বাংলারজমিন
এসডিএস’র ৮০০ শতাংশ জমি জাল দলিলে দখল নেয়ার অভিযোগ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবারটাঙ্গাইল সদর উপজেলার চারাবাড়ী এলাকার আলোচিত সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদের (এসডিএস) জমিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাজনা নেয়ার নির্দেশনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। অভিযোগ রয়েছে, জমির মালিকানা দাবি করা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অতি গোপনে খাজনা নেয়ার আদেশ জারি করেন। এছাড়াও মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক জাল দলিলের মাধ্যমে ৮০০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই জমির দলিল বাতিলসহ আদালতে দু’টি মামলা চলমান রয়েছে। এ দিকে ওই জমিতে খাজনা না নেয়ার জন্য গত ২৩শে এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে এসডিএস গ্রুপের ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রোপ্রাইটর মো. ইসমাইল হোসেন সিরাজী। লিখিত আবেদন ও স্থানীয়রা জানান, ২০১৫ সালে ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. নুরুল ইসলামের নাম ও পদ ব্যবহার করে মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের ১৯শে জুলাই লিখিত আবেদনের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অবগত করেন, তার নাম, পদবি ও সিল জাল করে একটি প্রভাবশালী মহল এসডিএস’র জমিটি বিক্রি করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন এসডিএস’র গঠনতন্ত্রের বিধান মোতাবেক তার পক্ষে কোনো প্রকার সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর, স্থানান্তর, চুক্তিপত্রাদি সম্পাদন করা তার পক্ষে সম্ভব না। এসডিএস’র ডেইরি ফার্মের বহিষ্কৃত সাবেক ম্যানেজার মো. মজিবর রহমান সম্পূর্ণ অবৈধ ও বৈআইনিভাবে জমি বিক্রি করেছেন। জমি বিক্রির বিষয়ে তিনি অবগত না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ দিকে ২০২৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় আইন-৩ এর সহকারী সচিব শাহানা আক্তার ওই জমির খাজনা নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান করেন।
এ দিকে গত ২৩শে এপ্রিল এসডিএস গ্রুপের ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রোপ্রাইটর মো. ইসমাইল হোসেন সিরাজী লিখিত আবেদনে জেলা প্রশাসককে অবগত করেন তার মালিকানাধীন কোম্পানির জমি জাল জালিয়াতি করে জনৈক ভূমিদস্যু শহরের দিঘুলিয়া এলাকার মৃত শামছুল হকের ছেলে মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক জাল দলিল করে ভূমি আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছে। তিনি বিষয়টি অবগত হয়ে টাঙ্গাইল জেলা জজ আদালতে দু’টি দলিল বাতিলের মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলা দু’টি শুনানির অপেক্ষায় আছে। বিষয়টি স্থানীয় ভূমি অফিস ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ সকল কর্মকর্তা ও অফিস অবগত। তাই ভূমি অফিস মোজাম্মেল হকের খাজনা গ্রহণে অস্বীকার করেছে। মোজাম্মেল হক গত ১৭ই ডিসেম্বর তথ্য গোপন করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে মিথ্যা এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা-৩ হতে স্মারক নং ৩১.০০.০০০০.০৪৪.৩৯.০০১.২৪.৭৮ খাজনা নেয়ার চিঠি বের করে। ওই জমির মালিকানা যাচাই এর মামলা দুইটি নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চিঠির আদেশ বাস্তবায়ন না করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান সুমন বলেন, যে সময় এসডিএস’র জমিটি রেজিস্ট্র্রি করেছে ওই সময় ইসমাইল হোসেন সিরাজী কারাগারে ছিলেন। জমির মালিক যদি কারাগারে থাকেন, তাহলে জমি রেজিস্ট্র্রি হয় কীভাবে? এ জমি রেজিস্ট্রি নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এছাড়াও কিছুদিন আগে মোজাম্মেল হক যে প্রভাব খাটিয়ে মাটি বিক্রি করছে, সেটা নিয়েও এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে এই জমি মটর্গেজ দিয়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে লোন নেয়া আছে। সেই লোন পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তো জমি বিক্রির প্রশ্নই আসে না। মোজাম্মেল হক বলেন, ক্রয়কৃত ৮০০ শতাংশ জমি আমার দখলে রয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাজনা নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও আজও পর্যন্ত আমি খাজনা দিতে পারিনি। প্রসঙ্গত, মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক ২০২৪ এর প্রহসনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। মোজাম্মেল হক বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।