ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী?

১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
mzamin

হত্যাসহ শতাধিক মামলায় তিনি এখন বিচারের মুখোমুখি। পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। এর আগেও তিনি ছয় বছর ভারতের মেহমান ছিলেন। কারণ অবশ্য ভিন্ন। ’৭৫ সনের পট পরিবর্তনের পর তাকে ভারতেই থাকতে হয়েছিল। এখন তার সরকার ক্ষমতাচ্যুত। দেশে না থেকে ভারতে যাওয়ার দরকষাকষির ফলশ্রুতিতে তিনি এখন সেখানেই। 
৪ঠা আগস্ট থেকে শুরু করে ৫ই আগস্ট দুপুর পর্যন্ত টানা দরকষাকষি চলে। ভারত সরকারকে বুঝাতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন বাংলাদেশে থাকা নিরাপদ নয়। অজিত দোভালের সঙ্গে তিনি কয়েকদফা ফোনে কথা বলেন। তাদের বোঝাতে সক্ষম হন পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেকোনো সময় গণভবন ঘেরাও হতে পারে। সেনারা তার পক্ষে নেই। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। তাই তারা যেন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে তার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে বিরামহীন আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় তাকে নিরাপদে চলে যেতে দেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনি দেশ ছাড়েন।


এরপর অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। বাংলাদেশে তার সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেছে। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ৩২ নম্বর। অসংখ্য হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার দলের অস্তিত্ব থেকেও নেই। একটি লোকও নেই দলের পক্ষে কথা বলার। কোথায় যে এরা হারিয়ে গেল এ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে। তিনি আছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মাঝে মধ্যেই তিনি সরব হন। আত্মগোপনরত অনেক সহকর্মীর সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেন। তাদের এই বলে আশ্বস্ত করেন, আমি দ্রুত আসছি। ভয় পেয়ো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। শুরুর দিকে এসব কথাবার্তা অনেকেই আমলে নিতেন। উৎসাহিত বোধ করতেন। এখন জোয়ার-ভাটার মতো। সকাল-বিকাল মনোবল চাঙ্গা হচ্ছে। অনেকে আবার ক্যাম্প পরিবর্তন করছেন। পরিচয় গোপন করে অনেকেই জাতীয়তাবাদী অথবা জামাতি হয়ে যাচ্ছেন।  নরেন্দ্র মোদিকে ড. ইউনূস সরাসরি বলেছেন, শেখ হাসিনা যে ভাষায় কথা বলছেন তা রীতিমতো উস্কানিমূলক, নানা ষড়যন্ত্রের আলামত।  তাকে সতর্ক থাকার তাগিদও দেয়া হয় কূটনৈতিক চ্যানেলে।

 


হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যুটি ইউনূস-মোদি বৈঠকে আলোচনায় এসেছিল। মোদি কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। আলোচনাও বেশি দূর এগোয়নি। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই বৈঠকটির সমাপ্তি ঘটে। ফলাফল ছিল শূন্য। তবে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তাকে ফেরত চেয়ে কূটনৈতিক চিঠির প্রসঙ্গ টেনে এনেছে বার কয়েক। এই অবস্থায় শেখ হাসিনা কী করবেন। তাকে ফেরত আনার ব্যাপারে চাপ আরও বাড়বে। নির্বাচন যত কাছাকাছি আসবে ততোই তাকে ফিরিয়ে আনার সুর হবে চড়া। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ প্রায় অভিন্ন। তারা চাচ্ছে আওয়ামী লীগ যাতে অংশ না নেয়। আওয়ামী লীগ যেহেতু নিষিদ্ধ হয়নি তাই হিসাব-নিকাশে গরমিল আছে। অংক মেলানো সম্ভব হচ্ছে না। ভারতসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলও চাচ্ছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তারা বলতে চাচ্ছে- আওয়ামী লীগসহ সবাইকে নিয়েই নির্বাচন। তা নাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই থেকে যাবে। তাদের বক্তব্যে এমন ইঙ্গিতই রয়েছে।


ইউনূস প্রশাসন এখন দোটানায়। যদিও প্রফেসর ইউনূস নিজেই  বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে একবার বলেছিলেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা তার সরকারের নেই। এ নিয়ে তার নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। অনেকেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন। নির্বাচন কমিশন পড়েছে বেকায়দায়। তারা কী করবে। তারা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাবে কীভাবে! নির্বাচনই বা কবে? এখনো সবুজ সংকেত আসেনি ইউনূস প্রশাসনের কাছ থেকে।

সীমানা পুনঃনির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশন একটা ফাইল পাঠিয়েছিল সরকারের কাছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন হয়ে গেল ফাইলটি নড়েনি। এ থেকে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে ডিসেম্বরে নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো সরকার মনস্থির করতে পারেনি। ৬ সদস্যের কিচেন কেবিনেটে প্রফেসর ইউনূস দ্রুত নির্বাচনের পক্ষেই মত দিয়ে আসছেন। বাস্তবে অবশ্য এর আলামত অনুপস্থিত। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে কী হতে পারে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা এমন একটি সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যেতে পারে। 

পরিস্থিতি শেখ হাসিনার জন্য কোনো অবস্থাতেই অনুকূলে নেই। একদিকে মামলা-মোকদ্দমা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপ তাকে আরও কোণঠাসা করেছে। পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও জটিল করে তুলেছে। দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াও ঝুলে গেছে। তিনি আসলে কারও কাছে নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি নন, এমনকি পরিবারের কাছেও। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন, শেখ হাসিনার ভাগ্যে যাই ঘটুক না কেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় চ্যালেঞ্জের মুখে।


-ম. চৌ.

 

সূত্র- জনতার চোখ

পাঠকের মতামত

হাসিনার কোনো ভবিষ্যত নাই

বুশরা
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

হাসিনার আওয়ামী লীগ এদেশে বিজেপির বিটিম হিসেবে কাজ করে তাহলে কেন এদেশে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকবে??

Anwar
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৬:০০ পূর্বাহ্ন

তাঁর মত জেদি মহিলা কম আছে

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৬:৪৯ অপরাহ্ন

রাজনীতি থেকে অবসর এবং ভারতে স্থায়ীভাবে‌ বসবাসই শেখ হাসিনার ভবিষ্যত।‌

Masum
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:২৪ অপরাহ্ন

রাজনৈতিক ভবিষ্যত কার কেমন হবে অন্তত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আগে ভাগে কিছুই বলা যায় না।

Mohsin
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:২৩ অপরাহ্ন

হাসিনার একমাত্র ভবিষ্যৎ হচ্ছে ফাসির দড়ি।

জ্ঞানী বালক
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩:২৮ অপরাহ্ন

আওয়ামীলিগের অস্তিত্ব মাটির সাথে মিশে গেছে। আর খুজে পাওয়া যাবে না।

Noor Mohammad
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:০৮ অপরাহ্ন

এই বয়সে এসে সাধারণ মানুষের তো অবসর জীবন যাপন আর পরপারের প্রস্তুতির জন্য আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকার কথা। কিন্তু রাজনীতিবিদদের বিষয়টা ভিন্ন। কারণ রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।

প্রকাশে অনিচ্ছুক
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস করেছে। দলীয় অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ হত্যার জন্য কর্মসূচী নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে হবে।

আজাদ আবদুল্যাহ শহিদ
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

অসাধারণ লেখনী।

জিয়াউল হক
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

No one cares anymore.

Nam Nai
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:৩১ পূর্বাহ্ন

পিশাচ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে, পিশাচ হাসিনা দে-শ ও জাতির শত্রু, পিশাচ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক।

Anwar zia
১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ২:১৯ পূর্বাহ্ন

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ জেলখানা!!!!

Md Rejaul Karim
১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৮:১৮ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status