অনলাইন
মাহাথির মোহাম্মদের নতুন মালয় ঐক্য জোট
স্টাফ রিপোর্টার, মালয়েশিয়া
(১ দিন আগে) ৪ জুন ২০২৫, বুধবার, ৯:৫১ অপরাহ্ন

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী তুন ডা. মাহাথির মোহাম্মদ আবারও সরব হয়েছেন মালয় রাজনীতিতে। মঙ্গলবার পুত্রজায়ায় এক প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা দিয়েছেন মালয়দের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পতন ঠেকাতে একটি নতুন "মালয় ঐক্য জোট" গঠনের।
দেশটির ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে জানিয়েছে, এই জোটে ইউএমএনও এর সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, যদিও পুরো পার্টিকে নয়—শুধু সদস্যদেরই, কারণ তারা মালয়। যদি তারা এ ঐক্য জোটের লক্ষ্যকে সমর্থন করে, তবে তাদের স্বাগত জানাবেন মাহাথির মোহাম্মদ।
এই ঘোষণার সময় পাশে ছিলেন পারিকাতান ন্যাশনাল-এর চেয়ারম্যান মুহিউদ্দিন ইয়াসিন, মহাসচিব হামজাহ জায়নুদিন এবং পাস-এর উপ-সভাপতি তুয়ান ইব্রাহিম তুয়ান মান। মাহাথির বলেন, এই নতুন প্ল্যাটফর্ম আপাতত রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি ঢিলেঢালা ছাতার মতো সংগঠন, যার উদ্দেশ্য হলো মালয় সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে আরো জানিয়েছে, মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, "অনেক দল আছে যারা মালয়দের এক করতে চায়, কিন্তু দল বেশি হলে আমরা বিভক্ত হয়ে যাই। আমরা কেবল জয়ী হতে পারি ঐক্যবদ্ধ থাকলে।"
মালয়দের বর্তমান অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মাহাথির বলেন, গ্রামের মানুষ এখনো বিপদের গভীরতা বোঝে না। সরকার থ্রী-আর অর্থাৎ জাতি, রাজা ও ধর্ম বিষয়ক আলোচনা নিষিদ্ধ করে মালয়দের কণ্ঠরোধ করছে। তাঁর দাবি, "সরকার আমাদের বলতে দেয় না। আজ আমি যা বললাম, হয়তো কোনো কাগজ ছাপবে না, শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতেই থাকবে। এটা এক ধরনের দমন।"
অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ক্ষমার প্রসঙ্গ নিয়েও আজ মাহাথির মোহাম্মদ তার ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। তাতে লেখা হয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর সম্প্রতি আনোয়ারের ২০১৮ সালের পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার পর মাহাথির বলেছেন, এই ব্যাখ্যা তাঁকে আগে করা নানা অভিযোগ থেকে মুক্ত করেছে—বিশেষত যখন বলা হয়েছিল, তিনি ক্ষমা দিতে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। তিনি মনে করিয়ে দেন, কিছু আইনজীবী তখন থেকেই আনোয়ারের ক্ষমার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিলেন, এমনকি একজন আদালতে মামলা করেছিলেন ২০২০ সালে, যেদিন মাহাথির প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়েন।
সে সময় আনোয়ার ইব্রাহিম সেই মামলাটি বাতিল করতে চাইলেও হাইকোর্টে ব্যর্থ হন, পরে কোর্ট অব আপিলে সেই মামলা খারিজ হয় মামলাকারীর ‘লোকাস স্ট্যান্ডি’ না থাকার কারণে। পরে ফেডারেল কোর্টও একই কারণে মামলাটি খারিজ করে। তবে যখন দাতুক সেরি নাজিবের গৃহবন্দী থাকার বিষয়ে রাজপ্রাসাদ থেকে আলাদা নির্দেশ আসে, তখন আনোয়ার ইব্রাহিমের ক্ষমার বিষয়টি আবার বিতর্কে চলে আসে।
মাহাথির তার ফেসবুক পোস্টে আরো বলেন, এই দুই ক্ষেত্রের মধ্যে ব্যবধান থাকায় আইনজ্ঞদের অনেকে আবারও আনোয়ারের ক্ষমার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তার বক্তব্য, এই বিতর্ক আবারও তাঁকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
পোড় খাওয়া এ রাজনীতিবিদ আরো লিখেছেন সম্প্রতি আনোয়ার নিজেও নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন, কারণ তিনি তাঁর প্রাক্তন সহকারীর করা যৌন হয়রানির মামলায় নিজেকে "ইমিউনিটি" দেওয়ার আবেদন করেছেন। মাহাথির বলেন, “অনেকে মনে করছেন, এই ইমিউনিটি চাওয়া দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার মূলনীতির পরিপন্থী।” তাঁর মতে, আনোয়ারের এই চাওয়াকে তাঁর আগে পাওয়া বিশেষ ক্ষমার সুবিধার ধারাবাহিকতা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
মাহাথির তার পোস্টে সতর্ক করে বলেন, "সব বিতর্ক একে অপরের সাথে জড়িত। অ্যাটর্নি জেনারেলস চেম্বারস (এজিসি)-এর উচিত এগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা। তা না হলে দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাবে।"
এই পুরো পরিস্থিতিতে স্পষ্ট, প্রায় শতবর্ষী বয়সেও মাহাথির শুধু অতীত নিয়ে বলছেন না, বরং ভবিষ্যৎ মালয় রাজনীতির কেন্দ্রেও আবার জায়গা করে নিতে চাইছেন। এখন দেখার বিষয়, তাঁর এই নতুন মালয় ঐক্য জোট সত্যিই কতটা প্রভাব ফেলতে পারে আগামী নির্বাচনে। যদিও কিছুদিন আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে আবারো লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।