ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারmzamin

আওয়ামী লীগের আমলে বছরে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ব্যাংক খাত থেকে যে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার কথা বলেছেন, বাস্তবে তার পরিমাণ আরও বেশি। রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীরা ব্যাংক খাত ও বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। গতকাল দুপুরে ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উপায়’ বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েস্ট সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামান চৌধুরী। 

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থপাচারে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। দেশের ব্যাংক খাতকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দেয়া হয়েছে, তার পেছনে মূল দায়ী হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ও ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ঋণখেলাপির সংস্কৃতি যারা চালু করেছেন, সেই প্রভাবশালীরাই পাঁচতারকা হোটেলে বসে ব্যাংক খাতের নীতি পলিসি তৈরি করতো। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব পলিসি শুধু ঘোষণা করতো।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচার করেছে। এই ক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ী- এদের ত্রিমুখী সহযোগিতা মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। সব প্রতিষ্ঠানেই ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি, তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন এজেন্সিকে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব জায়গায় যে পরিবর্তন আসবে তা যেন টেকসই হয়, এতে আমরা আশাবাদী।

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে ২০০৭ সালে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তার মাধ্যমে ২০১৩ সালে ৯৩০ কোটি ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল। যদিও তা অনেক কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, ওইসব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশগুলোর সহযোগিতার মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থপাচার বন্ধে যে দেশ থেকে পাচার হয় ও যে দেশে পাচার হয়- উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ থাকতে হবে। অর্থ ফেরতে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞদের সিন্ডিকেট আছে। এ কারণে আমরা একজন সাবেক মন্ত্রীর কয়েকটি দেশে কয়েকশ’ অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে জানতে পারছি। তবে এমন পাচারকারী আরও অনেকেই আছেন। 

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার। আগামী দুই বছরের মধ্যে যদি একটা পয়সাও ফেরত আসে তাহলে সেটাও বড় অর্জন হবে। তিনি আরও বলেন, অর্থপাচার রোধে রাষ্ট্রকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। 

প্রফেসর আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্থ স্থানান্তর ও অর্থপাচার- উভয় পদ্ধতিতেই দেশ থেকে অর্থ সরানো হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়। অনুমান করা হয়, এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে আইএমএফ’র ঋণ দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা ছিল না, ঋণ দিলে সে অর্থ জনগণের কাজে আসবে না- এসব জানা সত্ত্বেও আইএমএফ সরকারকে কেন ঋণ দিয়েছিল? এসব ঋণের টাকা শুধু অপব্যবহারই হয়নি, তা দিয়ে সরকার গুলি কিনেছে, বারুদ কিনেছে ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করেছে। গত সরকারের সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে যত ঋণ নেয়া ও ব্যয় করা হয়েছে, সবক্ষেত্রে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন তদন্ত করার দাবি জানাই। 

আনিসুজ্জামান বলেন, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া এবং আর্থিক অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করায় এখন গুরুত্ব দিতে হবে। এসব উদ্যোগ নিলে পাচার হওয়া টাকার পুরোটা না হলেও কিছু অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এতে ভবিষ্যতে পাচার করার বেলায় সবাই সাবধান হয়ে যাবেন।
গ্রিনওয়াচ ঢাকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর জসিম উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ নাঈম চৌধুরী, ইআরএফ’র সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান রাজু প্রমুখ।
 

পাঠকের মতামত

ha ha ha ha

Md. Imtiaz Kamal
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৪:২৯ অপরাহ্ন

ড. ইফতেখারুজজাযামান যে ভয়াবহ অর্থ পাচারের হিসাব দিয়েছেন তা ভাবলেও বিশ্বাস করা কষ্টদায়ক। বৎসরে ১৫ বিলিয়ন ডলার মানে বিগত ১৬ বছরে হাসিনা সরকার ২৪০ বিলিয়ন ডলার পাচার করে পালাইছে । এর মানে হলো আমরা শুধু ইদানিং কালের ইসলামি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক , অগরোনী ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক এস আলম , সালমান রহমান ও অন্যান্য ব্যাকতিদের দ্বারা লুটের অনেক আগেই লুট শুরু হোয়েছিল যা আমরা জানতে পারি নাই। ২৪০ বিলিয়ম লুটের পূর্ণ তদন্ত করে তা কিভাবে ফেরত আনা যায় তার একটা প্রতিবেদন জাতির কাছে প্রকাশ করার জোর দাবী জানাই । আমি মনে করি ২৪০ বি ডলারের পাচারের সঠিক তথ্য ভারত সরকারেকে দিতে হবে যেহেতু পালিয়ে যাওয়া হাসিনা রেহানা ভারতে পালিয়ে আছে ওদের উপর ভারত যেন চাপ সৃষ্টি করে টাকা ফেরতের ব্যাবস্থা নেয়। একই সাথে Singapore , Uk, USA , EU ও Canada সরকারের সাহায্য নিয়ে জয় সহ অন্যান্য মন্ত্রী ও আমলারা যত টাকা বিদেশে পাচার করেছে তা ফিরিয়ে আনা নিষচয়তা করা । ধন্যবাদ ড. ইফতেকারুজজামানকে তার এই রিপোর্ট জন সমমুখে আনার জন্য ।

Muzaffar
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১:৫৪ অপরাহ্ন

দয়া করে evidence সহ সরকার কে দেন যেহেতু সরকার ফিরিয়ে আনার জন্য সবরকম চেষ্টা মনেহয় করছে ।

Mirza
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status