বাংলারজমিন
সদরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সদানন্দ পালের বিরুদ্ধে অনিয়ম, হয়রানি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে মঞ্জুরিকৃত সিøপ প্রাক-প্রাথমিক, বই পরিবহনে অনিয়ম এবং বিদ্যালয় মেরামতের জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলনে ওই কর্মকর্তার ঘুষ দাবির বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জানা যায়, সদানন্দ পাল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সদরপুর উপজেলার ১৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাপ্ত সিøøপ বাজেটের অর্থ থেকে অডিটের কথা বলে ৭শ’ টাকা করে তুলে নিয়েছেন। মূলত সিøপের কাজের জন্য অডিট অফিসে কোনো টাকা দিতে হয় না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক প্রধান শিক্ষক উক্ত ৭শ’ টাকা দিতে আপত্তি করলে সদানন্দ পাল প্রভাব খাটিয়ে প্রত্যেককে টাকা দিতে বাধ্য করেন। বিষয়টি সকলে অবগত থাকলেও উক্ত শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাননি। এই শিক্ষা অফিসার সপ্তাহে তিনদিন অফিস করেন। এই ব্যাপারে তাকে কেউ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি বিদ্যালয় ডিজিটে ছিলাম। পরে অফিসে বসে ভিজিট ফরম ফিলআপ করেন।
জানা যায়, তিনি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার থাকাকালীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে অনেক বিতর্কিত কাজ করে লাঞ্ছিতও হয়েছেন। পরে এখান থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। সেই অতীতের সূত্র ধরে উপজেলা শিক্ষা অফিসার হওয়ার পর তদবির করে আগের কর্মস্থলে পোস্টিং নেন। চলতি দায়িত্ব থেকে ফুল প্লেস ইউইও হওয়ার পর তার আগের শত্রুতা উদ্ধার করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। কোনো সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পান না। এখনো আওয়ামী লীগ দোসররা তাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনব্যাপী ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দিখান ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজম খানের অবসরজনিত বিদায় অনুষ্ঠান-আলোচনা সভা এবং ভূরি ভোজের মহোৎসব। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সদানন্দ পাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেনÑ সহকারী শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদ খান, রিপা ঘোষ, ঝিল্লুর রহমান। স্কুল চলাকালীন সময়ে এই ধরনের বিদায় অনুষ্ঠান ও ভূরি ভোজের অনুষ্ঠান করা যায় কি নাÑ এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে ফোনে হুমকি দিয়ে বলেন, আপনারা যা পারেন তাই লিখেন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। এ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, তিনি শিক্ষকদের বদলি, বিদ্যালয়ের রুটিন মেইনটেইনেন্স, ওয়াশ ব্লক, প্লেয়িং এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাত থেকে শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যাপক ঘুষবাণিজ্য করে থাকেন। বদলি, পদায়ন ও তদন্তের নামে নানা কায়দায় শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন। বিভিন্ন সরকারি দিবসের বরাদ্দকৃত টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করেন না। এমনকি শিক্ষকদের ভ্রমণ বিল, বিনোদন ভাতা থেকেও টাকা কর্তন করে রাখা হয়েছে। সদানন্দ পাল এর রয়েছে কয়েকজন বিশ্বস্ত প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার। তারা মূলত বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে এসব ঘুষ বাণিজ্যের টাকা তুলে থাকেন আর এর মূল নেতৃত্ব দেন সদানন্দ পাল। আমরা প্রাথমিক শিক্ষকেরা এ দেশে খুব নিরীহ। বিভিন্নভাবে আমাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে আমাদের থেকে ঘুষ নিতেন এই শিক্ষা অফিসার। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের বদলি করার হুমকি দিতেন। কথায় কথায় বলতেন আমি আওয়ামী লীগের লোক। আমার দল এখন ক্ষমতায়। আমি যা বলবো তাই হবে। এ ব্যাপারে আরও জানা যায়, চরাঞ্চলের ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫টিরও বেশি বিদ্যালয় রয়েছে। সেই সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসে ২-১দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে সারা মাসের হাজিরা তুলে মাসিক রিটার্ন জমা দেন। আবার কোনো কোনো বিদ্যালয় চলে আন্ডার মেট্রিক প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে। বিনিময়ে সদানন্দ পাল ওই সকল শিক্ষকের কাছ থেকে তাদের বেতনের এক-তৃতীয়াংশ উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও ফরিদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক চরাঞ্চলের বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন ও এই সকল অভিযোগের সত্যতা পান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এই সদানন্দের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। বর্তমানে চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদ খান। তিনি মাসে একবারও কোনো বিদ্যালয় পরিদর্শনে না গিয়ে অফিসে বসে মোবাইলে শিক্ষকদের খোঁজখবর নেন। এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলার প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকরা দাবি জানিয়েছেন যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সদানন্দ পালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।