শেষের পাতা
লন্ডন থেকে আরিফের বার্তা
‘চমক নিয়ে আসছি’
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১০ মে ২০২৫, শনিবার
লন্ডন সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয়েছে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। সিলেটের নানা বিষয় নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। তার এই বৈঠককে ঘিরে সিলেটের বিএনপি’র ঘরানার রাজনীতিকদের কাছে কৌতূহলের অন্ত নেই। কী বার্তা পেলেন আরিফুল হক চৌধুরী? নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির ময়দানে এতদিন তিনি নিজেকে ধোঁয়াশা করে রেখেছেন। সামনে অফুরন্ত সুযোগ। সেই সুযোগের কোনটি তার ভাগ্যে জুটছে- সে নিয়ে অনেক আলোচনা সিলেট জুড়ে। তাহলে কী নোঙর ঠিক করে সিলেটে ফিরছেন আরিফুল হক চৌধুরী? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে বের হওয়ার পর বাংলাদেশের গভীর রাতে সেল ফোনে কথা হয় আরিফুল হকের সঙ্গে। মানবজমিনকে জানালেন, ‘একটুকুই জানাবো, চমক নিয়ে আসছি। সেটি সময় হলেই জানতে পারবেন। একটু অপেক্ষা করতে হবে।’ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে গত মাসের শেষ দিকে লন্ডন যান আরিফুল হক। কিন্তু দলের চেয়ারম্যান ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশে আসার ব্যস্ততা থাকার কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার দেখা হয়নি। শিডিউল মিলে বৃহস্পতিবার। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে কী কথা হয়েছে সে ব্যাপারে ডিটেইল জানাননি আরিফ। তার উদ্দেশ্য ছিল কয়েকটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নেবেন কিনা। প্রশ্নের জবাবে আরিফ খোলাসা না করলেও বর্তমানে লন্ডনে থাকা কয়েকজন ঘনিষ্ঠকর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে সম্পর্কে বার্তা দিয়েছেন।
বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়র হওয়ার সবুজ সংকেত পেয়েছেন সাবেক এই মেয়র। তাদের এই স্ট্যাটাসকে ঘিরে মধ্যরাতে সরব হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। মেয়র আরিফ এবার সংসদ নির্বাচন করতে চান। তবে, সেটি কোথা থেকে করবেন নিজ থেকে বলেননি। তার জন্য প্রস্তুত সিলেট-৪ আসন। এ আসনের সাবেক এমপি ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। ওই সময় আরিফ ছিলেন সাইফুরের পাশাপাশি। ফলে তারও পরিচিতি রয়েছে এ আসনে। ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্ন দাওয়াতে ওই আসনে যাওয়া আসা করছেন। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনের দিকে নজর তার। এ আসনে ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন বিএনপি’র চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। ওই নির্বাচনের পর থেকে তিনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। দলীয় বিবেচনায় খন্দকার মুক্তাদির মাঠে অনেকখানি প্রস্তুত। তবে বিএনপি’র কেউ কেউ এ আসনে জিয়া পরিবারের কাউকে এমপি প্রার্থী হিসেবে চাইছেন। এটি কেবল চাওয়াতেই সীমাবদ্ধ। দলীয়ভাবে এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়নি। নেতাকর্মীদের টার্গেটে রয়েছেন সিলেটের বনেদি পরিবারের সন্তান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। ১৭ বছর পর দেশে ফেরা জুবাইদাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের কৌতূহল রয়েছে। আরিফের নজর রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনের দিকেও।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি দুই টার্মে নগরের মেয়র ছিলেন। ইচ্ছা থাকার পরও অনেক উন্নয়ন করতে পারেননি। ফলে নগরের অসমাপ্ত উন্নয়ন শেষ করারও অভিপ্রায় তার। তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ের কিছু কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরিফুল হক। বলেছেন, ‘সিলেট-১ আসনে জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে হিসেব ভিন্ন। তখন মেয়র হলেও তিনি উন্নয়ন করতে পারবেন।’ তার মতে, ‘বিগত ১৭ বছরে উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে ছিল সিলেট। দেশের অন্যান্য এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তার ছিটেফোটাও সিলেটে লাগেনি। এজন্য আগামীতে সিলেটের উন্নয়ন করা হবে মুখ্য উদ্দেশ্য। এই উন্নয়নের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাকে যে দায়িত্ব দেবেন তিনি সেটি করতে প্রস্তুত রয়েছে। এ কথা তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দিয়েছেন।’ এদিকে, সিলেটের দলীয় রাজনীতি সম্পর্কেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবগত করেছেন আরিফ। বর্তমান সময়ে সিলেট বিএনপি’র অবস্থান ও পরিস্থিতি সামাল দিতে কী কী কাজ করা হচ্ছে সেসব বিষয়ও অবগত করেছেন। আরিফ জানান, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিলেট সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন। সিলেটের প্রতি তার আলাদা টান রয়েছে। এজন্য আগামীর দিন সিলেটবাসীর জন্য আর বঞ্চনার হবে না। লন্ডনে অবস্থানরত আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, আরিফুল হক চৌধুরীর এবারের সফর অনেকখানি সফল। তিনি এবার লন্ডনে কয়েকটি সামাজিক ও দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। সেসব অনুষ্ঠানে তিনি উন্নয়ন ও রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়া সিলেটের প্রেক্ষাপট নিয়েও কথা বলেছেন। যেসব কথা সচরাচর কেউ বলেন না। তার এসব বক্তব্যের মধ্যদিয়ে আরিফ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও জানান দিয়েছেন। একইসঙ্গে সিলেটের উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়তে তিনি প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়েছেন।