শেষের পাতা
সাদাপাথরে লুট ঠেকালো প্রশাসন
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
রাতভর বৃষ্টির কারণে ভোর থেকে ঢল নামতে শুরু করে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন স্পট দিয়ে। এমনিতেই বিরান ভূমি সাদাপাথর। গত ১০ মাসের ক্রমাগত লুটে অর্ধেকের বেশি পাথর কমে গেছে। শূন্যরেখায় পাথরের স্তূপ। দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের কড়া নজরদারির কারণে ওখানে যাওয়া বারণ। কিন্তু ঢল নামার সঙ্গে সঙ্গে সব একাকার হয়ে যায়। সকাল থেকে লুটে নামে শ্রমিকরা। কয়েকশ’ নৌকা দিয়ে তারা জিরো পয়েন্ট থেকে পাথর লুট শুরু করে। একে তো অবাধ লুটপাট, অন্যদিকে জিরো পয়েন্ট হওয়ায় শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। পাথর লুটের দৃশ্য সরাসরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করেন। নজর পড়ে কোম্পানীগঞ্জ প্রশাসনের। দ্রুতই ব্যবস্থা নেন কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও ও ওসি। যৌথ টাস্কফোর্সের অভিযানে নামেন তারা। গতকাল সকাল থেকে ফের শুরু হয় অভিযান। বেলা ৩টা পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচজনকে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, সাদাপাথরে যেতে হলে নৌকা লাগে। অতিরিক্ত ফোর্সও লাগে। আমরা যেতে যেতে পাথরখেকোরা তাদের অবৈধ কার্যক্রম শুরু করে। তবে, বসে নেই প্রশাসন। গতকালও সন্ধ্যা পর্যন্ত সাদাপাথরে অভিযান চলেছে। এদিকে, প্রথম দিনের অভিযানে আটক করা ১৪ জনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ৬০টি নৌকা ভেঙে পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে, অভিযানে সাদাপাথর বোঝাই গাড়ি পেলেও সেগুলো আটক কিংবা ধ্বংস করা হয়নি।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুন নাহার। উপজেলা প্রশাসন পুলিশ বিজিবি ও আরএনবি সদস্যদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযানে ১৪জন পাথর লুটপাটকারীকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- পীযূস কুমার দাস, রিপন মিয়া, মো. মুসা মিয়া, আরিফ মিয়া, মো. মোবারক হোসেন, হযরত আলী, মো. রাসেল মিয়া, মো. জসিম মিয়া, সামছুল হক, মো. শফিকুল ইসলাম, আলী হোসেন, রাজিব হোসেন, ফয়সল আহমদ ও দেলোয়ার হোসেন। তাদের প্রত্যেককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকালে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে ধলাই নদীর পানি বেড়ে যায়। নদীতে পানি বাড়ায় নৌকা দিয়ে সাদাপাথর লুটপাট শুরু হয়। এসব কাজের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে অভিযানে নামে টাস্কফোর্স। নৌকা ঘেঁষা সাদাপাথর বোঝাই গাড়ি থাকলেও সেগুলো আটক কিংবা ধ্বংস করেননি ইউএনও। অভিযানে অংশগ্রহণকারী একজন জানিয়েছেন, সামনে থাকা সাদাপাথর বোঝাই ট্রাক্টর ও স্তূপ করা পাথর জব্দ করার কথা বললেও ইউএনও আগ্রহ দেখাননি। শুধু নৌকায় অভিযান দিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। কিন্তু নদীর পাড় ঘেঁষা হাজার হাজার ঘনফুট পাথর স্তূপ করে রাখা থাকলেও সেগুলো জব্দ করা হয়নি। তাছাড়া অভিযানের সময় সাদাপাথর বোঝাই ট্রাক্টর গাড়ি থাকলেও সেগুলো আটক করা হয়নি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুন নাহার জানান, সাদাপাথর লুটপাটের বিরুদ্ধে অভিযানে আটককৃতদের জেল দেয়া হয়েছে। নৌকাতে অভিযান দেয়া হয়েছে। তবে, তীরে থাকা পাথরবোঝাই গাড়িগুলো ধরতে পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি। তারা পরবর্তী কার্যক্রম চালাবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৫ই আগস্টের পর সাদাপাথরে দফায় দফায় লুটের ঘটনা ঘটে। তখন প্রশাসন চাপের মুখে থাকায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। কোম্পানীগঞ্জের চিহ্নিত পাথরখেকোরা সাদাপাথর থেকে অর্ধশত কোটি টাকার পাথর লুট করে বিক্রি করে দেয়। তবে, লুট ঠেকাতে কিছুদিনের মধ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। ফলে আপাতত রক্ষা পেয়েছিল সাদাপাথর। প্রতি বছর ঢল নামলেই শ্রমিকরা সাদাপাথর লুটে নামে। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি।