অনলাইন
যেভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো
স্টাফ রিপোর্টার
(১৯ ঘন্টা আগে) ১১ মে ২০২৫, রবিবার, ১:৪৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১১ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় দলটি। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে দলটির নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্যক্রম নিষিদ্ধ থাকার কথা বলা হয়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ টানা ১৬ বছরে শাসনামলে দলটির বিরুদ্ধে গুম, খুন আর লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। ক্ষমতায় থাকতে বিনা ভোট, রাতের ভোটের নির্বাচন করে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠেন শেখ হাসিনা।
তার শাসনামলে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতন আন্দোলনে। এরই প্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই মূলত ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যার অপরাধে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়। গত বছরের ২৩ অক্টোবর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত করতে ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালও গঠন করা হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থান ঘিরে ১২ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচারে গুলির একাধিক বড় অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এবং অবৈধভাবে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বা পঙ্গু করার সঙ্গে জড়িত ছিল, এর মধ্যে এমন ঘটনাও ছিল যেখানে একদম সামনে থেকে গুলি করা হয়েছিল।
এদিকে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী সারা দেশে ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৩২৪টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময় দলটির নিষিদ্ধের দাবি উঠলেও তা সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার প্রেক্ষিতে তীব্রতর হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা মো. আবদুল হামিদ গত বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে যান। জুলাই অভ্যুত্থানে হামলা ও গুলির অভিযোগে কিশোরগঞ্জে আবদুল হামিদের নামে মামলা করা হয়। তার নামে মামলা থাকলেও কীভাবে দেশ ছাড়েন সেই প্রশ্ন তোলেন জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র নেতারা। তার দেশত্যাগ নিয়েও চারদিকে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
এরপর বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এদিন রাত ১০টা থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ’র ডাকে সাড়া দিয়ে যমুনার সামনে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। পরে রাত ১টার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে যান এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে পাঁচটি পিকআপ ভ্যান একত্র করে সমাবেশের জন্য যমুনার পাশে ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পাশের ফোয়ারার সামনে ‘জমায়েত মঞ্চ’ করা তৈরি করা হয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত এই জমায়েতে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বানও জানান এনসিপি। পরদিন শনিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত শুরু হয়। ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন বেলা ৩টার পর এ কর্মসূচি শুরু হয়।
কর্মসূচিতে ইসলামী ছাত্রশিবির, প্ল্যাটফর্ম ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশসহ (আপ বাংলাদেশ) বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে তিন দিন ধরে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে ওইদিন রাতেই জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়। যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে দলটির যাত্রা শুরু হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৫ সালে দলটির নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও দলটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সে সময়কার কর্মকাণ্ডের জন্য ’৭১-এর ২৬শে মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও স্বাধীনতা পরবর্তী নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হয় দলটি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার।
পাঠকের মতামত
A hilarious decision has come in enforce, the aspiring desire of 180 million and peace-loving nationals. This will have a new era of history and will perish the atrocity of power.
"গোলাম আজমের বাংলায় আওয়ামীলীগের ঠাই নাই " ??? "গোলাম আজমকে জাতির পিতা ঘোষণা না করা পর্যন্ত কোন নির্বাচন হবে না" ???
আওয়ামী লীগতো নিষিদ্ধ হলো, তাদের দোসর জাসদ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কাস পার্টি, সাম্যবাদী ইত্যাদি দলগুলার ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত???
বর্তমান সরকার একটি ভাল সিদ্ধান্ত নিল।ধন্যবাদ ।
Good news all Bangladesh happy
not bad