বাংলারজমিন
গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন
জাতীয় পার্টির দুর্গে রিপনের হানা
সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা থেকে
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবারআগামী ১২ই আগস্ট গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে সরগম হয়ে উঠেছে দুই উপজেলা। তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, রেল স্টেশন সর্বত্রই উৎসবের আমেজ। ঘুম নেই প্রার্থীদের। চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সরগরম বালুচরের হাট-বাজার। এ উপনির্বাচনে লড়ছেন ৫ প্রার্থী। তবে এবার ভোটাররা ঝুঁকছেন নতুন মুখের দিকে। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুুদ হাসান রিপন দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে সরব। মুখে মুখে তারই নাম। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে নড়েচড়ে বসেন অনেকেই।
এরমধ্যে আওয়ামী লীগের হয়ে দীর্ঘদিন মাঠে ময়দানে দলকে সংগঠিত করার কাজ করেছেন রিপন। চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছেন অনেক আগে থেকেই। ফলে জাতীয় পাটির দুর্গেও রিপনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা তার জন্য বাড়তি পাওয়া। জানা যায়, রওশন এরশাদও এই আসনে এমপি ছিলেন। পরে মরহুম ফজলে রাব্বির কাছে হেরে তিনি আর এ এলাকায় আসেননি। তখন থেকে ভোটারা জাতীয় পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে এডভোকেট গোলাম শহীদ রঞ্জু উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে চেয়ারে বসেন দুইবার। এবার তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন ভোটের মাঠে। কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর পর এই আসনে জাপার অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। সেই থেকেই আওয়ামী লীগের হয়ে ছাত্রনেতা মাহমুদ হাসান রিপন জাতীয় পাটির দুর্গে শাবল মারতে থাকে। তখন নিজে নৌকার মনোনয়ন না পেলেও হাল ছাড়েননি।
নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে তিনি ভালো ভূমিকা রাখেন। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নৌকার হাল ধরে ছিলেন মাহমুদ হাসান রিপন। বিকল্প ধারার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটে জয়-পরাজয় আছেই, দলকে এগিয়ে নিতে আমাদের প্রার্থী হওয়ার প্রয়োজন আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাত ও সৈয়দ নাহিদুজ্জামান বলেন, এলাকায় আমাদের জন্ম। ভোট ভালো হলে আমরা অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকবো। তবে জাপার প্রার্থী গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, সাঘাটা-ফুলছড়ি জাতীয় পাটির দুর্গ। নির্বাচন ফেয়ার হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। অ্যাড়েন্ডাবাড়ির বৃদ্ধ হাফিজার রহমান বলেন, ‘যারা এতদিন থাকি হামার খোঁজখবর নিছে এবার তাকে ভোট দেমো। ওমরা আর কতোই ভোট চায়?’ এখন তো আর এরশাদ নাই। এরশাদের কথা কয়া ভোট নিবে তা হবার নয়। এবার নতুন মুখ দেখিয়া ভোট দেমো।’ ফজলুপুরের রহিমা বেগম বলেন, ‘এবার ওগলা চলবার নয়। ইভিএমএ ভোট দেমো। এবার নয়া ভোট নয়া মানুষ দেখিয়া দেমো। নৌকা মার্কা ছাড়া হামরা ভোট দিবার নই। তাছাড়া কতোবার আর লাঙ্গলত ভোট দেমো। এরশাদ হামার কি করি দিছে? লাঙ্গল মার্কাত ভোট দিয়া কি হয় তা হামরা জানি।
চরের মানষক বোকা পাছে। এবার বুঝবে যারা ভোটোত দাঁড়াছে। কার কী অবস্থা হয়। হামার বোঝা শ্যাষ। অ্যাড়েন্ডাবাড়ি ভোটের আগে কতো মিষ্টি কথা কয় আর খবর নাই। নদী ভাঙন ঠেকানোর কথা কয়া কতোবার ভোট দিছি। চর আর নদীর মানুষ হামরা এবার ভোট দেমো রিপন মিয়াক। চ্যাংড়া মানুষ। ভরা বানের পানির মদ্দে হামার ঘড়ত আসিয়া চাউল দিয়া গেছে। পানি দিয়া গেছে, পায়খানা দিয়া গেছে। বিপদে তার লোকজন নিয়া খোঁজখবর নিছে। অনেকদিন ভোট দিছি কেউ আর হামার খোন খোঁজখবর নেয় নাই। কিন্তু এবার হবে খেলা। নয়া ভোট নয়া মানুষ চাই।’ ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ বলেন, ‘ভোটাররা এবার নতুন মুখ দেখতে চায়। বিভিন্ন দুর্যোগে নিজের তহবিল থেকে মাহমুদ হাসান রিপন চরাঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন। তিনি নিজে কোমর পানিতে নেমে তাদের দুঃসময়ে কাছে ছিলেন। নিজের টাকায় চাল-ডাল কিনে বিপদে কাছে ছিলেন গরিব দুখি মানুষের।
সে কারণে দুই উপজেলার ৭টি ই্উনিয়নের চরাঞ্চলের অন্তত: ১ লাখ জাপা সমর্থক ভোটারের মনকে জয় করে নিয়েছেন। তাকে বাদ দিয়ে এবার কোনো হিসাব নাই।’ আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, আমি প্রতিশ্রুতিতে নই, কাজে বিশ্বাসী। তা আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন। দুর্যোগে কে পাশে ছিলেন আর কে পালিয়ে ছিলেন। আমি ছিলাম আপনাদের মধ্যে। ছিলাম সঙ্গে, কাজ করেছি আপনাদের নিয়ে। আমি নির্বাচিত হলে সাঘাটা-ফুলছড়ি বাসীর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবো। বিজয়ী হলে নদীভাঙন রোধে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। এবার নির্বাচনে সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৪৩ জন ভোট দেবেন।