ঢাকা, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

জাবি প্রো-ভিসি’র দৌড়ে ‘যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত’ শিক্ষক

জাবি প্রতিনিধি
৫ জুন ২০২৩, সোমবার
mzamin

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) দপ্তরে গত এক বছরের অধিক সময় দায়িত্বশীল ব্যক্তি নেই। সংশ্লিষ্টদের দাবি, শিক্ষক রাজনীতির জটিল সমীকরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেরিতে নাম সুপারিশ করেছে ভিসি অধ্যাপক নূরুল আলম। তবে সেই চিঠিতে ‘ঝামেলা’ থাকায় নতুন করে আরেকটি ফাইল প্রস্তুত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। এই ফাইলে একজন যৌন নিপীড়ক শিক্ষকের নাম থাকায় বিস্ময় ও তাজ্জব বনে গেছে ক্যাম্পাসের অংশীজনরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস জানায়, গত বছরের ১৭ই এপ্রিল থেকে তৎকালীন প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলম ভিসি’র দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে এক বছরের অধিক সময় ধরে প্রো-ভিসি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, সিনেট, একাডেমিক কাউন্সিলসহ গুরুত্বপূর্ণ সভাসমূহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রো-ভিসি এই পদে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি ও অধ্যাপক বশির আহমেদের সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি’র বিরুদ্ধে রয়েছে যৌন নিপীড়নসহ নানা অভিযোগ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ই এপ্রিল কাফি নিজ বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে এক নারী শিক্ষিকা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় ক্যম্পাসে আলোড়ন তৈরি হয়। পরে ঘটনার সত্যতা পেয়ে কাফির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

বিভাগের সভাপতি পদে নিষেধাজ্ঞাসহ তাকে সহযোগী পদ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদাবনতি করেন। ওই ঘটনায় ভুক্তোভোগীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রগতিশীল ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড. কাফি প্রায় এক বছর ধরে বিভাগের এক অস্থায়ী শিক্ষিকাকে হয়রানি করতেন। অন্যদিকে, ১৯৯৬ সালে কাফী ইতিহাস বিভাগের এমফিল পর্যায়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় সাভারের একজন প্রকৌশলীর স্ত্রীকে যৌন হয়রানি করেন। শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রত্ততত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষক আপত্তি জানালে ওই শিক্ষকেরই নাম ব্যবহার করে ওই নারীকে যৌন নিপীড়ন করে কাফি। পরে ওই নারীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করলে উঠে আসে কাফির নাম। পরে ভুক্তভোগী নারী অধ্যপক আব্দুল্লাহ হেল কাফিকে শনাক্ত করে বিচার দাবি করেন। অন্যদিকে, ২০০০ সালের ২৫শে জানুয়ারী নিজ এলাকা টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যৌন নিপীড়ন, ডাকাতি, সন্ত্রাসের অভিযোগে এলাকাবাসীর পক্ষে মামলা দায়ের করেন আয়নাল হক নামের এক ব্যক্তি। যার মামলা নং-১৭। পরে একই বছর ৬ই মার্চ কাফীকে প্রধান আসামি করে পুলিশ মামলার চার্জশিট দাখিল করে। এ ছাড়া শিক্ষক হওয়ার পরে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে একাধিক জমি দখলের অভিযোগ আছে কাফির বিরুদ্ধে। সাভার আশুলিয়া এলাকায় বিভিন্ন জায়গা-জমি দখল করছে বলে ২০১০ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতারাই স্বীকারোক্তি দিয়েছিল দৈনিক মানবজমিনের কাছে। এদিকে ছাত্রদের নতুন ২২নং হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব পেয়েছেন এই শিক্ষক। এর আগে তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট ছিলেন। এই সুবাদে তিনি প্রভোস্ট কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। কথিত আছে নতুন হলের নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তিনি প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি পদ ছেড়ে নতুন হলের দায়িত্ব নিয়েছেন। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালেয়র আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একাংশ বলেন, ‘বর্তমান ভিসি দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই এই বিতর্কিত ব্যক্তির পদায়ন করে চলেছেন। 

অধ্যাপক নূরুলকে আমরা সজ্জন হিসেবে জানলেও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও অনিয়মকারী শিক্ষকদের দুষ্টু বলয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছেন। সার্বিক বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘যাদের নাম প্রস্তাব করেছি তা নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত গোপন রাখবো। এর অতিরিক্ত মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’ এদিকে অধ্যাপক কাফির নাম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছানোর খবরে ক্যাম্পাসে বিরূপ আলোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন এমন অযোগ্য, যৌন নিপীড়ক, দখলবাজরা যদি উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বসে তাহলে শিক্ষার মানই শুধু অবনতি হবে না ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। তবে আওয়ামীপন্থি প্রবীণ শিক্ষকরা বলছেন, কোনো এক মন্ত্রীর (কাফির বন্ধু) ছত্রছায়ায় কাফির নাম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গেছে ঠিকই, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে কখনো প্রো-ভিসি’র মতো বড় পদে বসাবেন না। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের ঘটনাটা সম্পূর্ণ সাজানো ছিল। যা মিথ্যা।’ এ ছাড়া জমি দখলের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।’ মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলাটি মিথ্যা ছিল। উচ্চ আদালত আমার সংশ্লিষ্টতা পায়নি। ফলে আমার নামটি সরিয়ে দিয়েছে।’

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status