বাংলারজমিন
মানিকগঞ্জ বিএনপি’র কাণ্ডারি রিতা
রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার
মানিকগঞ্জে বিএনপি’র রাজনীতিতে এক অনন্য নাম আফরোজা খান রিতা। প্রায় দুই যুগের রাজনৈতিক জীবনে চরম ক্রান্তিকালের মধ্যেও সাহসিকতার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শক্ত হাতে। ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে দল-মত নির্বিশেষে জেলার প্রতিটি মানুষের কাছে তিনি বেশ পরিচিত। সাবেক মন্ত্রী মরহুম হারুণার রশিদ খান মুন্নুর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বিএনপি’র রাজনীতিতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে টানা ১৬ বছর সারা দেশে বিএনপি কঠিন সময় পার করলেও রিতা মানিকগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও সু-সংগঠিত রেখেছেন সর্বক্ষণ। আন্দোলন সংগ্রামে কখনোই পেছনে তাকাননি। দলের হাজারো নেতাকর্মী হামলা-মামলার শিকার হলেও তাদের দেখভালের প্রায় সবটুকু দায়িত্বই পালন করেছেন। এমনকি জেল-জুলুম ও নির্যাতনে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের পরিবারগুলোর খোঁজখবর রেখেছেন সর্বদাই। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দলের দুঃসময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত প্রত্যেকটি কর্মসূচি আফরোজা খান রিতার নেতৃত্বে মানিকগঞ্জে পালিত হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা সাহসের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথ সরগরম রেখেছিলেন। পাশাপাশি তার নেতৃত্বে ঢাকায় দলের বড় বড় প্রত্যেকটি সভা- সমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মী মানিকগঞ্জ থেকে যোগ দিয়েছে। একজন মেধাবী ও ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে জেলা বিএনপি’র সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দলসহ অঙ্গসংগঠনের সাংগঠনিক ভিত মজবুত রেখেছেন তিনি। সর্বশেষ শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলনে মানিকগঞ্জ থেকে রিতার নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল বিএনপি। ছাত্র-জনতার চলমান আন্দোলনের শেষ দুই দিন ৪ ও ৫ই আগস্ট মানিকগঞ্জে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীর হামলায় দু’জন নিহতসহ আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক। সে সময় আফরোজা খান রিতার নিজস্ব হাসপাতাল মুন্নু মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ২ শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তিনি। শিবালয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত যুবক রফিকুল ইসলামের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে নগদ ১ লাখ টাকা দেয়ার পাশাপাশি রফিকের ১৬ মাসের শিশু সন্তানের লেখাপড়াসহ আনুষঙ্গিক সারা জীবনের দায়িত্ব নিয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুতর আহত অনেকের এখনো চিকিৎসার পুরো খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
জেলা বিএনপি’র সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র টানা দু’বারের সফল সভাপতি রিতার রাজনৈতিক হাতেখড়ি হচ্ছেন তার বাবা সাবেক মন্ত্রী মরহুম হারুণার রশিদ খান মুন্নু। তার বাবাও ছিলেন মানিকগঞ্জের বিএনপি’র রাজনীতিতে একজন প্রাণপুরুষ। জনপ্রিয়তা ও ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে হারুণার রশিদ খান মুন্নুর জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক। টানা চারবার বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০০১ সালে মানিকগঞ্জ-২ আসনে বাবার নির্বাচন পরিচালনার পুরো দায়িত্বে ছিলেন রিতা। ২০০১ সালে বাবার নির্বাচন পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালন করার মধ্যদিয়েই তিনি রাজনীতিতে সরাসরি পা রাখেন। পিতার সঙ্গে দলের প্রত্যেকটা কর্মসূচিতে নিজেকে ফুটিয়ে তোলেন। তাকে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় নিতে হয়নি। ওই সময় উদীয়মান রাজনীতি হিসেবে জেলা জুড়ে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর থেকে বিএনপি’র রাজনীতিতে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে মানিকগঞ্জ জেলায় বিএনপিতে নতুন নেতৃত্ব আসে আফরোজা খান রিতাকে জেলা বিএনপি’র সভাপতি করার মধ্যদিয়ে। এরপর ২০১৮ সালে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এর মাঝে ২০১৭ সালের পহেলা আগস্ট জেলা বিএনপি’র বর্ষীয়মান আরেক নেতা সাবেক মন্ত্রী হারুণার রশিদ খান মুন্নু মারা যান।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সারা দেশের মতো মানিকগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর শুরু হয় একের পর এক গায়েবি মামলা আর গ্রেপ্তারের মহোৎসব। বেশির ভাগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। তারপরও রিতার নেতৃত্বে আন্দোলন থেমে থাকেনি। বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খান রিতা মানবজমিনকে বলেন, আমরা এখন নতুন বাংলাদেশে নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। বর্তমানে আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা। আমি বিশ্বাস করি সবাই মিলে যদি ৩১ দফা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ সুন্দর একটি বাংলাদেশ পাবে। আমি আমার মানিকগঞ্জের ১৮ লাখ জনগণের ঘরে ঘরে তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা পৌঁছে দেবো ইনশাআল্লাহ।
পাঠকের মতামত
She is a power house in Manikganj. I want her to be successful.
সুযোগ্য বাবার সুযোগ্য সন্তান ওনার সাফল্য কামনা করি