ভারত
৭৫ বছরে পাঁচটি সিদ্ধান্ত যা ভারতকে স্বনির্ভর করে তুলেছে
বিশেষ সংবাদদাতা, কলকাতা
(৯ মাস আগে) ১৪ আগস্ট ২০২২, রবিবার, ১২:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
বৃটিশদের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ৭৫ বছর আগে। ১৪ই আগস্ট মধ্যরাতে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় Tryst with destiny’র বাণী। আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালনে দেশজুড়ে হচ্ছে আজদি কা অমৃত মহোৎসব। কমিউনিস্টদের মতো ইয়ে আজদি ঝুটা হ্যায় না বলে বরং বলি প্রচুর স্বাধীনতা সংগ্রামীর ঘামে-রক্তে এই আজদি পরম এক প্রাপ্তি। স্বাধীনতার পর কংগ্রেস একচ্ছত্রভাবে দেশ শাসন করেছে। এই ৭৫ বছরে বিজেপির শাসন মাত্র ১৪ বছর। বিগত ৭৫ বছরে পাঁচটি সিদ্ধান্ত ভারতকে আজ স্বনির্ভরতার পথে দাঁড় করিয়েছে। এই পাঁচটির মধ্যে চারটিই কংগ্রেস সরকারের নেয়া। দুর্ভাগ্য, ভারতকে স্বনির্ভর করার কারিগর দলটিই আজ যেন ডোডো পাখির মতো বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অথচ পাঁচটির মধ্যে চারটি সিদ্ধান্তই কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রীদের নেয়া। প্রথম যে সিদ্ধান্তটি সেই ১৯৬৯ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক ভূমিকা। ভারত এই যুদ্ধে মুক্তিকামী পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করে, গঠিত হয় বাংলাদেশ। ভারত সারা বিশ্বের সমীহ আদায় করে নেয় এই যুদ্ধর মধ্যে দিয়ে। সামরিক শক্তি হিসেবেও ভারত স্বীকৃতি পায় এর দ্বারা। এই সিদ্ধান্তটি ভারতকে অন্য প্রতিবেশীদের থেকে শতক যোজন এগিয়ে দেয়।
এরপর আসে ১৯৮৭ সাল। ভারতীয় ইতালিয়ান শাম পিত্রদাকে নিয়ে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী নয়া টেলিকম নীতি প্রবর্তন করেন। এর ফলেই দূর নিকট বন্ধু হয়। ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়।
এরপর আসে ১৯৯১ সালের আর্থিক সংস্কার। প্রধানমন্ত্রী তখন কংগ্রেসের নরসিমা রাও। অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং। সেই তিন দশক আগে নেয়া আর্থিক সংস্কারই এই দুর্দম করোনাকালে তবু ভারতীয় অর্থনীতির কাঠামোটি কিছুটা অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছে। বিজেপি সরকারের আমলে অটল বিহারী বাজপেয়ী সড়ক উন্নয়নে নির্মাণ করেন গোল্ডেন কোয়াড্রাঙগুলার যা ভারতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে। এর সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হতে পারে ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭৩ সালে নেয়া কয়লাখনি বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত।
নরেন্দ্র মোদির নোটবন্দি বা জিএসটি লাগু এই কাজগুলির মতো বড় কাজ হলেও তা কিন্তু ভারতীয় জনগণের অনুমোদন বা আশীর্বাদ পায়নি।
এই ৭৫ বছরে ভারত দফায় দফায় প্রায় ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। সব থেকে বেশি দেশ শাসন করেছেন জওহরলাল নেহেরু। ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ থেকে ২৭শে মে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ ১৬ বছর ২৮৬ দিন। সব থেকে কম দিন ক্ষমতায় ছিলেন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দ। স্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে প্রথম দফায় অটল বিহারী বাজপেয়ী। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়। এই ৭৫ বছরে অনেক ওঠাপড়া দেখেছে ভারতীয় রাজনীতি।
হিন্দু মহাসভা ভেঙে ভারতীয় জনসংঘ। সেখান থেকে ১৯৮০ সালে পথ চলা শুরু ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরি অবস্থা জারি যেমন কুশাসনের একটি অধ্যায়, তেমনই অপারেশন ব্লু স্টার জীবনাবসান ঘটায় এক যুগন্ধর নারীর, ইন্দিরা গান্ধীর। এই ৭৫ বছরের ইতিহাস কখনও গরিমার আলোয় সমৃদ্ধ, কখনও আবার মসিবর্ণ। জীবন যেমন সতত সুখের হয় না, ইতিহাসও বোধহয় হয় না। তাই এই ৭৫ বছরে কখনও আলোর ঝলক, কখনও অমাবস্যার অন্ধকার। এটাই বোধহয় জীবনের নিয়ম।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা -
