বাংলারজমিন
বিনা অপরাধে জেল খাটছেন দিনমজুর সুরমান
এক মামলায় জামিন পেলেও অন্য মামলায় কারাগারে
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
৩ মে ২০২৫, শনিবার
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বিনা অপরাধে রাজনৈতিক মামলায় সুরমান আলী নামে এক দিনমজুর পাঁচ মাস ধরে জেল খাটছেন বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। পরিবারের দাবি, সুরমান রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। কিন্তু বিনা দোষে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক মামলায় জেলে রয়েছেন। এমনকি মামলা দুটির বাদীরাও বলছেন, তারা যে ঘটনায় মামলা করেছেন, সেই ঘটনার সঙ্গে সুরমান জড়িত নন। বরং তারাও এখন সুরমানের মুক্তি চান। সুরমানকে আসামি করায় স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতারাও রীতিমতো বিব্রত। তারাও তার মুক্তি চেয়েছেন।
সুরমান বড়লেখা সদর ইউপি’র মুছেলগুল গ্রামের আমান উদ্দিনের ছেলে। তার স্বজনদের অভিযোগ, বিগত ইউপি নির্বাচনে পক্ষে কাজ না করায় স্থানীয় এক ব্যক্তি হয়রানির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে একটি রাজনৈতিক মামলায় তার নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এই মামলায় জামিন পেলেও অন্য একটি মামলায় তিনি এখন জেলে রয়েছেন। এদিকে সুরমান দীর্ঘদিন ধরে জেলে থাকায় অনাহারে দিন কাটছে স্ত্রী-সন্তানদের।
সুরমানের বাবা আমান উদ্দিন ও মা আনোয়ারা বেগম বলেন, তাদের ছেলে দিনমজুরি করে সংসার চালান। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সে কাউকে কোনোদিন হয়রানি করেনি। তারা বলেন, ইউপি নির্বাচনে পক্ষে কাজ না করায় স্থানীয় এক ব্যক্তি হয়রানি করার জন্য সুরমানের নাম মামলায় ঢুকিয়েছে।
তার ভাই আবুল হোসেন বলেন, যে মামলায় তার ভাইকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে সেই মামলার বাদী তাকে চেনেন না। তারা লিখিতভাবে বলেছেন যে, তাদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি জড়িত নন। তারাও এখন আমার ভাইয়ের মুক্তির জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার, স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারি বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি গণহত্যা দিবস ও কালো পতাকা মিছিল চলাকালে বড়লেখা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। ওই সময় যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম তাফাদারকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এ ঘটনার প্রায় ৯ বছর পর ২০২৪ সালের ২৩ আগস্ট বড়লেখা পৌর যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম তাফাদার বাদী হয়ে স্থানীয় এমপি ও সাবেক পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনসহ বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৩৮ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় সুরমানকে ২৫ নম্বর আসামি করা হয়। এই মামলায় গত বছরের ২১শে নভেম্বর সুরমান আলীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। প্রায় আড়াই মাস জেল খাটার পর গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি সুরমান হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। কিন্তু যেদিন সুরমান জামিন পান; ওইদিনই ফের জেলগেট থেকে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে বড়লেখা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে পুলিশ তাকে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন যুবকল্যাণ পরিষদের সদস্য অহিদ আহমদের করা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।
মামলার বাদী যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম তাফাদার বলেন, ২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারি বিএনপি’র দলীয় কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর চালায়। এ সময় তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এতদিন তিনি এই ঘটনার ন্যায়বিচার পাননি। তবে আওয়ামী লীগের পতনের পর তার ওপর হামলাকারীদের নামে তিনি থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলার এক আসামির বাবার নাম জানতে গিয়ে ফয়েজ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির দেয়া তথ্যে সুরমানের নাম ঢোকানো হয়েছে। পরে তিনি জানতে পেরেছেন, ইউপি নির্বাচনে ফয়েজের সঙ্গে বিরোধের জেরে তিনি সুরমানের নাম দিয়েছেন।
অপর মামলার বাদী অহিদ আহমদ বলেন, তিনি অতীতে অনেক জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। একারণে কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে যে ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করেছেন; সেই ঘটনার সঙ্গে দিনমজুর সুরমান জড়িত নন। মামলার এজাহারেও তার নাম নেই।
বড়লেখা সদর ইউপি’র ৬নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, সুরমানকে কোনোদিন রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে দেখিনি। সে দিনমজুরি করে পরিবার চালায়। মামলার বাদী নুরুল তাকে জানিয়েছেন, স্থানীয় এক ব্যক্তির দেয়া ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সুরমানকে মামলায় ঢোকানো হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করায় দলের অনেকেও ক্ষুব্ধ।
সাবেক উপজেলা ছাত্রদলের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুরমান তার প্রতিবেশী। কোনোদিন কারও ক্ষতি করেননি। তিনি শুনেছেন হয়রানির উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক মামলায় তার নাম ঢুকিয়েছেন। যা দুঃখজনক। এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে বড়লেখা থানার ওসি আবুল কাশেম সরকারের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।