বাংলারজমিন
জাকারিয়াকে ‘ডেভিল’ বললো সিলেট বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবারসিলেটে গ্রেপ্তারের পর জামিনে মুক্তি পাওয়া পরিবহন শ্রমিক নেতা জাকারিয়াকে ‘ডেভিল’ বললো সিলেট বিএনপি। জামিন পাওয়ায় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন ক্ষোভও। গত দু’দিন ধরে সিলেটে আলোচনায় জেলা পরিবহন সেক্টরের কুতুব ও অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ। নানা বিতর্কিত ঘটনায় অতীতে হয়েছেন আলোচিত। গ্রেপ্তার ও জামিনের ঘটনায় এখন নতুন করে তিনি আলোচনায় এসেছেন। এই ঘটনায় বিব্রত পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারাও। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন- জাকারিয়া আওয়ামী ঘরানার পরিবহন শ্রমিক নেতা। তিনি নগর শ্রমিকলীগের যগ্ম সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য লড়াই করেছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানার মামলায় সোমবার রাতে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পরপরই নগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে উপস্থিত ছিলেন- পরিবহন শ্রমিক নেতা ও জেলা শ্রমিকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আকবর রাজন। বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জাকারিয়ার মুক্তি দাবি করা হয়। এদিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ পরদিন সকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নগরের কোর্ট পয়েন্টের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলার আসামি দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন- আদালত শুনানি শেষে জাকারিয়ার জামিন দেন। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জানিয়েছেন- সকালে জাকারিয়াকে আদালতে তোলার আগে হাজার খানেক পরিবহন শ্রমিক নেতা আদালত প্রাঙ্গণে এসে হাজির হন। এতে করে আদালত এলাকার পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। এ নিয়ে আদালত এলাকার শৃঙ্খলা নিয়ে পুলিশ উদ্বিগ্ন ছিল। এ সময় আইনজীবীরাও পুলিশের সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন- জামিনের পর গলায় মালা পরিয়ে জাকারিয়াকে নিয়ে নগরে আনন্দ মিছিল করেছেন তারা। জাকারিয়া আহমদ হাজতখানা থেকে বের হলে শ্রমিকরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে এই আনন্দ মিছিল বের করেন। এর আগে আদালত প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. দিলু মিয়ার সভাপতিত্বে ও শ্রমিক নেতা আলী আকবর রাজনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক ও সিলেট বিভাগের সভাপতি হাজী মঈনুল ইসলাম। গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামীপন্থি শ্রমিক নেতার মুক্তি নিয়ে বিএনপি’র অভ্যন্তরে তোলপাড় শুরু হয়। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও সমালোচনা করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন অনেকেই। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হয় শ্রমিক দল নেতা আলী আকবর রাজনের ভূমিকাও। তুমুল সমালোচনার মুখে গতকাল দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন- ‘যারা কষ্ট পেয়েছেন আমি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।’ এদিকে গ্রেপ্তার পরিবহন শ্রমিক নেতা জাকারিয়াকে ‘ডেভিল’- আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সিলেট বিএনপি’র নেতারা। গতকাল জেলা বিএনপি’র সহ-দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম প্রেরিত বিবৃতিতে মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাকারিয়া আহমদ গ্রেপ্তার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে একই দিনে পাঁচটি মামলায় জামিন লাভ জনিত বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ জানান- ‘এই সেই ‘আওয়ামী ডেভিল’ জাকারিয়া আহমদ যিনি অতীতে বিরোধী দল কোনো সমাবেশ আহ্বান করলেই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন। আবার হরতাল-অবরোধে জোরপূর্বক যানবাহন চালু রাখতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মালিক-শ্রমিকদের বাধ্য করেছেন। আজ সেই ব্যক্তি অভাবনীয় দ্রুততায় সঙ্গে এতগুলো মামলায় জামিন পাওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। একই ধরনের মামলায় আপাত দৃষ্টিতে ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন আচরণ আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে না মর্মে আশঙ্কা বিরাজমান।’
বিবৃতিতে জেলা ও মহানগর বিএনপি মনে করেন- ‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনামলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মনগড়া মামলাগুলোতে জামিন নিতে মাসের পর মাস লড়তে হয়েছে; এমনকি উচ্চ আদালত থেকেও বারবার জামিন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অথচ আওয়ামীপন্থি ব্যক্তি মাত্র কয়েক ঘণ্টায় জামিন লাভ করায় বিচারিক স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’ এছাড়া একজন ডেভিল-খ্যাত আওয়ামী নেতার গ্রেপ্তারে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট পালিত হওয়াও প্রমাণ করে, অবৈধ সিন্ডিকেট এখনো কীভাবে প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় সক্রিয় রয়েছে। জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ এইসব অনিয়ম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একদিন বিস্ফোরিত হবেই। তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি অনিবার্য। এ অবস্থায় সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী এবং সিলেট মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদি ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী যৌথভাবে অনতিবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তারা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশাসনিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান তারা।’ এদিকে বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা উল্লেখ করেন- ‘জাকারিয়ার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ২৪শে জুলাই বিএনপি’র গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হামলা চালানোর ঘটনায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত বিস্ফোরক আইনের ছয়টি মামলায় নাম উল্লেখ করে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়।