খেলা
ব্যাটিংয়ে ‘ভূত’ তাড়াবে কে!
ইশতিয়াক পারভেজ
২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার
বাংলাদেশ ক্রিকেটে খারাপ সময় নতুন কিছু নয়। জয়ের চেয়ে হারের সংখ্যাটাই বেশি। সাফল্য যতটা তার চেয়ে বেশি ব্যর্থতা। হার জিত থাকবে খেলায় এটাই নিয়ম। তাই বলে দেশকে হতাশা ও লজ্জায় ডুবিয়ে! সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজ হেরেছে টাইগাররা। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে যুক্ত করেছে আরেকটি হতাশার গল্প। যেখানে খলনায়ক ফের ব্যাটাররা। বাংলাদেশ দলে ব্যাটিং ‘ভূত’ নতুন নয়। তিন ফরম্যাটেই হারের অন্যতম কারণ উদ্ভট ব্যাটিং। সবশেষ ম্যাচে ৭১ রানে হারিয়েছে ৭ উইকেট। সেখান থেকে টেনেটুনে ১৬২ রান ৯ উইকেট হারিয়ে! যা তাড়া করে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় তুলে নিতে আরব আমিরাতকে খোয়াতে হয় ৩ উইকেট। ব্যাটিং উইকেটে বোলাররাও কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। গেল এক বছরে টাইগারদের ব্যাটিংটা যেন পুরোপুরি ছন্দ হারিয়েছে। সেট হয়ে আউট হওয়া, দলের বিপদে দায়িত্ব নিতে না পারা, এ ‘ভুত’ তাড়াবে কে? তাহলে এই জন্য দায় কার! ক্রিকেটারদের নাকি তারা পরিচালিত হচ্ছেন ভুল দর্শনে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠুর কণ্ঠে হতাশা ও চিন্তার সুর। তবে তিনি মনে করেন কাউকে এককভাবে দায় না দিয়ে এখনই সবাইকে বসে কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, ‘মাঠে ব্যাটাররা বাজে শটে আউট হচ্ছেন, দলের দায়িত্ব নিতে পারছেননা এটাতো দৃশ্যমান। তবে শুধু দলকে দোষ দিতে আমি রাজিনা। আবার তাদের জন্য যে কিছু করা হচ্ছেনা তাও নয়। আমি বলবো এতটা সময় পার করে এসে কোন ভাবেই এমন হার আশা করা যায়না। আমরা কিন্তু তিনটা ম্যাচই হারতে পারতাম। আমি মনে করি এখনই সময় সবাইকে বসে কারণ অনুসন্ধান পাশাপাশি সমাধানের রাস্তাও বের করতে হবে।’ অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম এমন হারে মোটেও বিব্রত নন বলেই জানিয়েছেন। তিনি এই দলটিকে যেমন সেরা বলেছেন তেমন রাখতে চান আস্থাও।
তিনি বলেছেন, ‘না আমি মোটেও বিব্রত নই। আরব আমিরাত খুব যে দুর্বল দল তা কিন্তু না। হ্যাঁ, আমাদের জেতা উচিত ছিল। তবে এই সিরিজে সবচেয়ে বড় বিষয় দেখা গেছে। যে ছেলেটা আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছে তাকে পরের ম্যাচে বসিয়ে দেয়ার সাহস দেখিয়েছে। এটা কিন্তু দারুণ সাহসের ব্যাপার। অনেকেই বলতে পারে কেন আমরা তাকে বসিয়ে দিলাম। কিন্তু এই ভাবেই বড় দল হওয়ার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এটা একটা প্রসেস, তার মধ্য দিয়েই দল আরো ভালো হবে। আমার মনে হয় দুই পা এগিয়ে যেতে এক পা
পেছাতে হয় কিন্তু। আমার মনে হয় এটা সেইটা।’ তাই বলে সিরিজ হেরে যাবে বাংলাদেশ দল! ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানের এমন বক্তব্যে হচ্ছে ভীষণ সমালোচনা। তার এই মন্তব্য নিয়ে ইফতেখার রহমান মিঠু বলেন, ‘দেখেন সে (ফাহিম) শুধু ক্রিকেট অপারেশনের চেয়ারম্যানই নয় একজন অভিজ্ঞ কোচও। আমার মনে হয় তিনি যা বলেছেন সেটি বুঝেই বলেছেন। যেহেতু দলটা নতুন, অভিজ্ঞদের ছাড়া খেলছে তাদের আরো সময় দিতে হবে এটাই বলতে চেয়েছেন।’
কোটি কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় দলের জন্য আনা হয় বিদেশি স্পেশালিস্ট ব্যাটিং কোচ। দেশি কোচরাও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এরপরও ব্যাটিং ব্যর্থতার গ্রাফটা নিম্নমুখী কেন! তাহলে যাদের আনা হচ্ছে তারা শেখাতে পারছেননা! নাকি ক্রিকেটারই তাদের কাছ থেকে শিখতে পারছেননা? এ নিয়ে ইফতেখার মিঠু বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় শেখায় খুব বেশি সমস্যা নেই। কিন্তু মাঠে কৌশলগুলো প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছে ক্রিকেটাররা। কোচরাও চেষ্টা করেন সাধ্যমতো। বিসিবিও তাদের জন্য কোচিংয়ের ব্যবস্থা করে। ক্রিকেটাররা যে শিখছেনা সেটি বলাও ভুল। অনেকেই ভালো করছে। যারা পারছেনা তাদের মাঠে প্রয়োগের অভাব দেখছি।’ ৫ই আগস্ট দেশে সরকার পরিবর্তনের পর ক্রিকেটে পরিবর্তন আসবে এমনটা আশা ছিল। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের নয়া সভাপতি ফারুক আহমেদের নিয়োগের পর থেকে বেড়েছে অস্থিরতা। সভাপতি মাঠের ক্রিকেটকে ঠেলে সাজাতে খাচ্ছেন হিমশিম। কারণ এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে কে হবেন নতুন সভাপতি। বিসিবি জুড়ে এখন শুধু নির্বাচন ভাবনা। যে কারণে মাঠের ক্রিকেটের ক্ষতি হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যানও মানেন এমন বাস্তবতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঠের ক্রিকেটের উন্নতিতে বেশি মন দিতে হবে। কিন্তু সেখানে প্রতিনিয়তই কে সভাপতি হবে, কে পরিচালক হবে, কবে নির্বাচন তা নিয়ে তোড়জোর চলছে। এটা খুব বাজে প্র্যাকটিস। এমনটা হওয়া উচিত না। কারণ মাঠে ক্রিকেট বাঁচলে বোর্ডও এগিয়ে যাবে।’