শেষের পাতা
পুলিশের সঙ্গে বিতণ্ডা
রাতভর থানায় বৈষম্যবিরোধী ৩ নেতা, মুচলেকায় ছাড়া
স্টাফ রিপোর্টার
২১ মে ২০২৫, বুধবার
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে মধ্যরাতে হক্কানী পাবলিশার্সের মালিক গোলাম মোস্তফার বাসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ এলে তাদের সঙ্গে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে
মোস্তফাকে গ্রেপ্তারের জন্য চাপ দেয়া হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তিনজনকে নেয়া হয় পুলিশ হেফাজতে। পরে দীর্ঘ তেরো ঘণ্টা থানায় আটক থাকার পর মুচলেকা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
ছাড়া পাওয়া তিনজন হলেন- পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী (২৬), সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহান সরকার দীনা (২৬)। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়েন। আরেকজন মোহাম্মাদউল্লাহ জিসান (২৪)। তিনি মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষার্র্থী। জিসান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে সহায়ক হিসেবে কাজ করেন।
ধানমণ্ডি থানার ওসি ক্যশৈনু বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তারা ছাত্র আর এ ধরনের কোনো কাজ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের জিম্মায় আজ বিকালে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) উদ্দেশ্যে এক তরুণ বলেন, আপনি কেন এইখানে কথা বলতেছেন এইভাবে। আপনি ওসি, আপনি গ্রেপ্তার করলেন না কেন। আমি বলছি, আমি বলছি আপনি গ্রেপ্তার করেন। তখন ওসি বলেন, ওনার নামে মামলা নেই। তখন ওই তরুণ বলেন, মামলা আমি করবো, আপনি গ্রেপ্তার করেন। এ সময় ওসি বলেন, আমার সিনিয়র বলছে, মামলা না থাকলে গ্রেপ্তার করা যাবে না। ওসি তখন তরুণদের উদ্দেশ্যে সিনক্রিয়েট না করার অনুরোধ করেন। তারপরও ওই তরুণেরা গ্রেপ্তার করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তারা ওসিকে বারবার বলছিলেন, ওসি টাকা খেয়েছেন।
এদিকে এই তিন নেতাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা পরিচয়ে অনেকেই থানা-পুলিশকে আলটিমেটামও দিয়েছেন। অনেককেই থানায় এসে অবস্থান করেছেন দীর্ঘ সময়।
হক্কানী পাবলিশার্সের মালিক গোলাম মোস্তফা জানান, সোমবার রাতে কয়েকজন ছেলে তার বাসার সামনে হইচই করছিল। তারা জোর করে বাসায় ঢোকার চেষ্টাও করে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ আসে।
এদিকে জানা গেছে, ধানমণ্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ানো ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেসবুকে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে তাকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে একজন প্রকাশকের বাসায় কিছু লোক ঢোকার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়। পরে ওই ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে ওই প্রকাশককে গ্রেপ্তার করতে বলেন। কিন্তু ওই প্রকাশকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ কারণে তাকে গ্রেপ্তারে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতা পরিচয়ধারীরা অজ্ঞাতনামা হিসেবে প্রকাশককে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে চাপ দেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না জানালে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন।
পাঠকের মতামত
অনুরূপ অপকর্মের জন্য যেখানে কোন কোন রাজনৈতিক দল কারণ দর্শানো, সাময়িক/স্থায়ী বহিষ্কার করছে সেখান নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে এনে অপকর্মের স্বীকৃতি ও উৎসাহ দেয়া হয়েছে। জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। অপকর্ম ও অপকর্মের পৃষ্ঠপোষকরা নিপাত যাক।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল রাজনৈতিক দল-মত নির্বিশেষে সবাই। আর এখন দেশটা হয়েছে গেছে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাত্রনেতার। তাদের কথায় দেশ চলছে। এটা হতে পারে না। হতে দেওযা যায় না।
ছাত্রলীগের মত যারে তারে গ্রেফতার করাটা স্বৈরাচারী আমলের অনুরূপ মনে হয়,যা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্পিরিট বিরুদ্ধ।ছাত্র নেতা আব্দুল হান্নান সে নৈতিকতাবিরোধী কাজ করেছে বলে তার দল থেকে শোকজ করেছে। আশাকরি অনৈতিক কাজ থেকে সকলেই বিরত থাকবে।
ছাত্রলীগের মত যারে তারে গ্রেফতার করাটা স্বৈরাচারী আমলের অনুরূপ মনে হয়,যা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্পিরিট বিরুদ্ধ।ছাত্র নেতা আব্দুল হান্নান সে নৈতিকতাবিরোধী কাজ করেছে বলে তার দল থেকে শোকজ করেছে। আশাকরি অনৈতিক কাজ থেকে সকলেই বিরত থাকবে।
এরা চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিলো কিনা খতিয়ে দেখা দরকার।
ছাত্ররা রাজনীতির নামে কাউকে ব্যক্তগত আক্রমন করলে ফ্যাসিবাদের সাথে প্রার্থক্য রইলো কি?
এমন অরাজকতা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ।