শেষের পাতা
পররাষ্ট্র সচিব পদে পরিবর্তন
ওয়াশিংটন দূতকে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন? তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা। খোলাসা করে কিছুই বলছেন না সরকারের দায়িত্বশীলরা। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এটা স্বীকার করেছেন যে, সচিব জসীম উদ্দিন আর ওই পদে থাকছেন না। তার দায়িত্ব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে তিনি নিজে থেকে পররাষ্ট্র সচিবের পদ ছেড়ে দিবেন। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তিনি পদত্যাগ করবেন- সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বুধবারও কিছু বলেননি উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। রাতে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে এটা নিশ্চিত করেছে যে, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়ামকে অনতিবিলম্বে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খবর বেরিয়েছে আসাদ আলম সিয়ামকে পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে বিবেচনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি। তার ব্যাচের প্রথম রিয়াজ হামিদুল্লাহ দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন ৪৫ দিনের ছুটিতে যেতে পারেন- এমন আভাস দিয়ে একটি সূত্র বলছে, সেক্ষেত্রে নতুন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে কাউকে নিয়োগ প্রদান (আনুষ্ঠানিক ঘোষণা) এবং তার যোগদানের আগ পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলবে। পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব যদি আসাদ আলম সিয়ামের নিয়োগ চূড়ান্ত হয় তারপরও তাকে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত সচিব করা হবে। কারণ তিনি এখনো পূর্ণ সচিব হতে পারেননি। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদায় তিনি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতের দায়িত্ব পালন করছেন গত ৬ মাস ধরে। সূত্র মতে, অতিরিক্ত সচিব আসাদ আলম সিয়ামকে সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করার জন্য এসএসবিসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা আগে সম্পন্ন করতে হবে। এটি শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে। সূত্র বলছে, আজ বা কাল জসীম উদ্দিন বিদায় নিলে কাকে ভারপ্রাপ্ত সচিব করা হবে তা নিয়েও জটিলতা রয়েছে। কারণ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব (পূর্ব) যিনি ভার সামলাবেন বলে চিন্তা করা হয়েছিলো সেই নজরুল ইসলাম লম্বা ছুটির আবেদন করেছেন। সেটি মঞ্জুর হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর সচিব ১১ ব্যাচের কর্মকর্তা রুহুল আলম সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
স্মরণ করা যায়, আগামী ২০শে জুন মিস্টার সিদ্দিকী অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাবেন। সেক্ষেত্রে ১ মাসের কম সময় তিনি ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। সচিব পদে পরিবর্তনের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বুধবার এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন- পররাষ্ট্র সচিবকে অপসারণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন কারণে তিনি নিজে থেকেই এ দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চান। উনি আগামী দু’একদিনের মধ্যেই দায়িত্ব ছেড়ে দিবেন। মো. জসীম উদ্দিন চাকরিতে আছেন, দায়িত্ব পরিবর্তন হবে বলেও জানান উপদেষ্টা। পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব কে? এমন প্রশ্নে এক সময় পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করা তৌহিদ হোসেন বলেন, দু’একদিনের মধ্যে আপনারা সেটাও জানতে পারবেন। বাইরের চাপে পররাষ্ট্র সচিব বদল কিনা? এমন প্রশ্নে মিস্টার হোসেন বলেন, একটা বিষয় হলো কি, যেকোনো সিদ্ধান্তের পেছনে অনেকের স্বার্থ, তাদের বিভিন্ন মতামত, এগুলো থাকেই। এটা সরকারে, কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত একজনে নেয় না। এই রকম বিবেচনায় অনেক সময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হয়। দেখা যাক।
পুশব্যাক নয়, ভারতীয় নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হবে: এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পুশইন করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। তাদের পুশব্যাক করার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি-না, তা জানা নেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের। তবে তিনি বলেন, যারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে। বুধবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের নাগরিক বা রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হবে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আমার কাছে এখনো পর্যন্ত নেই। আমরা সাধারণত পুশব্যাক করি না। তবে বিষয়টি হলো, যারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে। পুশইন করার বিষয়ে দিল্লিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং এটি বন্ধে বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিল্লির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং আমরা চেষ্টা করছি নিয়মের বাইরে যেন কিছু না ঘটে।
ভারতের কাছ থেকে কী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, একদিনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে, এটি আমরা প্রত্যাশা করি না। তারা তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি- এভাবে দেয়াটা (ঠেলে পাঠানো) ঠিক না। আমরা বলছি যে, আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর আছে। সেই প্রসিডিওর অনুযায়ী আমরা যাবো। তারা তালিকা দিয়েছে। আমরা সেই তালিকাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করছি। ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ছোট ছোট বিভিন্ন চুক্তি বিভিন্ন সময়ে হয়েছে, সমঝোতা স্মারক হয়েছে এবং সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আপনাদের জানানো হয়েছে- গত অনেক বছরের মধ্যে। তার মধ্যে চুক্তিগুলো দু’পক্ষের সম্মতিতে বাতিল করতে হবে, অথবা প্রভিশন থাকে যে যেকোনো একপক্ষ যদি আপত্তি করে, তবে বাতিল করা যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা বাতিল কোনোটিই করিনি। আমরা আসলে চাই যে নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু এগিয়ে যাক।
ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এবং আমাদের কোথায় সমস্যা আছে, সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং সময়মতো সেগুলো ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান। ভারত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়মকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এখন ইতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, নেতিবাচকভাবেও ব্যাখ্যা করা যায় কখনো কখনো। সব মিলিয়ে আমাদের সেভাবেই এগোতে হচ্ছে। কেউ তো স্বীকার করে না যে, সে নিয়মের বাইরে যাচ্ছে। ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এটি বাণিজ্য উপদেষ্টা দেখছেন।