বাংলারজমিন
কুষ্টিয়ায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দুদকে মামলা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
২২ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবারকুষ্টিয়ার এক দম্পতির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স বদলি বাণিজ্যে ৭ কোটি টাকার অধিক ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। নার্সদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা গ্রহণ করতেন জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। ৫ ব্যাংকের ১৪টি হিসাবের মাধ্যমে এই টাকা গ্রহণ করা হতো। এর পরই নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের এক বা একাধিক কর্মকর্তার সহায়তায় জামাল উদ্দিন নার্সদের পছন্দের কর্মস্থলে বদলি করতেন। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ওই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে জামাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী শাকিরন নেছার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয় কমিশন। বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছে দুদক। এ মামলায় দ্রুত চার্জশিট প্রদান করা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। জামাল উদ্দিন জেলার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের দুধকুমড়া গ্রামের শাজাহান আলীর ছেলে। সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর একটি হেলথ ফুড প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় প্রতিনিধির চাকরি করতেন জামাল। যাতায়াত ছিল নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে। সেই সুযোগে সেখানকার কর্মচারীদের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্যতা। তখন থেকেই শুরু করেন দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স বদলি। এই সুযোগে নার্সদের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে হাতিয়ে নেন ৭ কোটি ২৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩০শে জুন দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযোগটির অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানকে। তিনি অনুসন্ধান প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় মামলার সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৮ই জানুয়ারি দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তিনি ৫ মাস ধরে জেলে ছিলেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জামাল উদ্দিনের ব্যাংক হিসাবে মোট ৭ কোটি ২৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা জমা হয়। এর মধ্যে ৬ কোটি ৯২ লাখ ২২ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। হিসাবগুলোয় জামাল উদ্দিনের বেতন বা ব্যবসায়ের কোনো আয় জমা হয়নি। ২০২১-২০২২ আয়কর বর্ষে তিনি স্টক ব্যবসা করে ১২ লাখ টাকা আয় এবং পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয় করেছেন।
আয়কর নথি অনুযায়ী, তার তিন কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। ২০২১-২২ আয়কর বর্ষে তার স্ত্রী শাকিরন নেছা স্টক ব্যবসা করে ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা আয় এবং এক লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। আয়কর নথিতে তার ৫৬ লাখ ৮৫ হাজার ৩০৫ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। কিন্তু অনুসন্ধানকালে তাদের নামে স্টক ব্যবসার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ২০২২ সালের ৯ই জুন মেসার্স নিউ জামাল এন্টারপ্রাইজ (মালিক শাকিরন নেছা) নামে রড ও সিমেন্টের ব্যবসার জন্য লাইসেন্স নেয়া হয়। প্রতিবেদনে নার্স বদলি করে ঘুষ নেয়ার টাকা দিয়ে রড ও সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করার কথা বলা হয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক মানুষ জানান, জামাল লাহিনী বটতলা এলাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে নিজের পরিচয় দিতেন ফজলে নুর তপসের পিএস। তৎকালীন এক পুলিশ কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি থাকাকালীন সময়ে তার সহযোগিতায় জামালের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দুদকের মামলায় জামিন নেয়ার সময় কুমারখালী উপজেলা বিএনপি’র এক নেতার যোগসাজশে ভুয়া প্রত্যয়নপত্রে নিজেকে বিএনপি নেতা দেখানোরও অভিযোগ উঠেছে। তার আইনজীবী এডভোকেট আমিরুল ইসলাম বলেন, জামাল আমার কাজিন। উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে আছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রমাণ মেলায় দুদক মামলা করেছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। চার্জশিট এখনো দেয়া হয়নি।