ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম

৩০ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

যশোর
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে: সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাওয়ার সময় বাস দুর্ঘটনায় নিহত নাজমুলের বাড়ি যশোর সদরের বসুন্দিয়া ঘুণি মাঠপাড়া গ্রামে। গতকাল সকালে তার গ্রামের বাড়িতে এ খবর পৌঁছানো মাত্র এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মুহূর্তে গোটা পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। 
নিহত নজরুল ইসলাম ওরফে নাজমুল হোসেনের বড়ভাই কামরুল হোসেন বলেন, এক বছর ২৬ দিন আগে তার ছোট ভাই নাজমুল সৌদি আরব যায়। সৌদি আরবের আভা খামিজ নামে একটি এলাকায় সে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতো। গত সোমবার রোজার মাসের বিশেষ ছুটিতে নাজমুলসহ আমার  দূর সম্পর্কের ভাগ্নে রনি, মোশাররফ, সুমনসহ ৪৭ জন একটি বাসে ওমরাহের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় নাজমুল ও রনি মারা যায়, আহত হয় অপর দুই ভাগ্নে আমাদেরই এলাকার মোশাররফ ও সুমন। ছেলের মৃত্যুর খবরে মা ছেলিনা বেগম সঙ্গাহীন হয়ে পড়েছেন।
মরদেহ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে নিহত নাজমুলের বড়ভাই কামরুল হোসেন ও মাদারীপুর গ্রামের রুহুল আমিন ওরফে রনির বড়ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, সেখানে তাদের আরও আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা রয়েছেন।  তাদের সঙ্গে কথা বলে আজ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তাদের সৌদিতে কবরস্থ করা হবে নাকি দেশে আনবো। তবে, আমরা চেষ্টা করবো দেশে আনার। 
এদিকে আহত সুমনের মা হাসিনা বেগম বলেন, গতকাল ভোরেও ফোনে কথা হয়েছে ছেলের সঙ্গে। দুর্ঘটনায় তার সারা শরীর কেটে ও পুড়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন
হাসপাতাল থেকে সে এখন বাসায় রয়েছে। তবে, মোশাররফের অবস্থা বেশি একটা ভালো নয়। সে বর্তমানে আইসিইউতে রয়েছে।  তার সঙ্গে পরিবারের কেউই কথা বলতে পারেনি।
 

মুরাদনগর 
মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় হলেও খোঁজ মিলেছে মামুন মিয়ার বাড়ির। সেখানে চলছে শোকের মাতম। নিহত মামুন মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামের মো. আউয়াল মিয়ার ছেলে। নিহতের মা মমতাজ বেগম জানান, চার ভাই বোনের মধ্যে মামুন সবার ছোট। দুর্ঘটনার সময় মামুন তার (মার) সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ ছাড়া গেল মাস আগে মামুন জীবিকার তাগিদে সৌদিতে পাড়ি জমান। এলাকাবাসীর দাবি যত দ্রুত সম্ভব নিহতের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে আনার। এ ছাড়া আহতদের মধ্যে দু’জন রয়েছে নিহত মামুনের স্বজন। আহত মুরাদনগর উপজেলার রাজনগর গ্রামের জজ মিয়ার ছেলে জাহিদুল ইসলাম (২২) ও হাড়পাকনা গ্রামের ইয়ার হোসেন (৩০) গুরুতর আহতাবস্থায় একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। নিহত মামুনের মামাতো ভাই জাহিদুর ও ইয়ার হোসেন। মামুন মিয়ার বাবা চিৎকার করে বলেন, ‘আমার পোলাডা ১২ দিনের ছুটি পাইয়া চির ছুটিতে চইলা গেল।’ সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো কুমিল্লার মুরাদনগরের মামুন মিয়ার বাড়িতে চলছে মাতম। 
সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ বাংলাদেশি রয়েছেন। ওই আটজনের মধ্যে তিনজন কুমিল্লার। তারা হলেন- জেলার মুরাদনগরের মামুন, রাসেল মোল্লা ও দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার এলাকার গিয়াস হামিদ। মামুনের বাড়ি মুরাদনগরের মোস্তাপুর গ্রামে। সৌদি আরবে ২২ বছর বয়সী এ যুবকের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে গতকাল সকাল থেকে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিড় করতে থাকেন তার বাড়িতে। বাড়িতে দেখা যায়, মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল তেমন কথা বলছেন না। মা মমতাজ বেগম ছেলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন। মোবাইলে ছবি দেখে বুক চাপড়াতে দেখা যায় তাকে। আবদুল আওয়ালের তিন মেয়ে, দুই ছেলের মধ্যে মামুন মিয়া চতুর্থ। ছয় মাস আগে মামুন তার মামা ইয়ার হোসেনের মাধ্যমে সৌদিতে যান। সেখানে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন। নিহত মামুনের মামি তাসলিমা বেগম জানান, মামুন, তার মামা ইয়ার হোসেন এবং মামুনের ভাগ্নে জাহিদুল ইসলাম বাসে করে ওমরাহ করার জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে তারা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। তাসলিমা আরও জানান, মামুন ও স্বজনদের বহন করা বাসটি ব্রেকফেল করে একটি ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে এতে আগুন ধরে যায়। মামুন গাড়ি থেকে বের হতে পারেননি; আগুনে পুড়ে তার মৃত্যু হয়। এ দুর্ঘটনায় মামুনের মামা ইয়ার হোসেন ও ভাগ্নে জাহিদ গুরুতর আহত হন। তারা মক্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
 

লক্ষ্মীপুর 
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: সৌদিতে ওমরা হজে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সবুজের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরমোহনার দক্ষিণ রায়পুর এলাকায় চলছে শোকের মাতম। উপার্জনক্রম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজন। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে পুরো এলাকা। সৌদিতে  ওমরা হজে যাওয়ার আগে বাসে উঠে বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে দোয়া চেয়েছেন সবুজ হোসাইন। এটাই তার শেষ কথা ছিল বলে জানান নিহত সবুজের বাবা হারুনুর রশিদসহ অন্যরা। যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সবুজের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও চান সবুজের পরিবার। নিহত সবুজ হোসাইনের বাবা হারুনুর রশিদ পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। চার ভাইবোনের মধ্যে সবুজ দ্বিতীয় হলেও সংসারের একমাত্র উপার্জনক্রম ব্যক্তিই ছিলেন তিনি। পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, সবুজ হোসাইনের বাবা হারুনুর রশিদ মাছ বিক্রি করে সংসার চালায়। আর্থিকভাবে তেমন একটা সচ্ছল নয়। ধার-দেনা করে প্রায় ৩ বছর আগে বড় ছেলে সবুজকে চাকরির উদ্দেশ্যে সৌদি আরব পাঠানো হয়। তার পাঠানো টাকাতেই পরিবার সচ্ছলতার মুখ দেখেছে। খুব শিগগিরই সবুজের দেশে ফেরার কথা ছিল। এর আগে সে ওমরাহ করবে বলেছিল। কিন্তু ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে গত সোমবার বাস দুর্ঘটনায় সবুজ হোসাইনসহ কমপক্ষে ৮ বাংলাদেশি নিহত ও কয়েকজন নিখোঁজ হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে খবর আসে সবুজ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এ খবর শোনার পর পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। 
 

চাটখিল 
চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে নোয়াখালীর চাটখিলের হেলাল (৩০) নামের এক যুবক। গত রোববার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টার দিকে এক  মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই হেলালের মৃত্যু ঘটে। নিহত হেলাল চাটখিল উপজেলার ২নং রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের মৃত হুমায়ন কবিরের ছেলে। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে হেলাল সবার বড়। হেলালের ছোট ভাই রিপন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রিপন জানান, পরিবারের উন্নতির জন্য বছরখানেক আগে হেলাল সৌদিতে যান। রিপন জানান, তার বড় ভাই একটি কম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। কম্পানির অনুমতি নিয়ে তিনি ওমরাহ পালন করার উদ্দেশ্যে বাসযোগে পবিত্র মক্কা নগরীতে যাচ্ছিলেন। হেলালের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার বাড়িতে মা, স্ত্রী, ভাই বোন ও একমাত্র শিশু কন্যার আহজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বাহার জানান, তিনি হেলালদের বাড়িতে গিয়েছেন। তিনি তার মা, স্ত্রী, একমাত্র সন্তানকে  সান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। চেয়ারম্যান বাহার জানান, হেলাল এলাকায় খুবই ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

সিন্ডিকেট চক্রের ঈদ বাণিজ্য/ ট্রেনের ১০৫৩ টাকার এসি চেয়ার ২৫০০

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status