অনলাইন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগে চলে গেল তরতাজা প্রাণ!
মানবজমিন ডিজিটাল
(১ দিন আগে) ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:২৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:৪৭ অপরাহ্ন

এলিজাহ হিকক একজন প্রাণবন্ত কিশোর ছিল। তার মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকতো। রাগ-দুঃখ তার চোখে মুখে কখনো দেখা যায়নি। কিন্তু সেই ছেলেই যে নিজেকে একদিন শেষ করে দেবে এমনটা স্বপ্নেও ভাবা যায়নি। সিবিএস স্যাটারডে মর্নিংকে এমনটাই জানিয়েছেন এলিজাহর বাবা জন বার্নেট। পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ১৬ বছরের ওই আমেরিকান কিশোরের। বাড়ি থেকেই দেহ উদ্ধার করা হয়। ছেলে কেন এমন চরম পদক্ষেপ নিল মাথাতেই ঢুকছিল না বাবা-মায়ের। কেন আত্মহত্যা করল? পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করে পুলিশের দ্বারস্থ হন সন্তানহারা দম্পতি।
প্রায় দু’মাস তদন্তের পরে সামনে এলো আসল তথ্য! এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কিশোরের নগ্ন ছবি তৈরি করেছিল প্রতারক। মোবাইলে সেই ছবি পাঠিয়ে শুরু হয় হুমকি। প্রায় ৩ হাজার ডলার দাবি করা হয়েছিল ১৬ বছরের কিশোরের কাছে। টাকা না পেলে সেই ছবি পর্ন সাইটে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে একের পর এক হুমকিবার্তা দেয়া হয়। কিন্তু এত টাকা কোথায় পাবে কিশোর! আর না দিলে তো সকলের কাছে তার সম্মানহানি করে দেবে ওই ব্যক্তি! আতঙ্ক এবং আশঙ্কায় নিজেকে শেষ করে দেয় ছেলেটি।
জানা গেছে, ডিজিটাল প্রতারকদের শিকার হয়েছিল হিকক। বয়ঃসন্ধির কিশোরকে প্রথমে নানা অশ্লীল ছবি পাঠাত প্রতারকেরা। পরে ওই কিশোর নিজেরই একটি নগ্ন ছবি পায় মেসেজে। ঘাম ছুটে যায় তার। কীভাবে হল এটা? প্রতারকেরা জানান, দাবি মতো অর্থ পেলে সব চাপা থাকবে। আর না হলে ওই ছবি ছড়িয়ে দেয়া হবে অন্তর্জাল মাধ্যমে। ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারেনি কিশোর। আবার এতগুলো টাকাও জোগাড় করতে পারেনি সে। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ১৬ বছরের ছেলেটি।
ছেলের স্মার্টফোন ঘেঁটে প্রথম এই তথ্য পায় তার মা শ্যানন। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে যে ছবিটি এলিজাহকে পাঠানো হয়েছিল, সেটি আসল নয়। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়েটেড চিলড্রেন জানিয়েছে যে গত বছরে তারা অপ্রাপ্তবয়স্কদের লক্ষ্য করে ৫০০,০০০ এরও বেশি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছে। ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের অনুমান, ২০২১ সাল থেকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কারণে কমপক্ষে ২০ জন তরুণ আত্মহত্যা করেছে।ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়েটেড চিলড্রেনে দাখিল করা ১,০০,০০০ এরও বেশি রিপোর্টে নেপথ্যের কারণ ছিল এই জেনারেটিভ এ.আই।
থর্নের ডেটা সায়েন্সের প্রধান ড. রেবেকা পোর্টনফ বলছেন, ‘এই ধরণের অবৈধ এবং ক্ষতিকারক উপাদান তৈরি করতে আসলে আপনার কোনও প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন লাগে না। কেউ কীভাবে নগ্ন ছবি তৈরি করবেন তা খুঁজলেই অ্যাপ, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য রিসোর্স থেকে অনুসন্ধানের ফলাফল চলে আসে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলো যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কাজ করছে। মেলানিয়া ট্রাম্প কর্তৃক প্রণীত এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক স্বাক্ষরিত সম্প্রতি পাস হওয়া ‘টেক ইট ডাউন’ আইন, কারও সম্মতি ছাড়াই তার আসল এবং জাল যৌন ছবি অনলাইনে পোস্ট করাকে একটি ফেডারেল অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।
সূত্র : সিবিএস নিউজ