বাংলারজমিন
আন্দোলনে উত্তাল জাবি
‘দ্বিতীয় মানিকের উত্থান’
জাবি প্রতিনিধি
৭ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জসিমউদ্দিন মানিকের দ্বিতীয় উত্থান ঘটেছে বর্তমান সহকারী প্রক্টর মাহমুদুর রহমান জনির একাধিক অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে। একজন শিক্ষক নৈতিকতা শেখাবে সেখানে জনি শিক্ষার্থীদের অনৈতিকতার দিকে ধাবিত করেছে। একইসঙ্গে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে একাধিক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করেছে।’ জনির বহিষ্কারের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচি। তিনি আরও বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের জন্য এটা লজ্জার বিষয়। জনির এই ঘটনাকে অনেক প্রভাবশালী শিক্ষক ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সত্যি কখনো চাপা থাকে না। জনি যে অনৈতিক কাজ করেছে এটা সবার কাছেই স্পষ্ট। দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে জনিকে অপসারণ করা হোক। কোনো অনৈতিক ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে চাই না।
আমরা জাহাঙ্গীরনগরে আর কোনো মানিকের উত্থান চাই না।’ গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। এ সময় ‘নিপীড়ক প্রশাসক নিপাত যাক, নিপীড়কের আস্তানা জাহাঙ্গীরনগরে হবে না, চরিত্রহীন জনিকে ক্যাম্পাস থেকে অপসারণ কর, নষ্ট প্রশাসক নিপাত যাক, শিক্ষা সন্ত্রাস একসঙ্গে চলে না, ভ্রূণ হত্যাকারী জনিকে বহিষ্কার কর’ প্ল্যাকার্ডে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা।
প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই ঘৃণ্য অপকর্ম সম্ভব না। যার কারণেই হাতে এতসব প্রমাণ সত্ত্বেও জনিকে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে অপসারণ করা হচ্ছে না।’ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান জনি ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করেন। সেই ধারা অব্যাহত রেখেই তিনি প্রথমে শিক্ষক এবং পরে সহকারী প্রক্টর হয়। আমরা প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে জনির শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।’ মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আবু সাইদ বলেন,‘জনি ক্ষমতার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। শিক্ষক হওয়ার পরে তার নানা ধরনের অপকর্ম আলোচিত হয়েছে। এতে স্পষ্ট নৈতিক চরিত্রের স্খলন ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে জনি নোংরামির সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা আর কোনো জসিমউদ্দিন মানিক দেখতে চাই না। জনিকে প্রশাসনিক সকল পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনা হোক।’ কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা।
সম্প্রতি মাহমুদুর রহমান জনির সঙ্গে নিজ বিভাগের ৪২তম ব্যাচের ছাত্রী ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এক শিক্ষিকার আপত্তিকর ছবি ফাঁস হয়। পরে ছবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দেয়ালে পোস্টারিংও করা হয়। ছবিতে দেখা যায়, অফিস কক্ষে ললিপপ হাতে মাহমুদুর রহমান জনির উরুতে বসে সেলফি তুলেছেন ওই শিক্ষিকা। পোস্টারে ছবির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘এভাবেই ললিপপের ভেলকিতে শিক্ষিকা হলেন... ’ পোস্টারিংয়ের পর ছাত্রীদের সঙ্গে অডিও ও ‘অশালীন’ চ্যাটিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অডিওতে শোনা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক তার এক ছাত্রীকে জোর করে গর্ভপাত করতে বাধ্য করছেন।
চ্যাটিংগুলোতে দেখা যায়, ‘মাহমুদুর রহমান জনি একাধিক নারীকে অশ্লীল মেসেজ করেছে। এবং তাদেরকে বিভিন্ন সময় কিশোরগঞ্জ ও ক্যাম্পাসে নিজ বাসায় অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।’ পরে অভিযুক্ত জনির শাস্তি চেয়ে ‘জাবি শিক্ষকদের একাংশ’, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ প্রেস রিলিজ ও সংবাদ সম্মেলন করেন। এসব বিষয়ে মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ‘এসব তথ্য মিথ্যা ও বানোয়াট। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে পরামর্শ করেছি, অচিরেই এদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’