ঢাকা, ২৪ মে ২০২৫, শনিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

সৌদিতে গাজীপুরের ২ ভাইকে খুন শোকের মাতম

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে
২৪ মে ২০২৫, শনিবার
mzamin

সৌদি আরবে গাজীপুরের আপন দুই ভাই খুন হয়েছেন। বুধবার সৌদির দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে সৌদি পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের খবর স্বজনদের কাছে পৌঁছালে শোকের মাতম চলছে গাজীপুর মহানগরীর উত্তর ভুরুলিয়ার লম্বরি বাড়িতে। নিহতদের মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে স্বজনরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছেন। নিহতরা হলো, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২)। তারা ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন এর ছেলে।

সূত্র জানায়, ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহারের সঙ্গে নিহত দুই ভাইয়ের বাবার চুক্তি হয় কানাডা পাঠানোর জন্য। পরে কানাডা পাঠাতে না পারায় তাদের পাঠানো হয় সৌদি আরবে। কিন্তু সেখানেও কথামতো চাকরি হয়নি। এসব নিয়ে বিরোধ হয় আদম ব্যবসায়ীর সঙ্গে এর জেরেই খুন করা হয়েছে বলে ধারণা নিহতদের বাবার। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার বিচার দাবি করছেন। জানান, দুই ছেলে ছাড়া তার আর কোনো সন্তান নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়েছিলেন। কানাডা পাঠানোর স্বপ্নই কাল হয়। এখন সরকারের কাছে চাওয়া, যাতে মরদেহ এ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া তদন্ত করে দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি  জানান তিনি।

জানা গেছে, ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে জব ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন বাবা মোশারফ হোসেন লম্বরির কাছে। ৩ লাখ টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি। পরে বাহার উদ্দিন ভালো বেতনে ছোট ছেলে সাগরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। রাজি হলে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি যায় সাগর। কিন্তু কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয়। ছেলের কথা ভেবে আরও ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ দেয়। কানাডা পাঠানোর জন্য নেয়া ৩ লাখ টাকা ফেরত চাইলে বড় ছেলে কাকনসহ দুই ছেলেকে সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন বাহার। নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যান বাহার। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানার পর বাহার মোশারফকে ওমরাহ্‌ ভিসায় সৌদি গিয়ে ছেলেদের দেখে আসার প্রস্তাব দেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সঙ্গে সৌদি আরব যান মোশারফ।

এ সময় দুই ছেলেই জানান, তাদের খাবার ডেলিভারির কাজ দেয়া হয়েছে। ঠিকমতো খেতে দেয়া হয় না। রাখা হয়েছে ছোট্ট ঘরে। ২২শে ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরেন। ছেলেদের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে থেকে যান বাহার। আসার সময় বাহার একটি পলিথিন মোড়ানো পুঁটলি দিয়ে ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলেন মোশারফ হোসেনকে। ব্যাগে কি ছিল তিনি দেখেননি। সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশি করে একটি পুঁটলি উদ্ধার করে। পরে পুঁটলি রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। তিনি ফিরে আসার পরদিন বাহার বাংলাদেশে চলে আসেন। এসেই ব্যাগে থাকা পুঁটলি ফেরত চান। ইমিগ্রেশন পুলিশ রেখে দিয়েছে জানালে পুঁটলিতে ১৩ লাখ টাকার স্বর্ণ ছিল দাবি করে টাকার জন্য চাপ দেন। কয়েক দফা হুমকি দেন। বলেন, টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা ছেলেদের ক্ষতি হবে।

এসব ঘটনায় তিনি গাজীপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সর্বশেষ ৯ই মে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে লোকজন এসে অস্ত্র উঁচিয়ে মোশারফকে খুঁজতে থাকে। জিম্মি করে মোশারফের বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেমকে তুলে নিয়ে যায় এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। ঘটনার সময় মোশারফ বাড়িতে ছিলেন না। ৯৯৯-এ ফোন দিলে সদর থানা পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে। পরে বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের হত্যাকাণ্ডের খবর  দেয়। পরে সৌদি দূতাবাসের মধ্যে জানতে পারেন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবককে পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাকে দিয়েই বাহার তার দুই সন্তানকে খুন করে থাকতে পারেন ধারণা বাবার। তিনি দ্রুত সন্তানদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ওসি মো. মেহেদী হাসান বলেন, সৌদিতে দুই ভাই খুনের ঘটনাটি এক গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে জেনেছি। খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে আমাদের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা গুরুত্ব সহকারে করা হবে।
 

পাঠকের মতামত

অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা এর সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ সহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

নূর মোহাম্মদ এরফান
২৪ মে ২০২৫, শনিবার, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status