকে শাস্তি প্রদান করায় অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীরাও প্রকাশ করছেন ক্ষোভ।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বহিষ্কৃত এক শিক্ষার্থী বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে গত রবিবার দুপুরে আমরা ক্যাম্পাসের গেইটে মানববন্ধন করেছিলাম। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতিও ছিলো।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, এরা কোন ধরনের শোকজ ছাড়াই আমাদেরকে হল থেকে বহিষ্কার করেছে। বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এরমধ্যে বহিষ্কার হওয়া বোরহানকে শিবির ব্লেইম দিয়ে সোমবার রাতে মারধর করা হয়েছে। এখানকার ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী ১৬ তম ব্যাচের সাব্বিরের নির্দেশে অনিক চক্রবর্তী, শান্ত রাজসহ কয়েকজন মিলে তাকে তাকে খুব মারধর করে। অথচ বোরহানসহ আমরা সবাই ছাত্রলীগ করতাম। তবে সাব্বিরের গ্রুপে কাজ না করায় সে সুযোগ পেয়ে বোরহানকে বেধড়ক পিটিয়েছে। সে তার সাথে না থাকলেই যে কাউকেই হয়রানি করে। শিবির ট্যাগ লাগিয়ে মারধর করে। এইরকম একটা ঘটনায় সে ২০১৮ সালেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল। অনেক আগে থেকেই ক্যাম্পাসে তার ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। সাব্বিরের মতো বোরহানকে মারধর করাদের মধ্যে শান্তরাজেরও ছাত্রত্ব নেই।’
জানা যায়, শিক্ষার্থী বোরহানকে পেটানোর নির্দেশ দেয়ায় অভিযুক্ত সাব্বির হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ২০১০- ১১ সেশনের শিক্ষার্থী। সেই হিসেবে পাঁচ বছর আগেই তার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন তিনি।
এদিকে রাসূলের অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন করায় চার শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে ভেটেরিনারি এন্ড ও এ্যনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাসনিম ইমাম মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি ঠিক সে কারণেই করা হয়নি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। তাই তাদেরকে আবাসিক হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর বাকি বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষই ভালো জানবেন।