ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

রাখাইন রাজ্যের দখল নিতে লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা, শরণার্থীদের জীবন ঝুঁকিতে

মানবজমিন ডিজিটাল
১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

মিয়ানমার জুড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো গত ১৮ মাসে যেভাবে অগ্রসর হয়েছে, তাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটির রাখাইন রাজ্যের অনেক ভূমিই সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।  রাখাইন রাজ্যটি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিম উপকূল বরাবর অবস্থিত। ৪৫,০০০ সদস্যের শক্তিশালী 
আরাকান সেনাবাহিনী (এএ) উত্তর রাখাইনের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ দখল করেছে।  পুরো রাজ্যটি দখলের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।  যদিও জান্তা প্রতিক্রিয়ায় অধিকৃত শহরগুলোতে পাল্টা  বিমান হামলা চালিয়েছে এবং এএ-এর বিরুদ্ধে তার সাবেক শত্রুকে একত্রিত করার চেষ্টা করছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)-এর একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর থেকে রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো  প্রায়শই জান্তা সেনা বা মিত্র মিলিশিয়াদের সঙ্গে এএ-এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মিয়ানমারে মুসলিম প্রধান জাতিগত গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।  ২০১৬ সালে সামরিক বাহিনী তাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়, যাকে গণহত্যা অভিযান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয় এবং অবশিষ্ট জনসংখ্যার বেশির ভাগই প্রতিবেশী বাংলাদেশে চলে যায়।  তখন থেকেই তারা সেখানে বিস্তৃত এবং ক্রমবর্ধমানভাবে  বিশৃঙ্খল শরণার্থী শিবিরে বসবাস করে আসছে। বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন এবং প্রতিরোধ বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিয়ানমারের সমান্তরাল জাতীয় ঐক্য সরকার- রোহিঙ্গাদের প্রতি পূর্ববর্তী প্রশাসনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতের ফেডারেল গণতন্ত্রে তাদের অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। আরাকান সেনাবাহিনী, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন জাতিগত গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা এবং অঞ্চল থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। মেলবোর্নে অবস্থিত মিয়ানমার ও বাংলাদেশের আইসিজির সিনিয়র কনসালট্যান্ট থমাস কিন বলেন, “গত ছয় মাস ধরে, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো  দক্ষিণ বাংলাদেশের শিবিরগুলোতে তাদের যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছে এবং শরণার্থীদের যুদ্ধে নিয়োগ বাড়িয়েছে। তাদের বলেছে যে, আরাকান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করলে তবেই তারা দেশে ফিরতে পারবে। এই ধরনের বিদ্রোহ সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, তবে সীমান্তের উভয় পাশেই এটি ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে এবং বাংলাদেশে থাকা দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।” এর মূলে রয়েছে একটি ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী-আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (অজঝঅ)। ২০১৬ সালে মিয়ানমারের সামরিক পোস্টে এই ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীর আক্রমণকে পরবর্তী গণহত্যার ন্যায্যতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তখন থেকেই নির্বাসনে থেকে  ব্যাপকভাবে সক্রিয় আরসা, কক্সবাজারে প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত একটি বিস্তৃত শিবির নিজেদের প্রভাব খাটাতে শুরু করেছে, যেখানে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করে। বছরের পর বছর ধরে, আরসা ক্যাম্পগুলো  নিয়ন্ত্রণে নেয়ার  জন্য বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই করেছে এবং তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো বেসামরিক নেতাদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এএ এবং এআরএসএ উভয়ের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। অতীতে, উভয় দলই বহুজাতিক রাখাইনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে  বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার দেশের বৈদেশিক সাহায্য ব্যয়ের বেশির ভাগ অংশ কমানোর জেরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কারণ তার আগে থেকেই  আন্তর্জাতিক তহবিল  পর্যাপ্ত ছিল না। সাহায্যকারী  গোষ্ঠীগুলোর  একাধিক প্রতিবেদন অনুসারে, কক্সবাজারে ক্রমবর্ধমান হতাশার কারণে আরসা’র মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোতে  নিয়োগ সহজ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় গণমাধ্যম এবং এআরএসএ প্রতিনিধিদের অনলাইন বিবৃতি অনুসারে, গত বছর থেকে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধিতা সত্ত্বেও, এআরএসএ বাহিনী একাধিক অভিযানে জান্তার সঙ্গে এএ-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আইসিজি রিপোর্টে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে,  রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ, সেইসঙ্গে  সরকার-নিয়ন্ত্রিত মিলিশিয়াদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি সামপ্রদায়িক সম্পর্কের উপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানিমূলক বক্তব্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ২০১৬-২০১৮ সালের ক্র্যাকডাউনের সময়কার  পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয়। সেই সময়ে  ফেসবুক এবং অন্যান্য প্ল্যাটফরমে গণহত্যা সংক্রান্ত উস্কানিমূলক বার্তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। আইসিজি’র মতে, গত এক বছরে সংঘাতের ফলে প্রায় ২০০,০০০ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছে। প্রায় ৪০০,০০০ এখনো এএ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বাস করে, এবং এই গোষ্ঠীটি এই অঞ্চলে প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠেছে। তাই  যেকোনো আলোচনার ক্ষেত্রে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে, যা বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই চায়। যদিও জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো  মিয়ানমারের পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল বলে সতর্ক করে দিয়েছে। থমাস কিন মনে করেন যে,  রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতি ঝোঁক কমাতে, আরএকে বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গা উভয়ের কাছেই প্রমাণ করতে হবে যে, তারা সকল সমপ্রদায়ের স্বার্থে রাখাইন রাজ্য পরিচালনা করতে চায়। আইসিজি রিপোর্টে  সতর্ক করা হয়েছে যে,  রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং আরাকান সেনাবাহিনীর মধ্যে আরও সংঘাত রোহিঙ্গা জনগণ, বাংলাদেশ বা আরাকান সেনাবাহিনী কারোর জন্য মঙ্গলজনক হবে না। আরাকান আর্মির সামরিক শক্তির কারণে, রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাবার  সশস্ত্র সংগ্রাম সফল হবে না। এর  পরিণতিও ভয়াবহ  হতে পারে।  কারণ এখন আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের অবস্থানকারী বেশির ভাগ এলাকা এবং শরণার্থীরা যে সমস্ত এলাকায় ফিরে যাবে সেসবই  নিয়ন্ত্রণ করে।

সূত্র: দা গ্লোব অ্যান্ড মেইল

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status