ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

আওয়ামী লীগ নেতার ট্রেডমার্ক প্রতারণায় দিশাহারা হাজারী গুড়ের কারিগররা

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার
mzamin

মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য হাজারী গুড়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে এই গুড়ের সুনাম। হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা শিকদারপাড়া (গাছিপাড়া) এলাকায় উৎপত্তি হওয়া এই গুড়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেই সুনাম আর চাহিদাকে পুঁজি করে পাঁচ বছর ধরে ট্রেডমার্ক প্রতারণার মাধ্যমে গাছিদের একপ্রকার জিম্মি করে রেখেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম হাজারী শামীম। আইনি কোনো অধিকার না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গাছিদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তিনি। ট্রেডমার্ক নম্বর ২২৮৮৪৮ ব্যবহার করে তিনি তৈরি করেন গুড় তৈরির প্যাকেট। এ কারণে তার অনুমতি ছাড়া এই গুড় তৈরি ও বিক্রি করা যাবে না বলে সবাইকে জানান তিনি। তার প্যাকেটের বাইরের গুড় ভেজাল ও ভুয়া বলেও প্রচার করেন। ট্রেডমার্ক প্রতারণার মাধ্যমে কোনো চালান ছাড়াই প্যাকেট ও গুড় বিক্রির মাধ্যমে তিনি প্রতি বছর প্রায় ১০-১২ লাখ টাকা আয় করছেন।

স্থানীয়রা জানান, হাজারী পরিবারের কেউ দীর্ঘদিন ধরে গুড় তৈরি করেন না। তাদের বাড়িতে যারা সেই সময় রাখাল (শ্রমিক) থাকতেন তারাসহ বিভিন্ন গাছিরা উৎপাদকের কাছ থেকে গুড় তৈরির প্রক্রিয়া শেখেন। অনেকে আবার হাজারী পরিবার থেকে সিলমোহর নিয়েও গুড় বিক্রি করতেন। তবে, এ নিয়ে হাজারী পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা বা আলাদা কোনো টাকা কেউ দাবি করতেন না। কিন্তু শামীম হাজারী ট্রেডমার্কের ভয় দেখিয়ে ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সব গাছিকে তার অধীনে করে নেন। বর্তমানে তার অধীনে রয়েছে প্রায় ৩০ জন গাছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গাছি বলেন, ট্রেডমার্কের কথা বলে শামীম হাজারী তার বাইরে গুড় তৈরি ও বিক্রিতে বাধা দেন। বাগে আনতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গাছিদের হুমকি-ধমকি ও প্রশাসনের ভয়ও দেখিয়েছেন। এখন প্রত্যেক গাছিকে তাদের উৎপাদিত ৪ ভাগের ৩ ভাগ গুড় শামীম হাজারী ও তাদের ভাইদেরকে দিতে হয়। বাকি এক ভাগ বাইরে বিক্রি করতেও তাকে অনুরোধ করতে হয় গাছিদের। তিনি গাছিদের প্রতিকেজি ১২০০ টাকা করে দেন। কিছু বেশি টাকা চাইলে গাছিদের তিনি গুড় তৈরি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন। গাছিদের কষ্টের ফল ভোগ করতে পারেন না গাছিরা।
গাছি ও গুড় ব্যবসায়ীরা জানান, এক কেজি গুড়ে চারটি পাটালি হয়। প্রতিটি পাটালির জন্য দেয়া হয় একটি করে প্যাকেট। এ ছাড়া এক থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত গুড়ের জন্য রয়েছে আলাদা প্যাকেট। প্রতি কেজি গুড় কিনতে ক্রেতাদের কমপক্ষে ১০০-১২০ টাকা প্যাকেটের পেছনেই খরচ হয়। মৌসুমে প্রতিদিন ৭০-৮০ কেজি গুড় বিক্রি হয়। বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-২২০০ টাকা কেজি। পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ‘হাজারী প্রোডাক্টস’ নামে ট্রেডমার্কের ৩০ নম্বর শ্রেণিতে নিবন্ধনের আবেদন করেন হাজারী প্রোডাক্টসের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম হাজারী শামীম। ৩০ নম্বর শ্রেণিতে গুড় অন্তর্ভুক্ত। অন্য আরেকটি আবেদনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় ২০২১ সালের ৩১শে অক্টোবর তাকে বক্তব্য ও তথ্যপ্রমাণ দাখিলের জন্য নোটিশ দেয়া হয়। তথ্যপ্রমাণ দাখিল না করায় তার আবেদন বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে তিনি আবেদনটি পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছেন।

এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম হাজারী (শামীম) বলেন, আমার আবেদন বাতিল করা হয়েছে জানার পরে পরবর্তীতে আমি আপিল করেছি। অধিদপ্তর থেকে আমাকে এই নম্বর প্যাকেটে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। তবে পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ট্রেডমার্ক) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ট্রেডমার্কের আবেদন বাতিলের প্রেক্ষিতে তিনি পুনর্বিবেচনা আবেদন করেছেন। অনিবন্ধিত ট্রেডমার্ককে তিনি নিবন্ধিত হিসেবে প্রচার করছেন। সেটি ঠিক করছেন না। আমাদের সাজা দেয়া বা মোবাইল কোর্ট করার এখতিয়ার নেই। কেউ যদি উনার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কোর্টে মামলা করে এবং তিনি যদি কোর্টে তার নিবন্ধনের বিষয়টি প্রমাণ করতে না পারেন সেক্ষেত্রে কোর্ট তাকে সাজা দেবে। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত

আম্মিলীগ মানেই দূর্নীতগ্রস্থ ........ একটি দেশে নীতি ও নৈতিকতার কী নিদারুণ স্খলন ঘটিয়েছে তারা........

জনতার আদালত
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৭:৪৫ পূর্বাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

দেনমোহর কমাতে অভিনব কৌশল/ তালাকের পর আবার বিয়ে, কিছুই জানে না গৃহবধূ

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status