বাংলারজমিন
প্রভাবশালীদের কব্জায় সরকারি বিল
উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
৩ মে ২০২৫, শনিবার
বগুড়ার শেরপুরে গোয়ালজানী ও সাতাড়া গ্রাম দু’টির মধ্যদিয়ে বহমান রামাইডাঙ্গা বিল। শতবিঘা আয়তনের সরকারি জলাশয় এটি। একসময় এই বিল থেকে পানি সেচ দিয়ে অন্তত দেড় হাজার বিঘা জমি চাষাবাদ করতেন কৃষক। পাশাপাশি বাঙালি নদী থেকে আসা নানা প্রজাতির মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু জনস্বার্থে ব্যবহার্য ওই বিলটি চলে গেছে প্রভাবশালীদের কব্জায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, রেকর্ড জালিয়াতির মাধ্যমে বিলটির সিংহভাগ জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়েছেন তারা। সেইসঙ্গে বিলের মধ্যে একাধিক বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন চক্রটি। ফলে বিলের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি বিলের জমিতে মাটি ভরাট করে বসতবাড়ি বানানোর প্রতিযোগিতা চলছে। অথচ সরকারি সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্তারা নাকে তেল মাখিয়ে ঘুমাচ্ছেন। ফলে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকালে গোয়ালজানি ঈদগাঁও মাঠে স্থানীয় এলাকাবাসীর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে নানা শ্রেণি-পেশার সহস্রাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তৃতায় উপজেলার সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল্লাহ আল মামুন জিহাদ বলেন, গোয়ালজানি মৌজায় ৩১ দশমিক ৮০ একর আয়তনের একটি বিল রয়েছে। যার নাম রামাইডাঙ্গা বিল। বৃটিশ আমলে এটি প্রসন্ন নাথ চক্রবর্তী ও হেমচন্দ্র স্যানাল দিং পত্তনী নিয়ে ভোগদখল করতেন। তারা অজ্ঞাতবাস হলে বিলটি এমআরআর (এসএ) খতিয়ানে সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ান হিসেবে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে বিলটি জনস্বার্থে ব্যবহার্য হিসেবে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রেকর্ড জালিয়াতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল হোসেন, রজব আলী সরকার, আছাব আলী সরকার, আলী আজগর, আব্দুল খালেক, সিরাজউদৌল্লা, আব্দুর রশিদ আকন্দ ও সৌরভ আলী বিলের জমি দখলে নিতে জালিয়াতির মাধ্যমে রামাইডাঙ্গা বিল কাগজে-কলমে হাওয়া করে দেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজেদের নামে বিলের ২৪ দশমিক ৬৬ একর জমি আরএস খতিয়ান প্রস্তুত করে নেন। তাই সরকারি এই বিলটি জনসাধারণের অনুকূলে ব্যবহার্য হিসাবে এক নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্তকরণসহ স্থায়ীভাবে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানান তিনি। আব্দুল্লাহ আল মামুন জিহাদ অভিযোগ করে বলেন, সরকারি বিলের জমি অবৈধভাবে দখল ও নিজেদের নামে রেকর্ড প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এরপরও প্রভাবশালী ওই চক্রটি বসে নেই। সরকারি ওইসব কর্মকর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিলের জমি দখলের মহোৎসব চালাচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাদের সহযোগিতা দিচ্ছেন। সরজমিন গেলে সত্যতাও পাওয়া যায়। দেখা যায়, বিলের জমি নিজেদের মালিকানা দাবি করছেন ওইসব প্রভাবশালীরা। তাই সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করছেন তারা। বিলের জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে মাটি ভরাট করে বসতবাড়ি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রভাবশালী চক্রের সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দলটির স্থানীয় নেতাদের প্রভাবে বিগত ১৫ বছর রামাইডাঙ্গা বিলটি নিজেদের দখলে রাখেন ওইসব প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আর এখন উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতা আবু সাঈদ, হুমায়ুন কবির বিপ্লব, মানিক মিয়া ও ইউনুসের সঙ্গে মিলেমিশে সরকারি ওই বিলটি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তবে বক্তব্য জানতে চাইলে সুঘাট ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি হুমায়ুন কবির বিপ্লব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিলের জমি দখল ও মাছ চাষের সঙ্গে তিনিসহ দলের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নেই বলে দাবি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারি খাল-বিল ও নদী দখলের কোনো সুযোগ নেই।
তাই বিল দখলের বিষয়টি জানার পর দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিলের সরকারি খাস জমি উদ্ধারে অচিরেই অভিযান চালানো হবে বলে দাবি করেন তিনি।