অনলাইন
লন্ডনে মানবজমিনকে ইলিয়াস কাঞ্চন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার যৌক্তিকতা নেই
আরিফ মাহফুজ , লন্ডন থেকে
(৫ ঘন্টা আগে) ৪ মে ২০২৫, রবিবার, ৫:৩৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:৪০ অপরাহ্ন

চিকিৎসার জন্য লন্ডনে এসেছেন অভিনেতা ও জনতা পার্টি বাংলাদেশ- এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। রাজনীতিতে এসে নতুন দল গঠন করেছেন। দল গঠনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে প্রথম দেশের বাইরে এসেছেন তিনি। লন্ডনে মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন হঠাৎ রাজনৈতিক দল গঠন ও নিজে রাজনীতিতে কেন আসলেন এসব বিষয়ে।
জনপ্রিয় নায়ক থেকে সামাজিক আন্দোলনকারী, এরপর আসলেন রাজনীতিতে তাও নতুন দল গঠন করে। হঠাৎ করে কেন রাজনীতিতে আসা ?
এ প্রশ্নে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম। ১৯৭৪ সালে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেই। কারণ আমার যে চিন্তা-চেতনা ছিল সেই চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন বঙ্গবন্ধুর কাছে ও আওয়ামী লীগের কাছে ছিল না। যার কারণে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেই। বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন দেশের শিল্প-কারখানা জাতীয়করণ করা হবে কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসে যে কাজটি করলেন সেটি দেখে আমি নিজেকে মানাতে পারলাম না। একদিন আমরা একটি অফিসে বসে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু খবর দিলেন যাওয়ার জন্য, সেখানে একটি সভা ছিল। আমাদের একজন প্রতিনিধি গেলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ও সভায় যোগ দিতে। সভা শেষে তিনি ফিরে আসলেন। দেখলাম খুব আনন্দিত , জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে ? তারপর তিনি বললেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন শত্রুর সম্পত্তি যে দখল করেছে সেই ভোগ করবে অর্থাৎ তারা আন্ডারেই থাকবে। সেখানে কথা ছিল এই সম্পদগুলোকে দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা দেবেন কিন্তু এর বদলে তিনি বলে দিলেন যে দখল করেছে তার অধীনেই থাকবে। আর তারা ছিল সবাই আওয়ামী লীগ। তখন বঙ্গবন্ধুর সেই সিদ্ধান্তকে আমি মানতে পারি নাই। সেই থেকেই আমি রাজনীতি ছেড়ে দেই। বঙ্গবন্ধুর কথা ও কাজের ঠিক ছিল না। সেই সিদ্ধান্ত একজন ব্যক্তির ছিল (শেখ মুজিব) কিন্তু রাজনীতি ও দল আওয়ামী লীগ ছাড়লেন কেন জিজ্ঞেস করা হলে কাঞ্চন বলেন, তখনিই রাজনীতিকে আমার কাছে কুলষিত মনে হয়েছে। কারণ যে নেতাকে আমি সবচেয়ে বিশ্বাস করতাম যার আদর্শকে আমি ধারণ করতাম, তার মধ্যে যে পরিবর্তন আমি দেখলাম তখন আমার কাছে মনে হয়নি যে রাজনীতি ভালো জিনিস।

যেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে রাজনীতি ত্যাগ করলেন বহু বছর পর কেন আবার রাজনীতিতে এসে দল গঠন করলেন? তাহলে কী এখন রাজনীতি সঠিক জায়গায় আছে? এমনটি জানতে চাইলে জনতা পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমি গত ৩২ বছর যে আন্দোলন করেছি সে আন্দোলনটি আমি পূর্ণ করতে পারিনি। গত ৩২ বছরে আমি যাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখেছি তারা কেউ আমাকে সাহায্য করেনি। তারা যদি সাহায্য করতো হয়তোবা আমার দেশের এত মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যেত না । গত বত্রিশ বছরে যত মানুষ মারা গেছে এর দায় রাজনীতিবিদদের নিতে হবে। কারণ আমি ২০১০ সাল থেকে জাতিসংঘের মাধ্যমে তাদের অনেক সভা-সেমিনারে উপস্থিত হয়েছি। সেখানে একটি কথা বলা হয়েছে যে, সরকারের স্বদিচ্ছা ছাড়া, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ছাড়া কখনোই নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। এই কথাগুলো আমি সবসময় বুঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কখনো তারা (রাজনীতিবিদরা ) বুঝেনি। তাই আমরা শেষ স্বপ্নকে পূরণ করতে রাজনীতির মাধ্যমেই করতে চাই।
নতুন করে দল গঠন ও রাজনীতিতে আসা নিজের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে হ্রাস কিংবা বৃদ্ধি কোনটি করবে? জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি গত ৩২ বছর দেশের মানুষকে দেখাতে পেরেছি যে, নিঃস্বার্থভাবে ‘নিরাপদ সড়ক চাই' আন্দোলন করেছি। তাই দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে যে, রাজনীতিতে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই আমি দেশের মানুষকে কিছু দিতে চাই।
নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে এমন প্রশ্নে ইলিয়াস বলেন, দেশে সংস্কার তো কিছু দরকার। নির্বাচন করে কোনো লাভ হবে না। নির্বাচন অতীতে বহু দেখেছি তাতে কী হয়েছে? দেশে এখন সংস্কারটাই আগে দরকার। সংস্কর ছাড়া নির্বাচন দিয়ে কী হবে ? বর্তমান সরকার নিয়ে আমার মূল্যায়নে বলতে চাই, সরকারের কেউ যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারছেন না। এতো বড় দায়িত্বশীলরা দেখে দেখে শিখে শিখে কাজ করবে এমনটি হয় না। কিছু উপদেষ্টা ছাড়া বাকীদের মেনে নিতে পারছি না । তবে প্রধান উপদেষ্টার যথেষ্ট আন্তরিকতা আছে। দেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা আছে । তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার দরকার নেই, ৫ বছর কেন থাকবেন ? ১-২ বছর থাকতে পারে, সংস্কারের জন্যতো ৫ বছর সময়ের প্রয়োজন নেই।
নির্বাচন যখনই হোক তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চান তিনি। এর পেছনে যুক্তি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে অনেকগুলো যুক্তি আছে যেমন স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে দলীয় প্রভাবের বিষয়টি কম থাকবে। এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেকগুলো ভালো মানুষ উঠে আসবে।
কেমন বাংলদেশ দেখতে চান এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার স্বপ্নে বাংলাদেশ আমি দেখতে চাই, আমার স্বপ্ন পূরণ হোক। নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে স্বাগত জানাই, তবে তারা রাজনীতিতে এসে যা করছে, যেভাবে বিতর্কিত হচ্ছে যেটি আমি কামনা করি না । কোনো ভাবেই এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।