অনলাইন
দার্শনিক পর্যালোচনা
গণহত্যাকারীর জন্য গণতন্ত্র নয়
শহীদুল্লাহ ফরায়জী
(২০ ঘন্টা আগে) ১১ মে ২০২৫, রবিবার, ১২:২১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:০৬ অপরাহ্ন

যারা গণতন্ত্রে আস্থাশীল নয়, কিন্তু রাষ্ট্র-ক্ষমতাকে রক্তপাত এবং প্রতারণার মাধ্যমে করায়ত্ব করতে চায়, এমনকি গণহত্যাকেও বৈধতা দিতে চায়— গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে তাদের নিয়ে একটি দার্শনিক পর্যালোচনা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত জরুরি।
যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, গণহত্যাকে নিছক ‘রাষ্ট্র পরিচালনার উপায়’ ভাবে, তাদের প্রতি সহনশীলতা দেখানো মানে গণতন্ত্রের আত্মহত্যা। হত্যার শিকার এবং হত্যাকারী সমান পরিসর পেতে পারে না। সশস্ত্র খুনির সাথে নিরস্ত্র শান্তিপ্রিয় জনগণের প্রতিযোগিতার নাম—গণতন্ত্র হতে পারে না। গণতন্ত্র শুধুই সাংবিধানিক একটি ব্যবস্থা নয়, বরং এটি চর্চা-প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি একটি লড়াই।
যেশক্তি জনগণের সম্মতি ব্যতীত রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবৈধ কাজে ব্যবহার করে, বল প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্র-ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বৈরাচারী নীতিতে বিশ্বাসী এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন, সংগ্রাম ও লড়াইকে নির্বিচারে হত্যার বৈধতা উৎপাদনের অপচেষ্টায় অন্তপ্রাণ, সেশক্তিকে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদান করা বা প্রশ্রয় দেওয়া—যৌক্তিক কি না তা দর্শনের নিরিখে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এটি একটি গভীর রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রশ্ন। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নকে দর্শনের আলোকে বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়। যথা:—
মুক্তচিন্তা ও গণতন্ত্রের প্রবল সমর্থক, নাৎসিবাদবিরোধী নৈতিক দার্শনিক কার্ল পপারের “Paradox of Tolerance” (সহনশীলতার বিপর্যয়)-এ বলা হয়েছে— "Unlimited tolerance must lead to the disappearance of tolerance. If we extend unlimited tolerance even to those who are intolerant... then the tolerant will be destroyed, and tolerance with them." ( অসীম সহনশীলতা অবশেষে সহনশীলতারই বিলুপ্তি ডেকে আনে। যদি আমরা অসহিষ্ণুদের প্রতিও অসীম সহনশীলতা দেখাই... তবে এক সময় সহিষ্ণুরাই ধ্বংস হবে, আর তাদের সঙ্গে সহনশীলতাও বিলুপ্ত হবে।) পপার সুস্পষ্টভাবে বলেছেন—যারা সহনশীলতার বিরোধিতা করে, তাদের প্রতি যদি সহনশীলতা দেখানো হয়, তবে তারাই একসময় সহনশীল সমাজ ধ্বংস করে ফেলবে। সুতরাং, যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায় বা গণহত্যাকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করাও ‘গণতন্ত্র’ ধ্বংস করার সামিল।
গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিমালা প্রয়োগে কার্ল পপার এক আদর্শ, উদারনৈতিক দার্শনিক। যিনি বিশ্বাস করতেন রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব নয়, বরং ব্যক্তির স্বাধীনতা ও সমালোচনার স্বাধীনতাই গণতন্ত্রের মূলভিত্তি। তার মতে—মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেবল ‘মত’ প্রকাশের নয়, বরং কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করার অধিকার—এটাই গণতন্ত্রের প্রাণ। তাই অগণতান্ত্রিক, অসহিষ্ণু ও ফ্যাসিবাদী অপশক্তিকে অধিকার বা আস্কারা কিংবা প্রশ্রয় দিলে আলোচনার স্পেস ধ্বংস করে ফেলবে। এটা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য হবে চরম বিপজ্জনক।
যুক্তিনিষ্ঠ (Rationalist) পপার বলতেন— কোনো তত্ত্ব বা রাজনীতি যদি যাচাইযোগ্য না হয়—তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। গণতন্ত্রে বিশ্বাস না করা শক্তিকে ভোটের অধিকার দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়, কারণ তারা নিজেরাই গণতন্ত্রের যৌক্তিক কাঠামো মানে না। যে-অবিশ্বাসী শক্তি গণতন্ত্রের দর্শন এবং যৌক্তিক কাঠামোর উপর আস্থাশীল বা প্রতিশ্রুত নয় এবং যে-শক্তি গণহত্যার জন্য অনুতপ্ত নয় বরং আরো ব্যাপক গণহত্যা সংঘঠিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাকে গণতন্ত্রের কাঠামোতে বসবাস করতে দিলে, প্রতি মুহূর্তেই সে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করবে এবং আরো নজিরবিহীন হত্যার বৈধ লাইসেন্স প্রাপ্ত হবে। স্বৈরতান্ত্রিক ও গণহত্যাকারী শক্তির রাজনৈতিক আচরণ, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ বদলায় না। এই না বদলানোর আত্মঘাতী প্রবণতা তাদের ভেতরের ন্যায্যতাকে উচ্ছেদ করে দেয় এবং পরিশেষে শুভ চিন্তার সামর্থ্য বিনষ্ট করে ফেলে।
পপার ছিলেন এক অকুতোভয় ফ্যাসিবাদবিরোধী দার্শনিক। তিনি বলেছেন—"স্বৈরাচার কখনোই বিতর্কে পরাজিত হয় না বরং সে বিতর্ক নিষিদ্ধ করে।" তাই ফ্যাসিস্ট শক্তিকে গণতান্ত্রিক সুবিধা প্রদান করা মানে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তিনি আরো বলেছেন—We should therefore claim, in the name of tolerance, the right not to tolerate the intolerant. (সহনশীলতার স্বার্থেই অসহিষ্ণুতার প্রতি অসহিষ্ণু হওয়ার অধিকার আমাদের থাকা উচিত।) এটি কোনও প্রতিহিংসা নয় বরং ন্যায়, মানবিক মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক মুক্তির পক্ষে দাঁড়ানোর এক প্রয়োজনীয় নৈতিক অবস্থান। গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে, গণতন্ত্র-বিধ্বংসী শক্তিকে গণতান্ত্রিকব্যবস্থার সুবিধা দেওয়া—একধরনের আত্মঘাতী মূর্খতা।
The Open Society and Its Enemies-এ পপার বলেছেন—“The open society is one in which men have learned to be to some extent critical of taboos and to base decisions on the authority of their own intelligence.” (খোলা সমাজ’ মানেই এমন একটি কাঠামো যেখানে কুসংস্কার, ধর্মীয় বা আদর্শিক বদ্ধমূলতা প্রশ্নযোগ্য এবং মানুষের নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা উৎসাহিত হয়।)
যে-অপশক্তি সহনশীল সমাজের ভিত কাঁপিয়ে তোলে, সেই শক্তি মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বুদ্ধির অপমান করে। এদের প্রতি সহনশীলতা মানেই মুক্ত সমাজের পরাজয়।
“Those who promise us paradise on earth never produced anything but a hell.” এটি মূলত উগ্র মতাদর্শের বিরুদ্ধে পপারের এক কড়া মন্তব্য। তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন—ফ্যাসিস্ট বা অন্ধ মতাদর্শাগত গোষ্ঠী, যারা প্রলোভন বা স্বপ্নের নামে গণতন্ত্র ধ্বংস করে তারা স্বর্গ নয়; নরকই তৈরি করে।
পপার আরও বলেন—“True ignorance is not the absence of knowledge, but the refusal to acquire it.” (অন্ধ মতবাদ ও একনায়কতন্ত্র জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ ধ্বংস করে এবং এই অজ্ঞতা ইচ্ছাকৃত ও বিপজ্জনক।)
গণতন্ত্রবিরোধীশক্তি—শিক্ষা, যুক্তি ও বিতর্কের শত্রু। তারা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তোলে যেখানে জ্ঞানের পরিবর্তে স্লোগান চলে, যুক্তির পরিবর্তে হিংস্রতা।
যদি আমরা সবকিছুতেই সহনশীল হই, অসহিষ্ণুতার প্রতিও—তাহলে অসহিষ্ণু শক্তিগুলো এই সুযোগ ব্যবহার করে সমাজকে সহনশীলতা থেকে বঞ্চিত করে ফেলে। এই দর্শনের মূল বার্তা হলো—
সহিষ্ণু সমাজে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। তা মানে এই নয় যে, সব ভিন্নমত দমন করতে হবে, বরং যারা মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে সহিংসতা বা ঘৃণার মাধ্যমে সমাজকে দমন করতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
জন রলস বলেছেন—ন্যায়বিচার একটি সমাজের মৌলিক কাঠামোর শর্ত। যারা এই ন্যায়বিচারের কাঠামোকে ধ্বংস করে (যেমন গণহত্যা ঘটায়) তারা ন্যায়বিচারের জন্য বিপজ্জনক। গণতন্ত্র এমন এক ন্যায়নীতি যেখানে ন্যায়ের শত্রুকে ন্যায়ের সুযোগ দেওয়া আত্মঘাতী।
জন স্টুয়ার্ট মিল (On Liberty, J.S. Mill) “Harm Principle”-এ বলেছেন—মানুষের স্বাধীনতা সীমিত করা যেতে পারে যদি সে অন্যের ক্ষতি করে। গণহত্যাকারীরা যেহেতু প্রত্যক্ষভাবে জনগণের ক্ষতি করে, তাদের ‘স্বাধীনতা’ বা ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ রক্ষার যুক্তি টেকে না।
হান্না আরেন্ডট (Hannah Arendt) ছিলেন ২০শ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক দার্শনিক। নাৎসি জার্মানির অভিজ্ঞতা, স্বৈরতন্ত্রের স্বরূপ ও আধুনিক নৈতিকতা নিয়ে তার চিন্তা আজও গভীরভাবে আলোচিত। বিশেষভাবে “Banality of Evil” (অর্থাৎ, ‘মন্দের সাধারণীকরণ’ বা ‘মন্দের গতানুগতিকতা’)-এ বলেছেন, “The sad truth is that most evil is done by people who never make up their minds to be good or evil.” (মন্দ কাজগুলো অনেক সময় দানবসুলভ নরপিশাচরা করেন না; বরং করেন সাধারণ মানুষ যারা চিন্তা না করে কেবল নিয়ম মানেন। এদের নৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা এবং আত্মসমালোচনার অভাবই তাদের দিয়ে ভয়াবহ অপরাধ করায়।) আমরা দেখেছি ক্ষমতালোভী গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্র ক্ষমতার উন্মাদনায় কতোটা নির্বিচারে গণহত্যার মতো অপরাধে অংশ নিতে পারে।
হান্না আরেন্ডট আরও বলেছেন—'ইতিহাসে বহুবার ‘স্বাধীনতা ও সহনশীলতা’র নামে ফ্যাসিবাদ মাথা তুলেছে, ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কারণ, সমাজ যথাসময়ে সতর্ক হয়নি।
জ্যাঁ-পল সার্ত্র (Jean-Paul Sartre) ছিলেন একজন অস্তিত্ববাদী দার্শনিক (Existentialist philosopher)। তিনি বলেছেন—''ব্যক্তি তার কর্মের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্বের অর্থ নির্মাণ করে। যারা ক্ষমতার লোভে গণহত্যা করে, তারা নিজেদেরকে একধরনের 'অমানবিক অস্তিত্ব' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। তাদের পক্ষে গণতান্ত্রিক অধিকার দাবি করা অস্তিত্ববাদের আলোকে আত্মপরিহাস।''
জুডিথ পামেলা বাটলার, যিনি একজন প্রভাবশালী আমেরিকান দার্শনিক, তাঁর “Precarious Life” তত্ত্বে বলেছেন— "Some lives are grievable, and others are not."
যখন ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী অন্যদের জীবনকে মূল্যহীন মনে করে এবং হত্যা করে, তখন রাষ্ট্র বা সমাজ সেই হত্যাকারী ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতি দেখালে তা মানবিক ও নৈতিক বিচারে অনৈতিক। কারণ, গণতন্ত্র তখন হুমকির মুখে পড়ে।
নাৎসি ভাবাদর্শের প্রচার কি বাক-স্বাধীনতা? নাকি সহনশীলতার প্রতি হুমকি? যে-গোষ্ঠী বাক-স্বাধীনতা ব্যবহার করে অন্যদের মুখ বন্ধ করে দিতে চায়, তাদের কি স্বাধীনতা দেয়া উচিৎ?
এই প্রশ্নটি শুধু আইনগত নয়, এটি গভীরভাবে নৈতিক, রাজনৈতিক এবং দার্শনিক।
একজন গণহত্যাকারী বা গণতন্ত্রবিরোধী যদি একই গণতন্ত্রের আশ্রয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারে মঞ্চ পায়, তাহলে তা গণতন্ত্রের আত্মঘাতী উদারতা হয়ে দাঁড়ায়। গণতন্ত্রকে টিকে থাকতে হলে তাকে অর্থাৎ গণতন্ত্রকে নিজের অস্তিত্ব-সঙ্কট চিহ্নিত করতে হয়।
John Rawls তাঁর ‘Theory of Justice’-এ বলেন—'ন্যায়বিচার এমন এক ব্যবস্থা, যা ব্যক্তির ন্যূনতম অধিকার রক্ষা করে।' “even for those who have committed grave wrongs.” (অপরাধী হলেও একজন ব্যক্তি যাতে আইনের চোখে বিচার পায়, সেটাই আইনের শাসনের মৌল ভিত্তি।)
Hannah Arendt, নাৎসি কর্মকর্তা Eichmann-এর বিচার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন—'ন্যায়বিচার মানে প্রতিশোধ নয়, বরং অপরাধী যেন শাস্তির উপযুক্ত প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায়, সেটাই সভ্যতার শর্ত।' তাঁর দৃষ্টিতে, ন্যায়বিচারের প্রকৃত রূপ প্রকাশ পায় তখনই, যখন অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
মানবাধিকার বনাম গণতন্ত্রকে নিজের আত্মরক্ষা করতে হয়। মানবাধিকারের মৌল ভিত্তি হল—প্রত্যেক মানুষের জীবনের অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার এবং রাষ্ট্রের আইনি নিরাপত্তা। কিন্তু সেই মানবাধিকার যদি এমন কাউকে আশ্রয় দেয়—যে, গণতন্ত্র ও মানবতার শত্রু, তখন রাষ্ট্রের দায় পড়ে নিজেকে রক্ষা করার।
উদাহরণস্বরূপ, জার্মান সংবিধান ঘোষণা করে—“The enemies of the constitution shall not be allowed to use the constitution to destroy it.”
এই নীতির কারণে নাৎসি মতাদর্শ, হিটলারপন্থী রাজনীতি, এমনকি তাদের প্রতীকও সেখানে নিষিদ্ধ।
দেশে-দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং তাদের রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণ, গণতন্ত্রের আত্মরক্ষামূলক নৈতিক অবস্থানেরই প্রতিফলন। একজন গণহত্যাকারী অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবে—গণতন্ত্রের নৈতিক উচ্চতর অবস্থান থেকে। কিন্তু সে গণতন্ত্রের সুবিধাভোগ করতে পারবে না, এই সিদ্ধান্ত নিতে হয় গণতন্ত্রকে রক্ষার দায় থেকেই।
গণহত্যাকারীর মুখে গণতন্ত্র এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা উচ্চারিত হলে গণতন্ত্র মর্যাদা হারায়। গণতন্ত্র একজন গণহত্যাকারীর ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার দিতে পারে কিন্তু রাজনৈতিক পরিসর দিতে পারে না—এই নৈতিক দ্বৈত অবস্থানই গণতন্ত্রকে মহৎ করে তোলে।
গণতন্ত্র শুধু নিয়মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি সামগ্রিক আনুগত্যেরও বিষয়।
দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্ট যে—গণহত্যাকারী ও স্বৈরাচারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার চেষ্টা মূলত গণতন্ত্রেরই আত্মঘাত। সহনশীলতা ও অধিকারের ন্যায়তত্ত্ব যখন গণতন্ত্র ধ্বংসকারী শক্তিকে রক্ষা করতে যায়, তখন তা নিজেদের অস্তিত্বের ভিত্তিকেই চূর্ণ করে ফেলে।
‘গণহত্যাকারীর জন্য গণতন্ত্র নয়’—এটা শুধুই প্রতিশোধপরায়ণ বা আবেগনির্ভর বয়ান নয়, বরং এটিই গণতন্ত্রের আত্মরক্ষার দার্শনিক অবস্থান।

লেখক: গীতিকবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]
পাঠকের মতামত
৭১ এ গনহত্যার দায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। শুধু জামায়াত নয় যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিলো মুসলিমলীগ সহ সব ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ ছিলো এটা করেছিলো ৭২ এর সংবিধানের ভিত্তিতে আমি যতদূর জানি। বঙ্গবন্ধু একটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন আর যারা সরাসরি মানবতা বিরোধী হত্যা, ধর্ষন, বাড়ীঘর, সম্পদ ধ্বংসের অপরাধে অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন কিন্ত ৭৫ এ পট পরিবর্তনের পর পরই বিচার কাজ বন্ধ হয়ে। মেজর জিয়া জামায়াত সহ সব ইসলামী দলগুলোর রাজনীতি উন্মুক্ত করে দেন এবং গোলাম আজমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে নাগরীকত্ব প্রদান করেন। তারপরের ঘটনা সবারই জানা।
দেশে নতুন নতুন বুদ্ধিজীবীর আগমন ঘটছে , তারা স্বাধীনতা বিরোধী এবং ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যার জন্য দায়ীরা এদেশে রাজনীতি করতে পারবে না এ কথা বলেন নৈ কেন ?
চমৎকার এবং অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও যুক্তি গ্রাহ্য লেখা! যার ডিএনএ-তে গণতন্ত্র নেই অথচ গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করে গণতন্ত্রকে দানবীয় কায়দায় হত্যা করে, পুনরায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাদেরকে স্পেস দেয়ার অর্থ হচ্ছে ণতন্ত্রকে চিরতরে হত্যা করা!
গনতন্ত্রে ন্যায়বোধ একটা অপরিহার্য উপাদান। যখন পতিত স্বৈরাচার 'স্বীয় পিতার কণ্যা' উপস্থাপন করে অন্য সব দলকে তার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে ন্যায় বিচার ও সমঅধীকার প্রাপ্ত হয়ে প্রতিযোগিতায় থাকতে পারার নিশ্চয়তা দিয়ে রাতে নিজের দলের পক্ষে ব্যালট কেটে নেয় তার জন্য আসন্ন সকল নির্বাচন by default নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
তাহলে ৭১ এ গনহত্যার দায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা আওয়ামী লীগের সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল?
eye opening and awesome write up! thank you.
necessary articles for now a days
অসাধারণ হেড নিউজ। গণতন্ত্র হত্যাকারীর জন্য গণতন্ত্র প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়ে বিএনপির হাই কমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
Splendid..no doubt..who is he to listen them..May Allah Bless Them...everyone want peace but someone never..that's the problem since long..